তখনই মানুষের মুক্তি ….

রবীন্দ্রনাথের ডাকঘর আমার প্রিয় একটি নাটক। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে যে পারিবারিক মঞ্চে ডাকঘরের অভিনয় হয়েছিল সেই ঘরটিতে ডাকঘর নাটকের সেই ছবি দিয়ে ডাকঘর নাটক সম্পর্কে একটি বর্ণনামূলক ব্যাখ্যা দেয়া আছে। সেখানে ছবি তোলা নিষেধ তাই আমি মুল অংশটুকু টুকে এনেছি। আমার মনে হয় এই এক অসামান্য ছত্রই নাটকটির পুর্নাংগ ব্যাখ্যা দিতে পারে।

“ডাকঘর নাটকের অন্তঃস্থলে রয়েছে একটি মুমুর্ষু প্রাণের অনিয়মিত মৈত্রী ভাবনা, এক উদাসী প্রাণের ব্যাকুল সুর। অমলের অতৃপ্ত এবং বন্দী চিত্ত বহিঃ প্রকৃতির মধ্যেই চেয়েছে মুক্তির সন্ধান, এমনকি তাঁর অন্তরে উপজাত এক অনির্বচনীয় রহস্যকে তাঁর ইচ্ছার সঙ্গে রাজার ইচ্ছার মিলন সাধনের আকুতি; দেশে দেশে ঘরে ঘরে রাজার প্রতিনিধি হয়ে তাঁর চিঠি পৌঁছে দেবার বাসনা যেন বিশ্ব প্রকৃতির অন্তলীলা ছন্দে অপূর্ব সমাধান লাভ করতে চেয়েছে।”

আমি যেই কথাটা বারেবারে বলতে চাই, মানুষের চৈতন্য আর প্রকৃতি আলাদা সত্তা হয়ে আধুনিক সমাজে বিরাজ করে। চৈতন্য প্রভুত্ব করে প্রকৃতির উপরে। চৈতন্য যখন প্রকৃতি আর চৈতন্যের অভেদ আবিষ্কার করবে, মানুষ যখন নিজেকে প্রকৃতির অংশ হিসেবে আবিষ্কার করবে, প্রকৃতিতে লীন হবে তখনই মানুষের মুক্তি। অমল এই মুক্তিই কামনা করেছিল রাজা রূপি বিধাতার কাছে। আর বিধাতার বানীও তাই। অমলের মতো আমরা যেদিন বলতে পারবো ,’খুব ভালো, খুব ভালো কবিরাজমশাই। আমার আর কোনো অসুখ নেই, কোনো বেদনা নেই। আঃ, সব খুলে দিয়েছ —সব তারাগুলি দেখতে পাচ্ছি —অন্ধকারের ওপারকার সব তারা।’

আমাদের চোখের উপরে মায়ার সেই পর্দা সরানোটাই বিপ্লব। সেই মায়ার পর্দাটাই প্রাণ ও প্রকৃতি বিনাশী পুজিবাদের প্রাণ ভোমরা।

লেখাটির ফেইসবুক ভার্সন পড়তে চাইলে এইখানে ক্লিক করুন

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Feeling social? comment with facebook here!

Subscribe to
Newsletter