হিন্দু মুসলিম ঐতিহ্য থেকেই ন্যায়ের ধারণা

রোমের আইনশাস্ত্র বা জুরিসপ্রুডেন্স সারা পশ্চিমের আইনশাস্ত্রের উৎস। একারণে গ্রীক দেবীর স্থাপত্য আমাদের বিচারালয়ের মাথার উপর গেড়ে দিতে হবে এমন কথা কেউ কেউ বলছেন।

আইন এবং বিচারের বিষয়ে ইউরোপের এক অবদান আছে এটা আমাদের অস্বীকার করার কিছু নাই। কিন্তু এর মানে কী এই যে ইউরোপের সাথে আমাদের পরিচয় ঘটার আগে মানে আমরা বৃটিশ কলোনিতে পরিণত হবার আগে আমাদের সিভিলাইজেশনে, এই ভুখণ্ডে ন্যায়ের কোন ধারণা ছিলনা? অবশ্যই ছিল।

আমরা হিন্দু এবং মুসলিম দুই ঐতিহ্য থেকেই ন্যায়ের ধারণা পেয়েছি। হিন্দু ঐতিহ্যে তো ন্যায়ই ধর্ম। মহাভারতের বা রামায়ন আসলে মূলত ন্যায়শাস্ত্র বিষয়ক রচনা। যার উপস্থাপন নানান চরিত্রের মাধ্যমে গল্পের মতন করে। যাতে ন্যায়শাস্ত্রের মত কঠিন বিষয় গল্পের কারণে সাধারণ্যেও একটা স্থান পায়। তত্ত্বগতভাবে সেকালের রাজা মানে প্রজার জন্য ন্যায় নিশ্চিত করাই যার ধর্ম; ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্যই রাজদণ্ড। আমরা তো সেই ঐতিহ্য থেকে আমরা এখনো বিচারপতিকে ধর্মাবতার (ধর্ম মানে ন্যায়) বা ন্যায়ের অবতার বলে ডাকার রেওয়াজ কোথাও কোথাও দেখি। এছাড়াও আমরা ন্যায়ের ধারণা পেয়েছি ইসলাম থেকে। ইনসাফ যেই ধর্মের কেন্দ্রীয় ধারণা। মোঘল আমলে কাজীর বিচার মুসলিম ঐতিহ্যের এক দারুণ অবদান।

আমাদের ভুখণ্ডে ন্যায়ের ধারণা সব সময়েই হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে ধর্মাশ্রয়ী। কলোনি মাস্টারেরা আমাদের সেই ইতিহাস এবং ঐতিহ্য ভুলিয়ে দিয়েছে। শুধু তাই না যেন বলতে চায় ন্যায়ের ধারণার একচেটিয়াত্ব হল পশ্চিমের। এটাই হল কলোনি গোলামির পক্ষে গোলামদের অক্ষম সাফাই। এই ভুলিয়ে দেয়া প্রকল্পের শেষ পেরেক ছিল মডার্নিজমের নামে আমাদের ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের সাথে সম্পর্কহীন স্যেকুলারদের দেবী থেমিসের মুর্তি স্থাপন প্রকল্প। থেমিসের মুর্তি শুধু বাংলার মুসলিম ঐতিহ্যের প্রতি অপমান নয়, হিন্দু ঐতিহ্যের প্রতিও অপমান।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Feeling social? comment with facebook here!

Subscribe to
Newsletter