ভগবানের সহিত কথোপকথন: ৩

তুই আবার আসিয়াছিস? ভগবান রোষ কষায়িত দৃষ্টিতে আমাকে ভস্ম করিয়া দিতে উদ্যত হইলেন।

প্রভু, আপনার জন্য ভোগস

রূপ কিছু ফল আনিয়াছি। আমি স্কন্ধের পেটিকা দেখাইয়া বলিলাম। ভগবান কিঞ্চিত প্রসন্ন হইলেন বলিয়া প্রতীতি হইল।

প্রভু, খাস আমেরিকা হইতে আনানো, একদম এক নম্বর জিনিস। আপনার সকল কৃপা তো উহাদের উপর সকল সময় বর্ষিত হয়।

ঠিক বলিয়াছিস, উহারা যাহা বানায় তাহাই উত্তম হয়। দেখিস তো, জাপান যদি গাড়ি ভালো বানায়, তবে তাহারা টিভিও ভালো বানায়। তবে তোরা কিছুই পারিলি না।

না প্রভু, আপনার কৃপায় অন্যের পশ্চাতে আঙুল দেয়া এবং দুর্নীতিতে আমরা প্রভুত উন্নতি করিয়াছি।

এবার কি ফন্দি লইয়া আসিয়াছিস? ভগবান প্রশ্ন করিলেন।

প্রভু, ফন্দি নহে, আপনার জন্য মর্মবেদনায় কাতর হইয়া আছি।

মর্মবেদনার কি হইল?

প্রভু, মর্ত্যধামকে সাইজ করিবার জন্য, সুপথে আনিবার জন্য আপনি কি-না করিয়াছেন? মহাপ্লাবনে ভাসাইয়াছেন, হ্যারিকেন-ভূমিকম্পে শাস্তি দিয়াছেন, হাজার হাজার মহাপুরুষ পাঠাইয়াছেন, লক্ষ লক্ষ নিদর্শন দেখাইতেছেন, পবিত্র গ্রন্থ পাঠাইয়াছেন, দুর্জনদের শাস্তি দিয়াছেন। তবুও কয়েক সহস্র বৎসরেও পৃথিবীটা বাসযোগ্য হইল না।

ইহাতে তোর মতো নরাধমের কষ্ট হইলে কি হইবে; আমার প্রকৃত অনুসারীরা মৃত্যুর পর অক্ষয় স্বর্গে কাল কাটাইবে।

প্রভু, সমস্যা তো এখানেই?

কি সমস্যা?
প্রভু, কোটি কোটি বৎসর লাগাইয়া, প্রভুত পেরেশানির কাজ করিয়া এক বাসযোগ্য মর্ত্যধাম বানাইতে পারিলেন না, কীভাবে আপনি নিখুঁত স্বর্গধাম বানাইবেন? আপনার প্রথম স্যাম্পলটাই তো ফেল মারিল। দ্বিতীয় স্যাম্পলটাও যে সেই রকম হইবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়?

ভগবান হুঙ্কার দিয়া উঠিলেন। বিশ্ব চরাচর কাঁপিয়া উঠিল। আমি ভয়ে ভয়ে স্কন্ধের পেটিকা ভগবানের পদতলে রাখিয়া করজোড়ে বসিলাম।
ভগবান কিছুটা শান্ত হইলেন তারপর পেটিকাটি খুলিলেন, পেটিকায় আমেরিকার সিল ভালো করিয়া লক্ষ্য করিলেন। পেটিকার ঢাকনা খুলিতেই পচা কীটদষ্ট আপেলের সারি দৃশ্যমান হইল।
আমি বলিলাম, ধরণী দ্বিধা হও। উহা তো ধরণী নয় তাই দ্বিধা হইল না। ভগবান গনগনে দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাইলেন।

তোর সব আপেল তো কীটদষ্ট, দুর্গন্ধময়!

প্রভু, উপরের সারি পচা হইলেও নিচের সারি ঠিক আছে। বুকে অনেক সাহস আনিয়া বলিলাম।

কীভাবে বুঝিলি?

প্রভু আপনি যেভাবে পচা পৃথিবী বানাইবার ব্যর্থতার পরেও নিখুঁত স্বর্গ বানাইতে পারেন ঠিক সেইভাবে।

ভগবান ক্রোধে বিস্ফোরিত হইবার পূর্বে পেটিকা তাঁহার দুই হস্তে মাথার উপরে তুলিয়া আমার দিকে নিক্ষেপ করিতে গেলেই সমস্ত গলিত কীটদষ্ট, দুর্গন্ধযুক্ত আপেল ওনার গাত্রে নিক্ষিপ্ত হইল।

ঘুম ভাঙিবার আগেই ঠিক করিলাম, মর্ত্যধামে ভগবানের ভোগে এখন হইতে সাবান দেওয়ার জন্য জোর প্রচারণা চালাইতে হইবে।

ভগবানের সহিত কথোপকথন ৪

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Feeling social? comment with facebook here!

Subscribe to
Newsletter