চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ নিয়ে স্যেকুলারেরা আত্মপক্ষ সমর্থন করে দুইটি যুক্তি দিয়ে প্রথম যুক্তি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ ও দ্বিতীয় যুক্তি মার্কিনি ষড়যন্ত্র।
এবারে আসুন দেখি এই দুই যুক্তি কতটুকু যৌক্তিক। যৌক্তিক হলে আমাদের কারোই মেনে নেয়ায় ক্ষেত্রে কোন সমস্যা থাকার কথা নয়।
জাতিসংঘ আর বাংলাদেশ সরকারের যৌথ মূল্যায়নে স্বাধীনতা যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল যা তার আর্থিক মুল্য ছিল ১২০০ মিলিয়ন ডলার। এই ক্ষতিপূরণে আন্তর্জাতিক সাহায্য পায় বাংলাদেশ দুই দফায়, প্রথম দফায় ৯০০ মিলিয়ন ডলার ১৯৭২ এর আগস্টে আর দ্বিতীয় দফায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার ১৯৭২ সাল শেষ না হতেই। এর বাইরেও প্রত্যেক বছর প্রচুর বৈদেশিক সাহায্য এসেছিল, এদিক থেকে সবচেয়ে বেশী সাহায্য এসেছিল ১৯৭৪-৭৫ অর্থবছরে, এই অর্থবছরে প্রাপ্ত সাহায্যের পরিমাণ ছিল ৯১৯.২ মিলিয়ন ডলার। এই তথ্যগুলো থেকে এটাই বুঝা যায়, যুদ্ধের আর্থিক ক্ষতি আমাদের কড়ায় গণ্ডায় পুষিয়ে দিয়েছিল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।
এবার আসুন দ্বিতীয় যুক্তিতে। স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি গ্রহন করে এবং সমাতান্ত্রিক শিবিরে যোগ দেয়। আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ছিল সমাজতান্ত্রিক দেশ এবং সোভিয়েত ব্লকের একটি রাষ্ট্র। এই সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ব্লকের রাষ্ট্রকে কেন আমেরিকা সাহায্য দেবে? কোন কারণ আছে দেবার? নাই। যদিও আমেরিকা ৭৩-৭৪ এবং ৭৪-৭৫ এ খাদ্য সহায়তার জন্য আমেরিকা বাংলাদেশকে ৪৯ এবং ১৫০ মিলিয়ন ডলার সাহায্য দিয়েছিল।
এইবার আসেন গোল্ডেন কোশ্চেনে। কী এমন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র বানাইলেন যে রাষ্ট্র বানানির দুই বছরের মাথায় সমাজতন্ত্রের প্রধান শত্রু সাম্রাজ্যবাদের মোড়ল আমেরিকা রাষ্ট্রের সাহায্যের উপর এমনই নির্ভরশীলতা হইলো যে সাহায্য না পাইলে দেশে দুর্ভিক্ষ নামে?
তথ্যসুত্রঃ বাংলাদেশের রাজনীতিঃ প্রকৃতি ও প্রবণতা, ২১ দফা থেকে ৫ দফা; আব্দুর রহিম আজাদ ও শাহ আহমেদ রেজা; প্রকাশকঃ সমাজ বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র; জুন ১৯৮৭; পৃষ্ঠা ৩১-৩২
লেখাটির ফেইসবুক ভার্সন পড়তে চাইলে এইখানে ক্লিক করুন