মুক্তিযুদ্ধে আলেম সমাজের ভূমিকা

৪০৮ জন বিশিষ্ট নাগরিকের বিবৃতি দেখলাম। সেখানে তাঁরা যা বলেছেন তার সারমর্ম হচ্ছে, “জামাত, হেফাজত আলাদা নাম হলেও এদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অভিন্ন। এরা সব সময় সকল ন্যায় সঙ্গত আন্দোলনের বিরোধিতা করেছে এবং এরাই মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে ১৯৭১ এ। আল্লামা শফীর শিষ্যরা পাকিস্তানি ভাবাদর্শে গড়ে উঠেছে।”

আমি এই ৪০৮ জনের রাজনীতির জ্ঞান এবং ইতিহাসবোধ দেখে মুগ্ধ।

১৯৭১ এ ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল ছিল তিনটি, জামায়তে ইসলামী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এবং নেজামে ইসলাম পার্টি। এর মধ্যে জামায়তে ইসলামী এবং নেজামে ইসলামী সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে, নেজামে ইসলামী দলটি সাংগঠনিক ভাবে দুর্বল ছিল এবং মাঠে ময়দানে অতো সক্রিয় ছিলনা। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ছিল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে।

এর বাইরে বাংলাদেশের আলেম সমাজের বেশীরভাগই ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। অনেকে ছিলেন রনাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা, খেতাবও পেয়েছেন অনেকে। সেই সময়ের সর্বজনগ্রাহ্য বরেণ্য ইসলামী নেতা হাফেজ্জি হুজুর, মুক্তিযুদ্ধকে জালেমের বিরুদ্ধে মজলুমের যুদ্ধ বলে ফতোয়া দিয়ে মাদ্রাসার ছাত্রদের মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। দেশের বড় বড় মাদ্রাসা গুলো বন্ধ করে ছাত্রদের মুক্তিযুদ্ধে যেতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন সংশ্লিষ্ট মাদ্রাসার মুহাদ্দিসেরা। এই সময় আপনাদের পুর্বসুরীরা পাকিস্তান সরকারের বেতন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ সকল বিশ্ববিদ্যালয় খোলা রেখেছিলেন। আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগেনা যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গনহত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনীর তাণ্ডব শুরু হয়েছিল আর আমাদের প্রতিরোধ শুরু হয়েছিল, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকেরা চাকরি করে কীভাবে?

বাংলাদেশে এই মাদ্রাসাগুলোই বৃটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র লড়াইয়ের উত্তরাধিকার বহন করছে। যখন আপনাদের পুর্বপুরুষেরা ব্রিটিশদের গোলামিতে ব্যস্ত ছিলেন। এরাই হাজী শরিয়তউল্লাহ, তিতুমিরের উত্তরাধিকার। যারা জান বাজি রাইখ্যা মুজলুমের পক্ষে লড়াই কইর‍্যা গেছে।

মুক্তিযুদ্ধে আলেম সমাজের সংশ্লিষ্টতার কারণেই পাকিস্তানি প্রচার যে এই মুক্তিযুদ্ধ ইসলামের বিরুদ্ধে সেটা হালে পানি পায়নি।

আর “পাকিস্তানি ভাবাদর্শ” টা কী আসলে? পাকিস্তান হাসিলের লড়াই তো বঙ্গবন্ধুও করেছিলেন, বিবৃতিদাতা সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীও করেছিলেন। পাকিস্তান হাসিলের লড়াই যে কারনে হয়েছিল সেই আকাংখা বাস্তবায়িত হয়নি জন্যই তো স্বাধীন বাংলাদেশের লড়াই করতে হয়েছে।

আপনাদের কাছে “পাকিস্তানি ভাবাদর্শ” আসলে “ইসলাম”। আপনারা চান ইসলামের নাম নিশানা যেন বাংলাদেশে না থাকে। এইটা বলতে পারেন না তাই ঘুরায়ে বলেন পাকিস্তানি ভাবাদর্শ। জামাতের দায় আপনি সবার উপরে দেন কেন? জামাত আর হেফাজত এক? এই রাজনৈতিক পর্যালোচনার হিম্মত হয়না আপনাদের তো রাজনীতি নিয়ে কথা কইতে আসেন কেন? রাজনীতি, ইতিহাস সমাজ এইগুলার তো ছাতা কিছুই বুঝেন না।

আপনারা না নিজেকে মার্ক্সবাদী বলে দাবী করেন। মার্ক্স বাবাজি তো বলেছেন, “ধর্ম হচ্ছে নির্যাতিত জীবনের দীর্ঘশ্বাস, হৃদয়হীন জগতের হৃদয়, আত্মাহীন অবস্থার আত্মা।”

বাংলাদেশে যতদিন জুলুম থাকবে, নিপীড়িত মানুষ তার আচরিত ধর্ম ইসলামের ঝাণ্ডা তুলে প্রতিরোধ জারি রাখবে। এইটাই মার্ক্সের শিক্ষা। আপনারা এখন বাসায় গিয়া ঘুমান। বয়স হইছে। ম্যালা সার্ভিস দিছেন এইবার ভাগেন।

Share

One thought on “মুক্তিযুদ্ধে আলেম সমাজের ভূমিকা

  1. স্যার আমি আপনার লেখার একজন ভক্ত। আপনার নতুন লেখাগুলো পাচ্ছিনা। স্যার দয়া করে আপনি যদি নতুন কিছু লিখেন ভালো হতো।❤️❤️❤️🌹🌹

Leave a Reply to MD kanan Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Feeling social? comment with facebook here!

Subscribe to
Newsletter