কেন নয়ন চ্যাটার্জি ধরণের আইডি ওয়ালাদের পথ বিপদজনক ও তার বিরোধীতা করি?

এটা ভাবার কোন কারণ নেই যে মাঝে মধ্যে এই আইডি গুলো আমার বিরুদ্ধে লাগে সেজন্যই আমি এই আইডির বিষয়ে লিখছি। লেখার কারণটা পলিটিক্যাল। এই ভূখণ্ডে দীর্ঘকাল থেকেই হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক সন্দেহ অবিশ্বাস আর রক্তাক্ত সংঘাতের ইতিহাস আছে। অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করলে নির্মোহ ভাবে বলতে হবে উভয় সম্প্রদায়ের লজ্জার ইতিহাস আছে। এখন এই ইতিহাস খোঁচাখুচি করলে কি আমরা সামনে এগুতে পারবো? নাকি অতীত ইতিহাসের শিক্ষা নিয়ে সামনের দিনগুলো তৈরি করবো?

কোন সন্দেহ নেই ইতিহাসের সেই কলঙ্কজনক অধ্যায়গুলোকে নিয়ে খোঁচাখুঁচি যারা করে আর পারস্পরিক ঐক্যের বদলে বিভেদের রাস্তা যারা রচনা করে অথবা ভারত-বাংলাদেশ দুই রাষ্ট্রের স্বার্থের সংঘাত আছে বলে বিশেষত একালে সম্পর্ককে দাস অবস্থায় নিয়ে গিয়েছে বলে জনগণের ক্ষোভকে হিন্দু-মুসলমানের বিরোধ হিসাবে তুলে ধরতে চায় তাদের উদ্দেশ্য মহৎ নয়। হিন্দুরা খারাপ আর মুসলমানেরা ভাল বলে তুলে আকার দিতে হবে? সোজা কথা এটা দুই রাষ্ট্রস্বার্থের সংঘাত। ফলে এটা হিন্দুর চেয়ে মুসলমান অথবা মুসলমানের চেয়ে হিন্দুর ভাল বা মন্দের ইস্যুই নয়।

এটা ঠিক যে আমরা ভারতের বাংলাদেশ নীতির ঘোরতর বিরোধী। সামনের দিনগুলোতে এগুতে হলে এই ভূখণ্ডের সকল মানুষকে তার ধর্ম বর্ণ জাত পরিচয় থাকা সত্ত্বেও একটি অভিন্ন রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী বা পলিটিক্যাল কমিউনিটি হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। সে তার সমস্যায় তার সম্প্রদায়ের সদস্য হিসেবে নয় বরং একটা একক পলিটিক্যাল কমিউনিটির সদস্য হিসেবে সে তার মতামত রাখবে। এখন যদি একজন হিন্দু বা মুসলমান তার হিন্দু বা মুসলমান পরিচয়ে হিন্দুস্বার্থ অথবা মুসলমানস্বার্থ বলে তার সমস্যাকে উত্থাপন করে আর হিন্দু বা মুসলমান কায়দায় সেই সমস্যার সমাধান দাবী করে তাহলে এটা বিভেদাত্মক বা যেটাকে আমরা প্রচলিত অর্থে সাম্প্রদায়িক বলি।

নয়ন চ্যাটার্জী ভারত রাষ্ট্রের নেতা ও শাসকের নীতি ও রাজনীতির বদলে হিন্দু সম্প্রদায়ের সমালোচনা করছেন। আবার সেটাও উত্থাপন করে নিজ মুসলিম পরিচয় থেকে, নাগরিক পরিচয় থেকে নয়। তাই এটা বিভেদাত্মক। ভারত রাষ্ট্রের নেতা ও শাসকের নীতি ও রাজনীতির সমালোচনা করতে গিয়ে তাদের হিন্দুত্ব ধারণার অন্তসারশুণ্যতা ও শয়তানি গুলোও তুলে ধরা যেতে পারে; তাদের ইসলামবিদ্বেষ নিয়েও কথা তুলা যেতে পারে। কিন্তু সেটা হিন্দুরা খারাপ আর মুসলমানেরা ভাল – এমন পাটাতন তৈরি করে বলা যাবে না। সাম্প্রতিক সময়ের হিন্দু সম্প্রদায়ের নানা ক্রিটিক করাই যায়, সেটা মুনতাসির মামুন থেকে শুরু করে বদরুদ্দীন উমর পর্যন্ত করেছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশের হিন্দুদের বিজেপি রাজনীতির দিকে হেলে পড়া, প্রভাবিত হওয়া নিয়ে যার ফলে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভেদাত্মক বা সাম্প্রদায়িক আচরণ আমরা এখন লক্ষ্য করছি। কিন্তু সেটার ক্রিটিক হতে হবে নাগরিক হিসেবে বা পলিটিক্যাল কমিউনিটির সদস্য হিসেবে, নইলে এই অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগের উতোর চাপান অনন্তকাল ধরে চলবে এবং আমরা পলিটিক্যালি কোথাও পৌছুবো না।

ভারতের বিজেপির এই দেশের হিন্দু সম্প্রদায় নিয়ে তার বিশেষ কিছু রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চায়। হিন্দু সম্প্রদায়ের একাংশ এই চক্রে বুঝে হোক বা না বুঝে হোক ঢুকে পরেছেন। বাংলাদেশে হিন্দু নিগ্রহ ভারতে বিজেপির মুসলমান বিরোধী রাজনীতির পালে হাওয়া যুগাবে, এটা তাদের অনুমান। দৃশ্যমান কোন রাজনৈতিক সাফল্য না থাকায় এবং বরং নানা রাজনৈতিক আছাড় খেতে থাকা মোদী সরকার পরবর্তী নির্বাচনে প্রবল মুসলমান বিরোধী শ্লোগান তুলে নির্বাচনি বৈতরণী পার হতে চাইবে। সেই মুসলমান বিরোধিতার পাটাতন তৈরি করতে এক উপাদান হবে বাংলাদেশের হিন্দু নিগ্রহের চিত্র দিয়ে। আর এই হিন্দু বিরোধিতার সহায়ক পরিস্থিতি তৈরি করছে নয়ন চ্যাটার্জী, আর এটা যে শেষতক বিজেপিকে সাহায্য করবে এতে কি আর কোন সন্দেহ আছে?

হিন্দু বিরোধীতা আর ভারত বিরোধিতা এক করে ফেলা যাবে না। ভারত বিরোধীতা মানে ভারত রাষ্ট্রের নেতা ও শাসকের নীতি ও রাজনীতির বিরোধীতা। তাদের বাংলাদেশ নীতির বিরোধিতা। এই সহজ বিষয়টাকে গুলিয়ে দিয়ে যারা হীন সাম্প্রদায়িক স্বার্থ চরিতার্থ করতে চায়, তারা দুরাত্মা, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের শত্রু। এদের বর্জন করুন, এদের থেকে দুরে থাকুন।

লেখাটির ফেইসবুক ভার্সন পড়তে চাইলে এইখানে ক্লিক করুন

 

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Feeling social? comment with facebook here!

Subscribe to
Newsletter