হে দারিদ্র তুমি মোরে করেছ মহান
তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রিস্ট্রের সম্মান
কন্টক-মুকুট শোভা।
কাজী নজরুল ইসলাম দারিদ্রকে এভাবেই সেলিব্রেট করেছিলেন, রোমান্টিসাইজ করেছিলেন। কিন্তু দারিদ্রের সাথে যীশু খ্রিস্ট্রের সম্পর্ক কী? সম্ভবত এটাই, যীশু বলেছিলেন, দ্য পুওর উইল অলওয়েজ বি উইথ আস। দরিদ্ররা সব সময়েই আমাদের সাথে থাকবে। যদিও আজকের দিনের সেলিবৃটি লেখিকা জে কে রাওলিং বলেছেন, “পোভার্টি ইটসেল্ফ ইজ রোমান্টিসাইজড অনলি বাই ফুলস।” শুধু নির্বোধেরাই দারিদ্রকে রোমান্টিসাইজ করতে পারে।
শিল্প বিপ্লবের আগের সময়ে সারা পৃথিবীতেই নিদারুণ দারিদ্র ছিল। ১৭০০ সালে জনপ্রতি জিডিপি ছিলো দুই ডলার। ক্যাপিটালিজমের কালপর্বেই প্রথম পৃথিবী থেকে ব্যাপকভাবে দারিদ্র দূর করা শুরু হয়। পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশী দারিদ্র দূর হয়েছে ১৯৭৯ সালে চীনের অর্থনৈতিক সংস্কারের পর থেকে। এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর যে সমস্ত অঞ্চলে চরম দারিদ্র বিরাজ করছে যেমন ভারত আর সাব সাহারান আফ্রিকার কিছু গ্রামীন অঞ্চল, সেখানে এখনো পর্যন্ত ক্যাপিটালিজম পৌছেনি।
১৯৯৯ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে পৃথিবী থেকে অর্ধেকের বেশী দারিদ্র দূরীভূত হয়েছে। দারিদ্র ক্যাপিটালিজমের কোন অংগীভুত শর্ত নয়, বরং ক্যাপিটালিজমই এই পর্যন্ত দারিদ্র দূর করার জন্য সেরা এবং পরীক্ষিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। বামপন্থী ভাইয়েরা কষ্ট পাবেন জানি, তবুও বলতে হচ্ছে, তথাকথিত সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিও পুজিবাদি ব্যবস্থায় মত দারিদ্র কমাতে পারেনি, বরং অর্থনীতির মানদণ্ডে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি গুলো স্থবির ছিলো।
চীনের অর্থনৈতিক সংস্কারের আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সময়ে পশ্চিমে ব্যাপকভাবে দারিদ্র দূর হওয়া শুরু হয়েছিলো। উন্নত বিশ্বে যেটাকে বলা হয় এবসোলিউট দারিদ্র, সেটা অনুপস্থিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে যে রাষ্ট্র সমুহের মধ্যে পলিটিক্যাল সেটেলমেন্ট হয়েছিলো, কল্যান রাষ্ট্র গুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো, সোশ্যাল সিকিউরিটি আর পেনশন সিস্টেম প্রবর্তিত হয়েছিলো এরফলেই দারিদ্র দ্রুত দূরীভূত হয়েছে।
তবে শুধু ক্যাপিটালিজম দিয়েই পৃথিবীর বাকী দারিদ্র দূর করা যাবেনা। এর সাথে আরো কিছু রাজনৈতিক, সামাজিক আর অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে, যা সামাজিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে, সার্বজনীন স্বাস্থ্যের ব্যবস্থা করবে, আর সর্বোপরি এমন কিছু চেক এন্ড ব্যালান্স করবে যেন সম্পদ অল্প কিছু মানুষের হাতে কুক্ষিগত হয়ে, ব্যাপক অর্থনৈতিক অসাম্য তৈরি না হয়।
জাতিসংঘ স্থির করেছে ২০৩০ সালে পৃথিবী থেকে দারিদ্র সম্পুর্ণ ভাবে দুরীভুত হবে। আর এগারো বছরে এই উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে কিনা জানিনা, তবে দারিদ্র্য সম্পুর্ন ভাবে দূর করা অবশ্যই সম্ভব, যদি আমরা সত্যিই সেই লক্ষ্য অর্জন করতে চাই।