যা ঘটে নাই তাঁর রেফারেন্স আমি দেই কীভাবে?

আজ সকালেই আমার এক গুরুজনের ইনবক্স পেলাম, তিনি জানতে চেয়েছেন; রবীন্দ্রনাথ যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেন নাই সেটার রেফারেন্স আমি দিতে পারবো কিনা? আমি বললাম যা ঘটে নাই তাঁর রেফারেন্স আমি দেই কীভাবে? রবীন্দ্রনাথের জীবনের প্রতিটি ঘটনা, প্রতিটি লেখা, প্রতিটি বক্তৃতা, প্রতিটি বিবৃতি লিপিবদ্ধ আছে। এমনকি, “রবীন্দ্রনাথ গতকাল হইতে ইনফ্লুয়েঞ্জায় ভুগিতেছেন সকালে এক ঘন্টার মতো তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলেন”। এমন ভিভিড বর্ণনার দলিল আছে লক্ষ লক্ষ পৃষ্ঠার। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতার মতো এমন একটা ঘটনা কোথাও থাকবে না সেটা কি হয়?

বাংলাদেশে রবীন্দ্র পুজা আর খেয়ে না খেয়ে রবীন্দ্র বিরোধিতা দুটোই বিরক্তিকর পর্যায়ে পৌঁছেছে। রবীন্দ্রনাথ আমাদের ইতিহাস আর ঐতিহ্যের অংশ তাঁকে চেষ্টা করলেও বাংলাদেশ থেকে ছেঁটে ফেলা যাবেনা। আবার রবীন্দ্রনাথ বেশীরভাগটাই এনলাইটেনমেন্টের সন্তান, তাই তিনি আমাদের গন্তব্যও হতে পারেন না। রবীন্দ্রনাথ পয়গম্বর নন। দোষে গুনে ভরা একজন মানুষ, তাই তিনি নিজের লিমিটেশন নিজে বুঝতেন, সেখানেই তিনি মহৎ। এই লিমিটেশনটা রবীন্দ্র পূজারীরা দেখতে পায়না। আর মহত্ত্বটা রবীন্দ্র বিরোধীরা দেখতে পায়না।

রবীন্দ্রনাথকে পর্যালোচনা না করে বাঙলার কাব্যচর্চা এগুতে পারবে না কারণ শিক্ষিত বাঙালি মধ্যবিত্তের চিন্তা, দর্শন রবীন্দ্রনাথে এসে থেমে গেছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ প্রয়োজন।

আমিও রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে লিখি, সেটাও রবীন্দ্রনাথকে ডিমিস্টিফাই করার জন্য। রবীন্দ্রনাথের চিন্তা, কল্পনাকে ছিড়ে খুড়ে দেখিয়ে দেয়ার জন্য তিনি আসলে কী লিখেছেন। এটাও পর্যালোচনার অংশ।

রবীন্দ্র বিরোধিতার জন্য মস্তিস্কে যেই মাল থাকা দরকার সেটা রবীন্দ্র বিরোধিদের নাই। আর রবীন্দ্র পর্যালোচনার জন্য চিন্তার যেই গভীরতা দরকার সেটাও পূজারীদের নাই। এই দুই ধারাকেই পরিত্যাগ করার হিম্মত দেখানোটাই আজকের বাংলাদেশের কর্তব্য।

লেখাটির ফেইসবুক ভার্সন পড়তে চাইলে এইখানে ক্লিক করুন

 

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Feeling social? comment with facebook here!

Subscribe to
Newsletter