‘ইসলামিক বিজ্ঞান’ প্রসঙ্গ-১

কয়েকদিন আগে আমার লেখা নৌটে “ইসলামিক বিজ্ঞান” শব্দ যুগল নিয়ে বেশ বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিতর্ক স্বাস্থ্যকর চলুক বিতর্ক। কিন্তু শব্দ যুগলের জন্মদাতা আমি নই। বেশ সরবেই এই শব্দ যুগল আকাডেমিক মহলে বর্তমান। যাই হোক প্রধাণ আপত্তি এসে দাঁড়িয়েছে ধর্মের নামে এভাবে বিজ্ঞানের ট্যাগিং চলে কিনা? প্রশ্নটির মেরিট আছে যদি ধর্ম মানে আমার কাছে একাট্টা কিছু একটার সংজ্ঞা থাকে এবং পশ্চিমা ধর্মই ধর্মসমূহের একমাত্র স্টান্ডার্ড হয়। ধর্ম বিষয়টির যে বহুমুখী বিচিত্র সৃজনশীল এলাকা আছে সেটাকে অস্বীকার করলে নিশ্চয় প্রশ্নটির মেরিট আছে। ধর্ম হিসেবে ইসলামের মৌলিক আকিদাহ র (প্র্যাকটিস) বিষয়টার তাৎপর্য বুঝতে না চাইলে নিশ্চয় প্রশ্নটার মেরিট আছে। টমাস কুনের লেখার সাথে যারা পরিচিত তাঁরা জানেন যে এক একটি ঐতিহাসিক অবস্থায় জ্ঞান ও বিজ্ঞানের চর্চার অগ্রগতি ঘটে এক-একটি আদিকল্পকে (প্যারাডাইম) আশ্রয় করে। তারই ভিত্তিতে একেকটি বৈজ্ঞানিক গোষ্ঠী বা ঘরানা গড়ে ওঠে, তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক চিন্তা ও পরীক্ষা চলে তার আদর্শে রচিত নানা মডেল বা প্রতিকল্পকে কেন্দ্র করে। সেইসব চিন্তার ফল আবার বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানগুলির উদ্যোগে ঐ আদিকল্পটিকেই প্রচার করে বিজ্ঞানের নানা শাখায়। এরপরে এমন সময় আসে যখন নতুন প্রশ্ন আর সমস্যার উত্তর বা সমাধান ঐ আদিকল্প থেকে আর পাওয়া যায়না। তখনই সেই পুরনো আদিকল্প সংকটে পরে এবং নতুন আদিকল্প তাকে প্রতিস্থাপিত করে। এভাবেই মানুষের জ্ঞান ও সভ্যতা অগ্রসর হয়। এটা শুধু বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেই সত্য নয় জ্ঞানকাণ্ডের যেকোন শাখার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। গ্রীক ম্যাথামেটিক্স বা নিউটনিয়ান ফিজিক্স এমনই দুটো আদিকল্প বা প্যারাডাইম। আদিকল্প বা প্যারাডাইম হিসেবে ইসলাম কাজ করেছে সেটা ঐতিহাসিক সত্য। সেই প্যারাডাইম আজকের সময়ে প্রাসঙ্গিক কিনা সেই আলোচনা নিশ্চয় হতে পারে, কিন্তু প্যারাডাইম বা আদিকল্প হিসেবে ইসলামের ভুমিকার অস্বীকার আদতে ইতিহাসের অস্বীকার এবং সাম্প্রদায়িকতার দোষে দুষ্ট।

Share

Feeling social? comment with facebook here!

Subscribe to
Newsletter