বিচার এবং নির্বাহী বিভাগ মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। অবস্থা দেখে মনে হয় না তাদের মধ্যে কম্প্রোমাইজ ফর্মুলা তারা খুজে পাচ্ছে বা পাবে। অবশ্য এই প্রশ্নও করা যায় যে আদৌ কোন একটা অথবা দুটা পক্ষই এমন ফর্মুলা খুজতেছে কী না? দুই পক্ষই চাইতেছে নিজের সর্বময় কর্ত্তত্ব। সেই কর্তৃত্বের বখরায় হয়তো কমবেশি আছে। সুপ্রীম কোর্ট চাইতেছে অন্তত নিজ এরিয়ায় এবং একান্ত নিজের জন্য ক্ষমতা হইতে হইবে নিরঙ্কুশ। আর সরকার চাইতেছে পুরা দেশের মতই বিচার বিভাগের উপর রামরাজত্ব।
মাল মুহিতের ভাষায় “তাদেরকে আমরা চাকরি দিই”। কিন্তু কথা হল এই “আমরা” মানে কারা? কোন ব্যক্তি যেমন নিজের প্রতিষ্ঠানে কর্মচারি নিয়োগ দেয় সেভাবে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা কী বিচারকদের নিয়োগ দিয়েছেন? ব্যক্তিগতভাবে? নাকি জনগণের পক্ষে রাষ্ট্র চাকরি দিয়েছে? মাল মুহিতের ভাষা আর বডি ল্যাঙুয়েজ দেখে মনে হয় নাই যে তার জনগণ-রাষ্ট্র সম্পর্কে জানা বুঝাটা স্পষ্ট। অবশ্য বাংলাদেশের পলিটিশিয়ানরা ফিউডাল চিন্তায় এখনো আচ্ছন্ন তাই প্রজা মালিক সম্পর্কের বাইরে আর অন্য কিছু তাদের বোধে আসেনা।
ওদিকে আবার সাদা চোখে মনে হতে পারে বিচার বিভাগ জনগণের পক্ষেই কথা বলছে। দীর্ঘ আওয়ামি ফ্যাসিজমে ত্যাক্ত বিরক্ত জনগণ নতুন উটকা ক্যাচাল হিসাবে এই লড়াই ঝগড়ায় বিচার বিভাগের দিকে আপাতদৃষ্টিতে ঝুঁকে গেছেন বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু একটা বিষয় যেন আমাদের খেয়ালের বাইরে না থাকে সেইজন্য একটু মনে করিয়ে দিতে চাই। এই লড়াই জনগণের পক্ষের লড়াই নয়। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার জন্য বিচার বিভাগ এই লড়াই লড়ছে না। এটা পরিস্কার।
এতদিন তো, মানে সরকারের ১৬ তম সংশোধনী আনার আগে পর্যন্ত তো, আমরা কখনও দেখি নাই বিচারের নামে যা খুশি রায় চাইতে নির্বাহি বিভাগের কোন অসুবিধা হয়েছে। সে হানিমুনের কথা আমরা ভুলি কী করে। “খাড়ায় যাবেন আর বসায় দেওয়ার” সেই সুদিনে কেউ কী কম তৎপর ছিল, কেউ কী কম ভুমিকায় ছিল? এখন সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কায়েম হওয়াতে কী সেসব সংশোধিত হয়ে গেছে। সবাই এখন নিপাট ভালামানুষ? বিচার বিভাগ কী বিচার করার স্বাধীনতা বা স্বাধীনভাবে বিচার করার সুযোগের জন্য লড়ছেন; না কী নিজের চাকরি বাঁচানোর জন্য লড়ছেন? নির্বাহী বিভাগ যেন তার চাকরিতে হাত না দিতে পারে এজন্য লড়ছেন?
জনগণের পুর্ণ সমর্থন চাইলে সবার আগে এসব বিষয়গুলো বিচার বিভাগকে অবশ্যই পরিস্কার করতে হবে। সেটা করতে না পারলে আমাদের ভয় যে এর আগে এটা সমাজের জনবিচ্ছিন্ন দুই কোটারির লড়াই হয়েই থেকে যাবে! তাতে কে বলি হবে কে জানে!