আমাদের ভাষার ব্যবহার অসীম। আমরা একই কথা একই প্যাটার্নে বার বার বলিনা। আমরা যা বলি তা আর কখনো বলা হয়নি এবং শেখানোও হয়নি। প্রতিটি বাক্যই নতুন আবিষ্কার। প্রতিটি বাক্যই সৃষ্টিশীল নব নির্মাণ, প্রতিটি বাক্যই মানবিক সৃষ্টিশীলতার প্রমাণ।
শরীরের বিশেষ কোন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতেই আমরা ভাষার ব্যবহার করি তা নয়। কোন নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াও আমরা ভাষা ব্যবহার করি। পশুরা কোন কারণ ছাড়া তাঁদের সংকেত ব্যবহার করেনা। মানুষের ভাষার এই কার্যকারণ হীনতার জন্যই “চিন্তা করা” সম্ভব হয়েছে। অর্থাৎ আমাদের চিন্তার কোন নৈর্ব্যাক্তিক কারণ নেই। আমরা বলি কারণ বলার মতো মানবিক সত্ত্বা আমাদের ভেতরে রয়েছে। সে সত্ত্বা নিজের খুশীতে চলে, কোন কারণে চলেনা। সেই খুশীই হচ্ছে সৃষ্টিশীলতা। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, আনন্দযজ্ঞ। আনন্দের কোন কারণ নেই- মানুষের মানবিকতা সেই কারণ হীন আনন্দের ভিতর। ইচ্ছে হয়েছে, তাই আনন্দ, তাই খুশী, তাই ভাষা। এই কারণেই বাক বা জবানের স্বাধীনতা বলতে আমরা বুঝি যা খুশী তা বলার স্বাধীনতা। জবানের স্বাধীনতার দাবী তাই সরাসরি মানবিকতার দাবী। এর মধ্যে আপোষ চলেনা। সে স্বাধীনতা শুধু বুদ্ধিজীবীর বা শাসকের জন্য নয়, যে কোন সুস্থ চিন্তাসক্ষম মানুষের তা কাম্য। কারণ শুধু শাসক বা বুদ্ধিজীবীরাই চিন্তাগ্রস্থ হয়না। চিন্তা মানুষের এবং একমাত্র মানুষের মানবিক সত্ত্বা। এর সঙ্গে তাঁর অস্তিত্বের প্রসঙ্গ জড়িত। দেকার্ত মানুষের অস্তিত্তের প্রমাণ হিসেবে হাজির করেছিলেন থিঙ্কিং সেলফের ধারণা। আই থিঙ্ক দেয়ারফোর আই অ্যাম।
ভাষা বা কথা যদি সৃষ্টিশীল না হতো, ব্যবহার যদি কোন কার্যকারণ মেনে চলতো; তবে অনেক রাজনৈতিক ও সামাজিক সমস্যার সমাধান অন্তত সহজ হতো। মতাদর্শের বিভিন্নতা থাকতো না। শান্তি সহজগম্য হতো।
জবানের স্বাধীনতা যদি বাধাগ্রস্ত হয়, সেই সমাজ সৃষ্টিশীল থাকতে পারেনা। আমার আশংকা, এই বন্ধ্যা সমাজ আরো বেশী বন্ধ্যাত্বের দিকে যাচ্ছে না তো?
লেখাটির ফেইসবুক ভার্সন পড়তে চাইলে এইখানে ক্লিক করুন