পপুলার ফার্মা, মিল্টেফসিন কেলেংকারী এবং আমি

আপনারা নিশ্চয়ই মাঝে মাঝে দেখে থাকেন আমাকে নিয়ে কোথাও কোথাও লেখালেখি যে আমি পপুলার ফার্মার মিল্টেফসিন কেলেংকারীর জন্য দায়ী। কেউ বলে আমি কালাজ্বরের ওষুধে ভেজাল মিশিয়ে বেচেছি। আবার কেউ কেউ মনের মাধুরি মিশিয়ে আরো একটু আগ বাড়িয়ে বলে, আমি এই ঘটনা থেকে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছি। ????

এই কথা আমি কখনো অস্বীকার করিনি যে পপুলার ফার্মার কালাজ্বরের ওষুধ নিয়ে কেলেংকারী হয়নি। আমি এটাও অস্বীকার করিনি যে সেই সময়ে আমি পপুলার ফার্মার চিফ অপারেটিং অফিসার ছিলাম (সিইও নয়)। আমি মার্কেটিং, সেলস, ডিস্ট্রিবিউশন ও আইটি এই বিভাগগুলোর দায়িত্বে ছিলাম। আমি ফার্মাসিস্ট নই, আমি কখনোই ম্যানুফ্যাকচারিং-এ কাজ করিনি, আমার সেই ক্ষেত্রে কোন দক্ষতাও নাই। এই ঘটনার ব্যাখ্যা আমি ফেইসবুকে লিখেই দিয়েছি। তবুও বাকশালি অপপ্রচার থামেনি।

 “ফেইক নিউজ নিয়ে আওয়ামী সমর্থকদের পিনাকী ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে হেইট ক্যাম্পেইন “

হ্যাঁ, আমি পপুলার ফার্মাকে সেইসময় এই কেলেংকারী থেকে উদ্ধার করেছিলাম। আমি একা নই আমার সাথে আরো কয়েকজন দক্ষ পেশাদার কাজ করেছিলো। আমি যেহেতু সামনে থেকে উদ্ধার কর্মের নেতৃত্ব দিয়েছিলাম, তাই আমার নিজের গায়ে এই কেলেংকারীর দাগ লাগানোর ঝুঁকি নিয়েই পপুলারকে উদ্ধার করেছিলাম।

একটা কথা বলে রাখা দরকার, এই কেলেংকারীর জন্য কারো যদি শাস্তি হতো তাহলে সেটা হতো পপুলারের মালিক, ফ্যাক্টরির ডিরেক্টর, কোয়ালিটি কন্ট্রোল আর কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্সের ডিরেক্টরের; আমার নয়। আমি পপুলার কেলেংকারীর চাচা ছিলাম কারণ আমি চাকরি করতাম ওখানে, বাপ ছিলাম না, মানে ঘটনাটা আমার হাত দিয়ে ঘটেনি। কিন্তু পরিবারে সমস্যা হলে যেমন চাচা দূরে দাড়িয়ে হাততালি দেয়না, সমস্যা দূর করার কাজে হাত লাগায়। আমিও হাততালি দেই নাই, এই গাড্ডা থেকে পপুলার আর তার হাজার হাজার কর্মীদের ভবিষ্যৎকে উদ্ধার করেছিলাম।

কেন করেছিলাম। কীভাবে করেছিলাম সেটা আমি বলে যেতে চাই। আজ বলবো, কেন করেছিলাম।

যখন এই কেলেংকারির কথা প্রকাশিত হলো, অভিযোগ এলো যে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চলা কালাজ্বর নির্মূল প্রকল্পে পপুলারের সরবরাহকৃত মিলটেফসিনে কোন অ্যাক্টিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট নাই। তখন তো পপুলারের ভয়াবহ অবস্থা। মিডিয়াতে ছিঃ ছিঃ। পপুলারের সেলস নোজডাইভ দিয়ে তলানিতে এসে ঠেকেছে। ফিল্ড ফোর্স ভয়ে লজ্জায় অপমানে ডাক্তারের কাছে যাওয়া বন্ধ করেছে। বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজন বলে, এটা কী হল? সরকারের তরফ থেকে আজ এটা সিল করে তো কাল ওটা সিল করে। পপুলারের মালিক মোস্তাফিজ সাহেব আজ এর পা ধরে কাঁদে কাল ওর পা ধরে কাঁদে। তার এইটা বুঝার মতো উইসডম নাই যে এইভাবে এর ওর পা ধইর্যা কাঁইদা এই বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবেনা। আমি বাসা থেকে মাথা নিচু করে বের হই মাথা নিচু করে ঢুকি। রাতে ঘুম আসেনা। ভয়ানক অবস্থা।

আমাকে অনেকেই পরামর্শ দিচ্ছে পপুলার ছেড়ে দিতে। এই ঘটনা ঘটেছে কেন, এই প্রশ্ন করে এই দায় কোম্পানীর উপরে চাপিয়ে পপুলার ছেড়ে দিতে পারতাম। তাহলে এই কেলেংকারীর দাগ আমার গায়ে লাগতো না। আমিও দ্বিধায় আছি কী করবো সেটা নিয়ে। নিজের ক্যারিয়ার যেন আমি প্রটেক্ট করি সেটাই আশা করছিলো সবাই।

এমন সময়ে একদিন আমি এই ঘটনার ইনভেস্টিগেশনের কাজ শেষ করে পপুলারের ফ্যাক্টরির কোয়ালিটি কন্ট্রোল (কিউ সি) ডিপার্টমেন্ট থেকে বেরুচ্ছি। পপুলারের কিউ সি ম্যানেজার ফিরোজ মাথা নিচু করে সামনে এসে দাঁড়ালো। পিছনে আরো কয়েকজন ইয়াং অফিসার। ফিরোজ আমার চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, স্যার, কোম্পনি কি টিকে থাকবে? ফিরোজের চোখে মুখে অসহায়ত্ব; পিছনের সবাই আমার দিকে যুগপৎ অসহায়ত্ব আর উৎসুক চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে।

আমার তখন হঠাৎ করে টাইটানিক মুভির একটা দৃশ্যের কথা মনে হলো। টাইটানিক ডুবছে। এমন সময় থার্ড ক্লাসের প্যাসেঞ্জার একজন আইরিশ মহিলা তার দুই বাচ্চাকে কোলে নিয়ে ক্যাপ্টেন স্মিথকে আইরিশ অ্যাক্সেন্টে জিজ্ঞেস করছে, ক্যাপিতেন, হোয়ার শ্যুড আই গো প্লিজ। আইরিশ মায়ের শূন্য অসহায় দৃষ্টির সামনে ক্যাপ্টেন স্মিথ কিছু না বলেই চলে গেছিলেন। আমি যদিও তাদের বস ছিলাম না, তবুও আমার মনে হল ফিরোজ আর তার পিছনে দাড়ানো ইয়াং অফিসারেরা আমাকে ঠিক সেভাবেই বলছে, ক্যাপিতেন হোয়ার শ্যুড উই গো প্লিজ।

বিদ্যুৎ চমকের মতো ফিরোজের কথাটা আমার দ্বিধাকে ছুড়ে ফেলে দিলো। আমার মনে হলো এরা সবাই আমার দিকে আশা নিয়ে তাকিয়ে আছে। নিজেকে বললাম, গুল্লি মারি নিজের ক্যারিয়ারে, এদের বাঁচাতে হবে। আমার যা খুশী হোক, গায়ে যেই কাদাই লাগুক আমাকে শক্তভাবে দাঁড়াতে হবে এই হাজার হাজার কর্মীদের জন্য।

আমি ফিরোজকে বলেছিলাম, আপনি সজ্ঞানে কোন অন্যায় কাজ না করে থাকলে আমাদের কোনো বিপদ হবেনা, নিশ্চিত থাকেন, ভরসা রাখেন আমার উপরে। ইন ফ্যাক্ট, এই প্রিমাইসই পপুলারকে বাঁচিয়ে দিয়েছিলো যে, পপুলারের কোয়ালিটি ফেইলিওর কোন ক্রিমিন্যাল অফেন্স ছিলোনা; ছিলো একটা টেকনিক্যাল ফেইলিওর।

আমি নিজের পেশাগত সুনাম, সারা জীবনের আমার হেইটারদের ঘৃণা আর অপপ্রচারের সাথে এক্সচেঞ্জ করেছিলাম কয়েক হাজার কর্মীর পেশাগত জীবন আর জীবিকা। আমি এইজন্য লজ্জিত নই, বরং গর্বিত। পপুলার নামের ডুবন্ত জাহাজ থেকে সেদিন ইঁদুরের মতো পালাইনি, জাহাজে থেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জাহাজটা বাঁচিয়েছিলাম, সাথে বাঁচিয়েছিলাম তার সব যাত্রীকেও। কাদাটা আমার গায়েই লেগেছে, যাদের জন্য এই কেলেংকারীর ঘটনা ঘটেছিলো তাদের নাম কেউ বলেনা। তারা নিজে দায় নেয়ার সাহস দেখানোর বদলে আমার ছাতার নিচে কাপুরুষের মতো মাথা লুকিয়েছিলো।

এমন ঘটনা আবার ঘটলে আবারো আমি একই কাজ করবো। নিজে মরে অন্যদের বাঁচিয়ে যাবো। কারণ, আমি ইঁদুর নই; আই অ্যাম দ্য “ক্যাপিতেন”।

এই বিষয়ের আরো লেখা পড়তে

লেখাটির ফেইসবুক ভার্সন পড়তে চাইলে এইখানে ক্লিক করুন

Share

12 thoughts on “পপুলার ফার্মা, মিল্টেফসিন কেলেংকারী এবং আমি

  1. Thanks & this is called the Leadership. A Courageous man always believes in this Policy. Bravo, bravo. Go ahead. Regards,

  2. ভালো লাগলো। আপনার প্রতি সম্মান বেড়ে গেল।

  3. Jara onnay korse tader bachalen apni bah . Apnar lojja howa uchit but apni to proud dektesi chi. Onnay karike bachalen .Taw amon onnay jkhane lak lak munser sudhu takia na jibonero jhuki . Ata kono vabei mene nea jay na. Ai sompurno plan apnari . Churi korsen sathe chorder bachaisen shame on you

  4. আপনি তো বিশ্ববেহায়া। অপরাধ করে স্বীকারও করে নিয়েছেন!

  5. একটা ক্রিমিনাল অফেন্সকে আড়াল করে নিজেকে হিরো প্রমাণের চেষ্টা করেছেন.?? গিরিগিটী ও আপনার চেয়ে ভালো 🥱🥱

    1. আপনি মহাপুরুষ আপনার দোষ থাকতে নেই! আছে শুধু গুন আপনি গুনে গুনোবতী কথা সেটা আপনার ইদানীং কিছু নুড ছবি দেখে মনে হচ্ছে ৩ ইঞ্চি জন্য কিছু মেডিসিন তৈরি করলে তো হারুন আর আপনার ছোট জিনিস দেখা লাগতো না।

  6. আপনি মহাপুরুষ আপনার দোষ থাকতে নেই! আছে শুধু গুন আপনি গুনে গুনোবতী কথা সেটা আপনার ইদানীং কিছু নুড ছবি দেখে মনে হচ্ছে ৩ ইঞ্চি জন্য কিছু মেডিসিন তৈরি করলে তো হারুন আর আপনার ছোট জিনিস দেখা লাগতো না।

Leave a Reply to Abdullah Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Feeling social? comment with facebook here!

Subscribe to
Newsletter