৫ই মে আমাকে বদলে দিয়েছে ,আমি প্রশ্ন করতে শিখেছি।

৫ই মে ২০১৩ আমি বাংলাদেশের তথাকথিত স্যেকুলারপন্থী ছিলাম। আমিও বিশ্বাস করতাম ৫ই মে হয়তো দুয়েকজন মারা গেছে বেশী নয়। আমি তখনো এই স্যেকুলার বিশ্বাসের ভিত্তিকে প্রশ্ন করতাম না। আমি চারপাশের স্যেকুলারপন্থীদের আত্মতৃপ্তি দেখতাম, যাক বাংলাদেশ রক্ষা পেয়েছে।

প্রথম খটকা লাগলো যে এটা কোন অর্থে স্যেকুলারদের বিজয়? এটা তো রাষ্ট্রশক্তির বিজয়, এমন তো নয় স্যেকুলারেরা রাস্তায় নেমে লড়াই করেছে ৫ ই মে। তাহলে স্যেকুলারেরা রাষ্ট্র শক্তির এই শক্তি প্রয়োগকেই নিজের শক্তি প্রয়োগ ভাবছে? সর্বনাশ।

এর পরে আমার হাতে আসলো শাহরিয়ার কবির সদস্য সচিব হিসেবে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসে গণ তদন্ত কমিশনের দুই খণ্ডের রিপোর্ট। অন্য সদস্যরা কে কে ছিলেন জানেন? অধ্যাপক অজয় রায়, মুনতাসির মামুন, শ্যামলি নাসরিন চৌধুরী, আবুল বারাকাত, তুরিন আফরোজ প্রমুখ। গণতদন্ত কমিশনের নাম এবং সদস্যদের নাম শুনেই বুঝতে পারছেন এরা কেউ হেফাজতের প্রতি সহমর্মি নন।

তারা ৫-৬ মের নিহতের নাম ঠিকানা সহ তালিকাও দেন। উনারা জানান ৫ ই মে ঢাকায় ২৪ জন, ৬ই মে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৯ জন, ৬ই মে হাটহাজারিতে ৫ জন ও কুমিল্লায় ১ জন। এই নিয়ে ৩৯ জন। এছাড়া পুলিশ ও বিজিবি ৬ জন। সব মিলিয়ে ৪৫ জন নিহত হয়। সবাই বুঝতে পারছেন এই তালিকা সরকার বিরোধীরা তৈরি করেনি।

এই তালিকা ধরে বিচার করলেও সেই দুদিন দেশে বিপুল প্রাণহানি হয়েছে। এবং বাংলাদেশের স্যেকুলারপন্থিরা এই প্রানহানিকে প্রথমে অস্বীকার করেরছে তারপরে প্রয়োজনীয় মনে করেছে। এবং যেই এই প্রানহানির বিরুদ্ধে বলতে গেছে তার উপরেই ঝাপিয়ে পড়েছে।

আমি বুঝতে শুরু করলাম এদের কাছে মানুষের মুল্য নাই; এদের কাছে মানুষের জীবনের চাইতে তাদের স্যেকুলার আদর্শ বড়।

আমি আবিস্কার করতে শুরু করলাম মাদ্রাসা নিয়ে যা যা প্রচার চালায় স্যেকুলারেরা সব মিথ, সত্য নাই একটুকুও। বুঝতে পারলাম মাদ্রাসার ছাত্ররা মুলত দেশের হত দরিদ্র পরিবারের সন্তান এবং মুলত মেহনতি মানুষের সন্তান। আমি আবিস্কার করলাম এই মাদ্রাসা বিদ্বেষ আসলে শ্রেণী ঘৃণা। শহুরে শোষক উৎপাদন বিমুখ মধ্যবিত্তের মেহনতি মানুষের সন্তানদের বিরুদ্ধে শ্রেণী ঘৃণা।

৫ই মে আসলে এই মধ্যবিত্ত ভয় পেয়েছিল, ঠিক এভাবেই তো ভয় পাওয়ার কথা যদি শোষক বুঝতে পারে এই কৃষক আর গারমেন্টস কন্যার ছেলেরা যদি একদিন নিজেদের শোষিত বলে চিনে ফেলে!!!! আর এভাবেই নিজের হিস্যা দাবী করে?

৫ই মে তে তো তারাই এসেছিল অন্য পোষাকে যাদের বিপ্লবের ডাক দিয়ে একদিন শহরকে ঘিরে ফেলার কথা।

৫ই মে আমাকে বদলে দিয়েছে। আমি প্রশ্ন করতে শিখেছি। আমি বুঝতে পারছি স্যেকুলার থেকে মানুষ হয়ে ওঠার একটা দুরূহ পথে আমার যাত্রা শুরু হয়েছে। আর প্রতিদিন লড়াই করতে হচ্ছে তাদের সঙ্গেই যাদের আমি প্রগতিশীল ভেবে মস্ত ভুল করেছিলাম।

Share

3 thoughts on “৫ই মে আমাকে বদলে দিয়েছে ,আমি প্রশ্ন করতে শিখেছি।

  1. “প্রতিদিন লড়াই করতে হচ্ছে তাদের সঙ্গেই যাদের আমি প্রগতিশীল ভেবে মস্ত ভুল করেছিলাম” – এই কথাটা শুনার পর আরেকটা কথা শুনার জন্য মন আনচান করছে। যে কথা শুনার পর আমার বিশেষ ১০টা প্রশ্নের উত্তর আপনার কাছ থেকে জানবো।

Leave a Reply to ওমর ফারুক Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Feeling social? comment with facebook here!

Subscribe to
Newsletter