ক্যু ব্যর্থ হওয়ায় ইসলামপন্থীদের উচ্ছাস!

তুরস্কের ক্যু নিয়ে নানা পক্ষের রিয়্যাকশন দেখে বিনোদিত হচ্ছিলাম। প্রথমে দেখলাম স্যেকুলারদের উচ্ছ্বাস। ক্যু ব্যর্থ হওয়ার পরে কিছু ইসলাম পন্থীদের উচ্ছ্বাস। স্যেকুলারদের কাছে এরদোগান খারাপ; কারণ সে নিজামির রায়ের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছিল; ইসলাম পন্থীদের একাংশের কাছে (মুলত জামাত) ভালো কারণ ও ঐ একটা। এরপর যখন জানা গেল তুরস্কের স্যেকুলারেরাও এরদোগানের পক্ষে দাঁড়িয়েছে; তখন দেখলাম স্যেকুলারা বিহব্বল। বিহব্বলতা বাড়ে আরো যখন অনলাইনে ছবি আসে মিনি স্কার্ট পরা তরুণী পতাকা হাতে মিলিটারি ব্যারিকেইড ভাঙ্গার নেতৃত্ব দিচ্ছে।

এরপরে আসলো ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। এরদোগানই এই ক্যু ঘটিয়েছে।

আজকে আবার বিভ্রান্তি বাড়ছে যখন দেখছে এরদোগান আমেরিকাকে দায়ী করছে ক্যু এর জন্য।

বাংলাদেশের কচি ও বুড়া বুদ্ধিজীবীরা নানা ভাবে গোজা দিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু আরেকটা তথ্য এসে সবকিছু গুবলেট করে দিচ্ছে। গোজা দিলেও মিলছে না। কারণ ষাটের দশকের বাম ঘড়ানার বুদ্ধিজীবীদের ইন্টেলেকচুয়াল টেইমপ্লেট আজকের দুনিয়ায় অচল।

আমি আগেও একটা লেখাতে বলেছিলাম, তুরস্ক হচ্ছে মুসলিম দুনিয়ার সাথে ইউরোপের বাফার স্টেইট। তাই তুরস্কে একটা পশ্চিমা মুখী কালচার গড়ে তোলার প্রজেক্টেই কামাল আতাতুর্ক এর উত্থান। আর এই প্রজেক্টের এজেন্ট ছিল তুর্কি সামরিক বাহিনী। সেই থেকে তুরস্কের সামরিক বাহিনী আর স্যেকুলারিজম মিলে মিশে একাকার হয়ে ছিল। এই স্যেকুলারিজমকে পলিটিক্যাল স্যেকুলারিজম ভেবে ভুল করবেন না। ঠিক যেমন এরশাদের ইসলাম কে ইসলাম ভেবে ভুল করা উচিৎ নয়। শিশুকালের পড়া নজরুলের কবিতার “কামাল তুনে কামাল কিয়া ভাই” যদি এখনো মাথায় ঢুকে থাকে সেটা ঝেড়ে ফেলুন।

এভাবেই তুর্কি সামরিক বাহিনী একটা পলিটিক্যাল ফোর্স হিসেবে ভুমিকা রাখতে শুরু করে। যার গায়ে ছিল স্যেকুলারিজমের জামা। সঙ্গতভাবেই এই পলিটিক্যাল ফোর্স তার হেজিমনি বা কর্তৃত্ত হারাতে থাকে আর ডুবে যেতে থাকে দুর্নীতিতে। পশ্চিম আর আস্থা পাচ্ছিল না এই স্যেকুলার জামা পরা সামরিক তন্ত্রের উপর। কারণ এই বাফার স্ট্যেইট ফেইল করলে বিপদ সরাসরি তার ঘাড়ে এসে পড়বে। এটা বছর বিশেক আগের ঘটনা। তারা খুজতে থাকে নতুন অ্যালাই। পায় একেপিকে।

সেই সময় থেকেই এরদোগানের দলের উত্থান। এরদোগানের দল ইসলাম পন্থী এতে কোন সন্দেহ নাই, কিন্তু ইসলামপন্থী যতগুলো রাজনৈতিক দল পৃথিবী দেখেছে তার মধ্যে সবচাইতে লিবারাল। পশ্চিম বা ইউরোপ সখ্য গড়ে তোলে এরদোগানের দলের সাথে। এরদোগানের দলের একটা লিবারেল ট্রান্সফর্মেশন হয়। এই ট্রান্সফর্মেশনটা হয় ইউরোপের চাহিদা আর একেপির অ্যাম্বিশন একসাথে মিলেই। ২০০২ সালে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে একেপি তুরস্কের ক্ষমতায় আসে। এর আগে একেপির কোন নামই ছিলনা।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন তুরস্কের পুর্ণ সদস্যপদ দেয়ার জন্য একটা রোড ম্যাপ দেয়। এরদোগান সেই রোড ম্যাপ ধরে চলছেন। এবং দলকে আরো আরো লিবারেল করছেন। কিন্ত্রু এরদোগান তার ইসলামী জামা ছুড়ে ফেলেনি; তাই মাঝে মাঝে কিছু কম ঝুকিপুর্ন আবেগী জায়গায় মতামত রেখে দেখায়, দেখ আমার জামাটা কিন্তু আছে। এভাবেই সে নিজামী প্রসঙ্গে মত রেখেছে।

এরদোগান দুর্নিতি নিয়ন্ত্রনে আনায় তুরস্কের অর্থনিতি সবল হয়েছে এটাও দল নির্বিশেষে এরদোগানের জনপ্রিয়তার মুলে।

কথায় আছে না; “খাইসলত যায় না ধুলে”। তুরস্কের স্যেকুলার আর্মির অবস্থিস্টাংশ তার খাইসলতের দোষে মনে করেছিল, আগেও তো কতবার ক্যু করলাম, এবারও ফেলায়ে দিব। সে বুঝতেই পারেনি সমাজ আর রাষ্ট্রে একটা পরিবর্তন ঘটে গেছে। দুনিয়া যে আর আগের মত নাই; যার আশির্বাদে এতদিন রুস্তমি করেছে সেই গডফাদার অনেক আগেই মাথার উপর থেকে হাত সরিয়ে নিয়েছে; সেটা তার এন্টেনায় ধরা পড়েনি।

যেমনাভবে বাংলাদেশের ডেট এক্সপায়ার্ড স্যেকুলারদের এন্টেনায় অনেক কিছুই ধরা পরেনা।

অবশ্য জামাতের কাছে এরদোগান খুব প্রিয়। তারা তুরস্ককে মডেল মনে করে। তাদের আলাপে “তুরস্ক মডেলের” কথা শোনা যায়। তারাও বিবেচনায় নেয় না তুরস্ক আর বাংলাদেশের বাস্তবতা এক নয়। যেই বাস্তবতায় একেপির উত্থান সেই বাস্তবতা বাংলাদেশের নয়। মডেল অনুসরন করার খেসারত বাংলাদেশের বামপন্থীরা দিয়েছে। যার মাথায় মডেল ঢুকবে; সে আবার খেসারত দিবে।

মস্কোতে বৃষ্টি হলে আগে যেমন সিপিবি মাথায় ছাতা দিত, তেমনি তুরস্কের বৃষ্টিতে জামাতের মাথায় ছাতা দেয়াতে ওই কথাটা আবার মনে এলো। সাগরপারের বৃষ্টিতে বাঙালির মাথায় ছাতা একটা লাগেই, সেটা মস্কোর জন্য হোক আর টার্কির জন্য হোক।

লেখাটির ফেইসবুক ভার্সন পড়তে চাইলে এইখানে ক্লিক করুন

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Feeling social? comment with facebook here!

Subscribe to
Newsletter