কয়েকদিন আগে সিপিবির কয়েকজন আমাকে অভিযুক্ত করলো এইজন্য যে কেন আমি স্যেকুলারদের সমালোচনা করি? আমি জিজ্ঞেস করলাম, স্যেকুলারিজম কি আপনাদের এজেণ্ডা। উনারা সকলেই বুক ফুলিয়ে বললেন “হু”। কথার সাথে আরো বেশী শক্তি যোগ করার জন্য বললেন “অবশ্যই”। আমি বললাম মোটেই না। এটা বুর্জোয়া এজেণ্ডা। উনারা মানলেন না। উনারা মনে করেন স্যেকুলারিজম কমিউনিস্টদের একটা গুরুত্তপুর্ন এজেণ্ডা।
স্যেকুলারিজম এর ধারণার প্রথম উন্মেষ হয় যখন বুর্জোয়ারা ক্রমেই ক্ষমতাবান হচ্ছে এবং একটি নতুন শাসক শ্রেণীর উদ্ভব হতে যাচ্ছে। ধর্মগ্রন্থের ব্যাখ্যার একচেটিয়া অধিকার যখন চার্চ হারলো তখন সবাই ধর্মগ্রন্থ বাইবেল পড়তে শুরু করলো। তৈরি হল নানা বয়ান। একেকজন একেক ফ্যাঁকড়ার জন্ম দিতে শুরু করলো। এখন রাজা কোন ফ্যাঁকড়ার পক্ষে যাবে? সেই সময় হৌলি রোমান সাম্রাজ্যের ভিতরে কয়েক দশক ধরে চলছিল যুদ্ধ। যুদ্ধ চলছিল ডাচ এবং স্পানিয়ার্ডদের সাথে আট দশক ধরে। মুলত এই যুদ্ধের মধ্যে দিয়েই পুঁজিবাদের আনুষ্ঠানিক উন্মেষ হতে থাকে। এই যুদ্ধ বন্ধে ইউরোপের ১০৯ জন প্রতিনিধি ওয়েস্টফিলিয়াতে ১৬৪৮ সালের অক্টোবরে মিলিত হন। যুদ্ধ বন্ধের চুক্তির পাশাপাশি খ্রিস্ট্র ধর্মের গড়ে ওঠা নানা ফ্যাঁকড়ার প্রকাশ্য ধর্ম পালনের জন্য সময় বেধে দেয়া হয় সাথে সাথে এও বলা হয় ব্যক্তিগতভাবে প্রাইভেট স্পেসে কেউ যে কোন সময় ধর্ম পালন করতে পারে। এবং রাজা কোন ফ্যাঁকড়াকে সমর্থন দেবে না। এই হল ধর্ম নিরপেক্ষতার আদি বয়ান। যা আসলে ফ্যাঁকড়া নিরপেক্ষ। পুঁজিবাদ আরো একটু অগ্রসর হয়ে বুঝলো, যেই নতুন সমাজ সৃষ্টি হতে যাচ্ছে সেই সমাজের জন্য নতুন মুলবোধ দরকার। ধর্ম আর সেই মূল্যবোধের যোগান দিতে পারছেনা। নানা ক্ষেত্রে ধর্মের মূল্যবোধ পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছে। তাই পুজিবাদ চাইলো তাঁর আগের যে সব ধর্ম নীতি নৈতিকতা তার বিকাশ আর স্ফিতির চরিত্রের সাথে কম্প্যাটিবল মনে করেনা তাকে সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে হয় নির্বাসন দিতে অথবা বদলে ফেলে দিতে। মার্ক্স এই প্রসঙ্গেই ক্যাপিটালে বলেছেন, “খ্রিস্ট ধর্ম সম্পর্কে যে ধর্মীয় তত্ত্ব খাড়া করে, বিশেষত তাঁর বুর্জোয়া বিকাশের পর্যায়ে, যেমন প্রটেস্ট্যানিজম, দৈব তত্ত্ব ইত্যাদি তাঁরা খাপে খাপে এই অবস্থার সঙ্গে মিলে যায়। পুজিবাদ সেই সকল ধর্ম তত্ত্বরই বিনাশ ঘটায় যা তাঁর বিকাশের পথে বাঁধা, কিন্তু ধর্ম তত্ত্বের মধ্যে বদলও ঘটায় পুঁজি যা তাঁর খাপে খাপে মেলে।“ কার্ল মার্ক্স ও পুঁজির সাথে ধর্মতত্ত্বের তুলনা করেছেন অসংখ্য বার এই কারণেই। পুঁজিবাদের প্রয়োজন হয়েছিল ধর্মের সাথে একটা রাজনৈতিক ফয়সালার। পুঁজিবাদ ধর্মের সাথে এই ফয়সালার কাজটা করেছে কীভাবে? করেছে এনলাইটেনমেন্টের নামে। এর মধ্যে দিয়েই ধর্মের সাথে পুঁজির একটা রাজনৈতিক ফয়সালা হয়েছে। এই লড়াইটা চলেছে বুর্জোয়াদের হাত ধরে। ধর্মের বিষয়ে রাষ্ট্রকে বা রাজাকে নিরপেক্ষ থাকতে বাধ্য করা, ধর্মকে বদলে দেয়া আর ধর্মকে প্রাইভেট বিষয়ে পরিণত করা। পুঁজিবাদ শেখায় যদি দেহ বিক্রি করে পয়সা আসে তাহলে সেটাও একটা পণ্য। এখন এই নতুন মূল্যবোধকে জায়গা করে দিতে হলে সব পুরনো নীতি নৈতিকতাকে ঝেটিয়ে বিদায় করে দেয়া ছাড়া তো উপায় নেই। এর জন্য ধর্ম যদি বাধা হয় তবে ধর্মকেও সে ঝেটিয়ে বিদায় করে দেবে অথবা প্রয়োজন মত নিজের উপযোগী করে গড়ে নেবে। এই ধর্ম নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রথম ক্রিটিকটা মার্ক্সের। ফয়েরবাখ সংক্রান্ত থিসিসের চার নম্বরে মার্ক্স লেখেন;
“ফয়েরবাখ ধর্মীয় আত্ম বিচ্যুতির জায়গা থেকে শুরু করেন, শুরু করেন দুনিয়ায় একদিকে ধর্মীয় জগৎ আর অন্য দিকে ধর্ম– নিরপেক্ষ জগত– এই দুই ভাগে ভাগ হয়ে যাওয়া থেকে। তার কাজ হোল ধর্মের জগতকে তার ধর্ম নিরপেক্ষ ভিত্তির মধ্যে মীমাংসা করা। ফয়েরবাখ ভুলে গেলেন যে তার কাজ শেষ হওয়ার পরেও তার মুল কাজটি যে অসমাপ্ত রয়ে গেল। কিন্তু সেই ধর্ম নিরপেক্ষ ভিত্তিও নিজের কাছ থেকে নিজে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে সেই উঁচু মেঘের মধ্যেই নিজেকে একটি স্বাধীন জগত হিশাবে প্রতিষ্ঠিত করে যাকে একমাত্র ধর্ম নিরপেক্ষতার ভেতরকারই ফাটল আর স্ববিরোধীতা দিয়েই শুধু ব্যাখ্যা করা যায়। তাহলে ধর্ম নিরপেক্ষতাকে তার নিজের জায়গা থেকে বুঝতে হবে তার নিজেরই স্ববিরোধীতা দিয়ে এবং তৎপরতার মধ্য দিয়ে বৈপ্লবিকতার স্তরে বদলিয়ে – দুই দিক থেকেই। অতএব, উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, যদি পার্থিব পরিবারই পবিত্র পরিবারের (holy family) আসল সত্য বলে আবিষ্কৃত হয় তাহলে কাজ হোল পার্থিব পরিবারকেই তত্ত্বে ও চর্চায় ধ্বংস করা।“
মার্ক্স বলছেন ধর্ম নিরপেক্ষতার জগতও তৈরি হয় ধর্মিয় জগতের উপরেই। পশ্চিমা এনলাইটেনমেন্ট যেইভাবে ধর্মের জগত আর ধর্ম নিরপেক্ষতার জগত এভাবে দুইভাগে আলাদা করে ধর্মের ফয়সালা করলো সেটাকে মার্ক্স ধর্মের প্রশ্নে চূড়ান্ত ফয়সালা বলে মানেননি। তিনি বলেছেন এভাবে দ্বিবিভাগ করে ধর্মের জগতকে অতক্রম করে যাওয়া যায়না। অথচ ধর্ম নিরপেক্ষতাকে আমরা বাংলাদেশে চূড়ান্ত প্রগতিশীলতা বলে মানি। যারা নিজেকে মার্ক্সবাদী বলে দাবী করেন তাঁরা কখনো প্রশ্ন করে দেখেননি ধর্ম নিরপেক্ষতার বিষয়ে ইউরোপিয় বয়ানে মার্ক্সের কোথায় সমস্যা ছিল? মার্ক্স বুঝতে ভুল করেননি; যে ইউরোপিয় রেনেসাঁর হাত ধরে এনলাইটমেন্ট আর এইজ অব রিজনের যুগ সেই একই হাত ধরেই এসেছে ইউরোপে ফ্যাসিবাদ। এমনকি সোভিয়েত রাশিয়ার বিপ্লবেরও ফ্যাসিস্ট রূপান্তর ঘটেছে। তাহলে ঠিক কোথায় ধর্ম নিরপেক্ষতার সেই স্ববিরোধিতা? সেটা খুজতে আবার মার্ক্সের কাছে হাত পাততে হবে। মার্ক্স সেটাও বলেছেন ফয়েরবাখ সংক্রান্ত আরেক থিসিসে। “ফয়েরবাখ ধর্মীয় সত্তাকে মানুষের মনুষ্যত্বে নিরসন করেছেন। কিন্তু মানুষের মনুষ্যত্ব এক একজন মানুষের অন্তর্গত কোনো বিমূর্ত ব্যাপার নয়। বাস্তবে এটা হচ্ছে সামাজিক সম্পর্কের সমাবেশ।“
এই সামাজিক সম্পর্কের দিক থেকেই বিচার করতে হবে ধর্ম নিরপেক্ষতার বিষয়টি। তিনি বিষয়কে দেখেন সেই সপ্রাণ এবং সক্রিয় সম্পর্কের দিক থেকে। এই সপ্রাণ সামাজিক সম্পর্কের সমাবেশের মধ্যেই খুজতে হবে ধর্ম নিরপেক্ষ আর ধর্মের জগতের উত্তরণ। ধর্মের জগত হয়ে উঠেছে প্রকৃত অর্থে হেগেলের ভাবের জগত আর ধর্ম নিরপেক্ষতা হয়ে উঠেছে ফয়েরবাখের বস্তুর জগত। যেই দুই জগতের সাথেই লড়াই করেছেন খোদ মার্ক্স। মার্ক্স বলেছিলেন, “আমার বিশ্লেষণের পদ্ধতি মানুষ থেকে শুরু হয় না, শুরু হয় হয় বৈষয়িক ভাবে হাজির থাকা সামাজিক কালপর্ব বিচার থেকে।“ এবার বৈষয়িক ভাবে যেই সামাজিক সম্পর্কের মধ্যে ধর্ম ও ধর্ম নিরপেক্ষ জগত তৈরি হল সেই সামাজিক সম্পর্কের মধ্যেই এই প্রশ্নের সমাধান আছে। যেই সামাজিক সম্পর্ক ধর্ম ও ধর্ম নিরপেক্ষ জগতের বৈষয়িক শর্ত সৃষ্টি করে সেটার বিলয়েই আত্ম বিচ্যুতির জগতের সমাপ্তি ঘটবে। এটাই মার্ক্সের ফয়সালা। মার্ক্সবাদীরা ধর্ম নিরপেক্ষতার জগতকে অতিক্রম করে যান। ইউরোপিয়ান এনলাইটেনমেন্ট মার্ক্সবাদী বা কমিউনিস্টের গন্তব্য হতে পারেনা।
এবার আসুন সাব অল্টার্ন স্টাডিজের ধর্ম নিরপেক্ষতা নিয়ে কী বক্তব্য সেটা দেখি। সাব অল্টার্ন রা কিন্তু স্ট্যালিন বাদী বাম এবং আন্তেনিও গ্রামসির অনুসারি। তারা বলে, “ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদ পাশ্চাত্য থেকে আমদানী করা এমন এক মতবাদ যার সঙ্গে আধুনিকতার সম্পর্ক নিবিড়। এই আধুনিকতা এক স্পর্ধিত উন্নাসিকতায় বাতিল করতে চায় প্রান্তিক মানুষদের ঐতিহ্য, সত্তা ও বিশ্বাসগুলিকে। ধর্মীয় কট্টরপন্থা বা মৌলবাদও আসলে পশ্চিম–অনুসারী এক পন্থা এবং তার চোখেও প্রান্তিক মানুষ অবজ্ঞার। সে যত–না ধর্মের কথা বলে, তার চেয়ে বেশী বলে রাজনীতির কথাই। এই উভয় মতবাদই কর্তৃত্ব–কামিতায় আচ্ছন্ন অথচ বাস্তবতার আঘাতে নিয়ত পর্যুদস্ত।“ তারা বলে ধর্ম সম্পর্কে রাষ্ট্রিয় সহিষ্ণুতা সামাজিক সহিষ্ণুতার কোনও নিশ্চয়তা দেয় না। রাষ্ট্রিয় সহিষ্ণুতা হয়তো সাময়িকভাবে কোনও রাজনৈতিক সম্প্রদায়ের টিকে থাকাকে নিশ্চিত করে। আশিষ নন্দী তাঁর ধর্ম নিরপেক্ষাতাবাদ-বিরোধী ইস্তাহারে বলছেন; “প্রায় সতেরো শতক থেকে রাষ্ট্র সম্পর্কিত আধুনিক পশ্চিমি মতাদর্শ ধর্ম ও রাজনীতিকে পৃথক করে রাষ্ট্রকে ধর্মনিরপেক্ষ করার প্রয়োজন অনুভব করেছিল। মতাদর্শটিও তাই আধুনিক ভারতীয় চেতনাকে প্রভাবিত করেছিল। এবং তা এতটাই যে এমনকী উগ্র হিন্দু সংগঠনও, যারা হিন্দু জাতীয়তাবাদের জন্য লড়াই করছিল, তারাও কখনই ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের ধারণাটিকে পরিত্যাগ করতে পুরোপুরি সমর্থ হয়নি। তাদের আশা ছিল, এই ধরণের চূড়ান্ত ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ দিয়ে মুসলিম বা শিখদের মতো ভারতের সবচেয়ে বেশি আত্নপ্রকাশপ্রবণ সংখ্যালঘুদের, যারা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের সঙ্গে খুব বেশি সহমত বলে মনে হয় না, ‘ছেটে মাপ মতো’ করে নেওয়া যাবে।“
সাব অল্টার্ণদের মতে, প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ নাগরিকের রাজনৈতিক সত্তাকে খর্ব করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সীমাবদ্ধ করার চেষ্টা করে। সত্তার বাকি অংশটিকে তাদের সতর্কভাবে পাব্লিক স্পেয়ারের বাইরে রেখে দিতে হয়। সংস্কৃতির কোনও পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া ঘটতে না দিয়ে দুটি বৃত্তকে কঠোরভাবে পৃথক করে রাখা হয়, এবং ধর্ম এক বিশেষ কালক্রমে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। অবধারিতভাবে ধর্মের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র অভিযোগ তোলে, যে ধর্ম পশ্চাৎ পদতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে ধর্মটা রাজনীতির বাইরে থাকে না, বরং ভিন্নপথে তার রাজনীতিতে অনুপ্রবেশ নিশ্চিত করে। স্যেকুলারদের চোখে ধর্মবিশ্বাসিরা অপকৃষ্ট রাজনৈতিক চেতনাসম্পন্ন ব্যাক্তিবিশেষ। কিন্তু যেখানে এক-সময় সকল ধর্মকে শুধুমাত্র রাজনৈতিক জীবন থেকে নয়, একেবারে জীবন থেকেই ছেটে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল- সেখানে চার্চের গুরুত্ব বাড়ছে। এমনকী যে-সমস্ত সমাজ জাতিসত্তার ভাবাবেগে আন্দোলিত নয় সেখানেও বহু সম্প্রদায়ের মধ্যেই এক নতুন সাংস্কৃতিক গর্ব ও স্বাতান্ত্র্যাভিমান স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গ ও ইস্পাহানিররা যার উদাহরণ।
গণতন্ত্র বা আধুনিকতা ধর্মকে রাজনীতি থেকে বিযুক্ত করেনি বরং ধর্মের বিধর্ম বিদ্বেষী ও গণতন্ত্র বিরোধী রূপ গুলোকে নতুন ক্ষমতা ও বৈশিষ্ট্য দান করেছে। রাজনীতির ধর্মীয় ব্যবহারের পরিবর্তে তারা ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার করে তাকেই রাজনৈতিক প্রণোদনার এক হাতিয়ারে রূপান্তরিত করে নেয় এবং এভাবে রাজনৈতিক ব্যবস্থা গুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। ধর্ম নিরপেক্ষতার চর্চার ফলে ধর্মের বিভেদকামী দিকগুলো রাজনৈতিক অভিব্যাক্তিও পেয়েছে, কিন্তু তাঁর শক্তির দিকগুলো যা রাজনৈতিক জীবন থেকে হিংসা দুর্নীতি দূর করার কাজে আসতো সেটাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়না।
স্যেকুলার রাষ্ট্র এক নব্য পুরোহিত শ্রেণী গড়ে তুলেছে যার মধ্যে আছে বিজ্ঞানী, আমলা এবং উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ, এরাও চার্চের মত জনগনের অন্ধ বিশ্বাস দাবী করে। সাব অল্টার্ন দের মতে, “হিন্দু পুনরুত্থানবাদী বা মুসলিম মৌলবাদীরা আসলে এনলাইটেনমেন্ট-উত্তর ইউরোপের ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক মানুষদেরই এক রকমফের এবং তাদের জাতিসত্তাবোধ অগভীর ও প্রতিক্রিয়াশীল। তারা নিজেরাও আগ্রাসকদের সঙ্গে নিজেদের মিলিয়ে নেয়; তারা নিজেরাও নিজেদের সাঙ্গস্কৃতিক-আত্ন-র বিপক্ষে দাঁড়ায়। শেষপর্যন্ত, কট্টর পন্থীদের আত্নঘোষনা হয়ে ওঠে- সাংস্কৃতিক নয়, রাজনৈতিক। “ আশিস নন্দী দাবী করছেন, ভারতেও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সঙ্গে আধুনিকতার একটা সংযোগ আছে। একদিকে যখন আধুনিকতা- পূর্ব বা আধুনিক ভারতে ধর্মীয় সংঘাতের বিষয়টা নিশ্চিতই অজ্ঞাত কিছু ছিল না, অন্যদিকে তখন ‘যুক্তিশীল’, ‘পরিচালনীয়’ সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ- যা আমরা এখন প্রায়শই প্রত্যক্ষ করছি- তা নিশ্চিতই ধর্মনিরপেক্ষকরণ ও আধুনিকীকরণেরই এক পার্শ্ব – প্রতিক্রিয়া। দাঙ্গার মধ্যে সবসময়ই এক সাংগঠনিক উপাদান থাকে। দাঙ্গা সংগঠিত করতে হয়। কোন দাঙ্গাই সতস্ফুর্ত নয়। আধুনিকতার অস্ত্র যুক্তিশীলতা এখন ব্যবহৃত হচ্ছে হিংসা উদ্রেকের কাজে সেই অর্থে, আমরা এখন যা প্রত্যক্ষ করছি তা মূলত স্যেকুলার দাঙ্গা, পরবর্তিকালে তাকে দাঙ্গার শিকার বা দাঙ্গাকারীদের স্বার্থে অ-ধর্মনিরপেক্ষ ভাষ্যে যুক্তিসম্মত করে তোলা হচ্ছে। অ-ধর্মনিরপেক্ষ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে ধর্মনিরপেক্ষ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সবসময়ই অনেক বেশি সুস্পষ্টভাবে গরিব বিরোধী।
সিপিবি তাহলে কোন মোহে ধর্ম নিরপেক্ষতার পতাকা দোলায় শ্রেণী সংগ্রামের অবশ্য কর্তব্যকে বাদ দিয়ে? ইতিহাস এই প্রশ্নের জবাব সিপিবির কাছে চাইবে। তার আগে পর্যন্ত সিপিবি তাদের আধা খেঁচড়া জ্ঞান নিয়ে নিজেদেরকে কমিউনিস্ট দাবী না করলেই প্রগতির লড়াই উপকৃত হবে।