বেশ কিছুদিন থেকে ছাড়া ছাড়া ভাবে লক্ষ্য করলেও ইদানিং বেশী লক্ষ্য করছি, আই এস কে বানিয়েছে তার নানা বয়ান। কেউ বলছেন আই এস মোসাদ বানিয়েছে স্বয়ং বোগদাদি মোসাদের ট্রেইনিং পেয়েছে, কেউ বলছে সি আই এ বানিয়েছে। কেউ বলছে এটা মুসলমানদের ছোট করার চক্রান্ত। প্রত্যেকেি তার দাবীর সপক্ষে নানা প্রমাণ হাজির করছে। কয়েকদিন আগে ইজরায়েলি গোয়েন্দা ভাষ্য অনুসারে ইজরায়েল সিরিয়াতে আই এসের পরাজয় চায়না ঘোষণা দেওয়ায় আরো এই প্রচারণা তুঙ্গে উঠেছে।
এই ধরণের নানা প্রচারনা বাংলাদেশে আগেও ছিল যেমন জাসদ ভারতীয় গোয়েন্দা “র” এর সৃষ্টি ইত্যাদি। এই ধরণের ব্যাখ্যা মুলত সত্তর দশকের বামপন্থীদের ষড়যন্ত্র তত্ত্বের মতো। তারা উস্টা খাইলেও কাপা কাপা গলায় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে দোষ দিয়ে দায় সারতো। এতে এক ধরণের আরাম আছে। মাথা না খাটানোর আরাম।
দুনিয়ার রাজনীতি এমন সরল ষড়যন্ত্র তত্ত্ব দিয়ে চলেনা। নানা শক্তি কখনো কখনো স্বল্পকালীন বা দীর্ঘকালীন কৌশলের অংশ হিসেবে একসাথে কাজ করে। পাড় শত্রু রাশিয়া অ্যামেরিকার সাথে হাত ধরে হিটলারকে পরাস্ত করেছিল। তাঁর মানে এই নয় যে অ্যামেরিকা আর রাশিয়ার পথ এক। ইজরায়েলের ট্যাক্টিক্যাল প্রয়োজনে সে মনে করে আই এস সিরিয়াতে পরাস্ত হলে তার জন্য সমস্যা তৈরি করবে। এর অর্থ এই নয় যে আই এস আর ইজ্রারেল এক মায়ের পেটের দুই ভাই।
যে কোন পলিটিক্যাল এন্টিটিটিকে তার নিজের ব্যাখ্যায় বুঝে নিতে হবে। সবাই সবার নিজের লক্ষ্য উদ্দেশ্য ঘোষণা করে। সেটার আলোকে সেই শক্তিকে বুঝে নেয়াটাই ম্যাচিউরিটি।
আই এস একটা গ্লৌবাল ফেনেমেনন। আপনি পছন্দ করুন আর না করুন আই এসের কাজ বৈশ্বিক রাজনীতির গতি প্রকৃতিকে নির্ধারন করে দিচ্ছে। তাই রাজনীতি বিশ্ব রাজনীতি নিয়ে যারা পপুলার গসিপ নয় বরং সিরিয়াস আলোচনা করে একটা সামগ্রিক বুঝের জায়গায় আসতে চান তাদের আই এস ফেনমেননটাকে ক্রিটিক্যালি বুঝে নিতে হবে। বুঝে নিতে হবে তার ধর্মীয় ও রাজনৈতিক লক্ষ্যকে, ইসলামের অন্যান্য ধারাগুলো আই এসের কী কী ক্রিটিক হাজির করেছে সেগুলোও জানতে হবে। তাহলেই বিশ্ব রাজনীতি আপনার কাছে অধিকতর স্পষ্ট হয়ে ধরা দেবে। আর কোন ঐতিহাসিক বাস্তবতায় আই এসের মত সংগঠনের জন্ম হয় সেটার মূল্যায়ন আরো বেশী জরুরী।
লেখাটির ফেইসবুক ভার্সন পড়তে চাইলে এইখানে ক্লিক করুন