আজ পলাশী দিবস। ১৭৫৭ সালের এই দিনেই বাঙলা বিহার উড়িষ্যায় শেষ স্বাধীন নবাব পলাশীর আম্রকাননে ইংরেজদের হাতে পরাজিত হন। আদতে পলাশীতে সেই অর্থে কোন যুদ্ধ হয়নি, সামরিক পরিভাষায় এটাকে বলে SKIRMISH বা হাতাহাতি। ইংরেজদের পক্ষে মাত্র ৭ জন ইউরোপীয় এবং ১৬ জন দেশীয় সৈন্য নিহত হয়।
ইংরেজ ইতিহাসবিদেরা নানা জায়গায় লিখেছে নবাবের প্রায় পঞ্চাশ হাজার সৈন্য ছিল। কথাটা ভুল। ক্লাইভের দলে ছিল গোলন্দাজ আর পদাতিক মিলে ৯০০ ইংরেজ আর একশো দেশী তোপচি, ২১০০ তেলেঙ্গা সেনা। মোট ৩১০০ সেনা।
মীর জাফরের ফর্মেশনে সবচেয়ে বেশী সেনা ছিল, যারা পুরো যুদ্ধের সময়ে দাড়িয়ে ছিল। সেই ফর্মেশনে ছিল তিন হাজার সেনা। এটা মীর জাফর ক্লাইভকে নিজেই যুদ্ধের শেষে বলেছে।
ফলে এটা ধরে নেয়া যায় সমানে সমানে যুদ্ধ হয়েছিল। নবাবের পক্ষে প্রায় সমান সংখ্যক বা ইংরেজদের চেয়ে কিছুটা কম সেনা যুদ্ধ করেছে। তবে ইংরেজদের গোলন্দাজ বাহিনী ছিল খুব শক্তিশালী।
নবাবের পক্ষে নবাবের দুই বিশ্বস্ত সেনাপতি যুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছিল। মীরমদন আর মোহনলাল। মীরমদন ছিলেন ঢাকার বাসিন্দা। তিনি ঢাকায় হোসেন কুলি খানের অধীনে নিয়াবতে কাজ করতেন। তাঁকে যুদ্ধের কিছু আগে জরুরী তলব করে সিরাজ মুর্শিদাবাদে ডাকিয়ে নেন।
মীরমদনের মৃত্যুর পরে মোহনলাল যখন সেনাদের নিয়ে মরণপণ যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিলেন তখন মীরজাফর সেনাদের ফিরিয়ে নিয়ে নবাবকে পরের দিন আক্রমণ করার উপদেশ দেয়। নবাব সরল বিশ্বাসে মীরজাফরের পাতা ফাদে পা দেন। মোহনলালকে সেনা ফিরিয়ে তাবুতে নিয়ে আসার নির্দেশ দিলে মোহনলাল ফিরতে অস্বীকার করে বলেন, যুদ্ধ আর কিছুক্ষনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। এসপার বা ওসপার যা হবার হবে। এখন সেনা ফেরানোর আদেশ দিলে সেনারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যাবে আর সেটা হবে নিশ্চিত পরাজয়ের নামান্তর।
নবাব এটা শুনেও মীরজাফরের চাপাচাপিতে বারংবার মোহনলালকে সেনা ফেরানোর নির্দেশ দিতে থাকেন। মোহনলাল শেষে হাল ছেড়ে সেনা ফেরানোর নির্দেশ দিলে তার পুর্বানুমান যা ছিল তাই হল, সেনারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। নবাব নিজেও তার ছত্রভঙ্গ সেনাদের পিছনে পিছনে মুর্শিদাবাদ পালাতে গিয়ে রাস্তাতেই ধরা পড়েন।
মহম্মদি বেগের হাতে বন্দি অবস্থায় নিহত হবার পরে নবাবের রক্তাক্ত দেহ হাতির পিঠে চড়িয়ে মুর্শিদাবাদের রাস্তায় ঘুরানো হয়।
এরপরে মসনদে বসে, সুবাহ বাঙলা বিহার উড়িষ্যার নতুন নবাব সুজা-উল-মুলক হিসামুদ্দোউলাহ মীর জাফর আলী খান বাহাদুর মহব্বত জঙ্গ। “মহাব্বত জঙ্গ” ছিল তার প্রভু আলীবর্দী খানের উপাধী-মানে “যুদ্ধে প্রচন্ড”।
এহেন বীর নাকি মসনদে বসতে ভয় পাচ্ছিলেন, ক্লাইভ তাকে তখতে নিজ হাতে তুলে দিলে তবে তিনি নির্ভয় হয়ে সেখানে বসেন।
বাংলার মসনদে বিদেশী প্রভুর হাত ধরে ভীরু চক্রান্তকারীর বসার উদাহরণ সেই শেষ নয়। হতভাগা বাঙলারে আমার।