পেশাদারিত্ব অটুট থাকুক সকল স্থানে।

চট্টগ্রামের সার্জন ডাঃ সুরমান আলীকে অপারেশনের সময় সুঁই রেখে দেয়ার অভিযোগে হাতকড়া পরিয়ে পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে। আদালত তাকে জামিন না দিয়ে জেলহাজতে চালান দিয়েছে। চট্টগ্রামের চিকিৎসকরা প্রাইভেট প্রাকটিস স্থগিত করেছেন। অ্যাডভোকেট রানা দাসগুপ্ত বলেছেন প্রাইভেট প্রাকটিস স্থগিত করা আইন বহির্ভূত। একজন চিকিৎসকের ভুল হতেই পারে, পেশাগত দায়িত্বে অবহেলা হতেই পারে, তিনি ফেরেস্তা নন। তার জন্য অভিযোগ করা যেতেই পারে। অভিযোগ প্রমাণ হলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের শাস্তি বা জরিমানা হবে। আমরাও চাই জনগণ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করুক এবং আদালতে এর মীমাংসা হোক। ঢালাও অভিযোগ শুনতে শুনতে আমরাও বিরক্ত। এবার সুশীল আইনজ্ঞরা, আমার কয়েকটা প্রশ্নের জবাব দিন। সুরমান আলীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ এখনো প্রমাণিত হয়নি, সেই বিচারে সে এখনো পর্যন্ত নির্দোষ। অভিযোগটি যদি সত্য বলে আদালতে প্রমাণিতও হয় তবে এটা ক্রিমিনাল অফেন্স নয় এটা মেডিক্যাল নেগ্লিজেন্স। কোন যুক্তিতে তাকে হাতকড়া পরানো হোল? হাতকড়া পরানোর সুনির্দিষ্ট আন্তর্জাতিক নীতিমালা আছে। সে নীতিমালায় বলা আছে, “ The use of handcuffs is amounts to such an assault and is unlawful unless it can be justified.” এই জাস্টিফিকেসন টা কীভাবে আসবে? আসবে লিগ্যাল গ্রাউন্ড এবং অবজেক্টিভ কন্ডিশন থেকে। অবজেক্টিভ কন্ডিশনটাও বলে দেয়া আছে, সেটা হতে হবে রিজনেবল, নেসেসারি এবং প্রোপোরশনেট। যদি অভিযুক্তের শক্তি প্রয়গে পালাবার বা পলায়ন চেষ্টার সম্ভাবনা থাকে, যদি অভিযুক্তের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ গুরুতর হয় যেমন হত্যা, সহিংসতা, সহিংস আচরণের ইতিহাস ইত্যাদি। কোন বিচারেই পুলিশ বাহিনী সুরমান কে হাতকড়া পরানোটা জাস্টিফাই করতে পারবে না। এটা তারা করেছে তাদের স্যডিস্টিক মানসিকতার পরিতৃপ্তির জন্য, আর জবাবদিহিতাহীনতার জন্য। আদালত তার পরেও জামিনের আবেদন বাতিল করে সুরমানের লিগ্যাল রাইটকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেছে। রানা দাসগুপ্ত এহেন আচরণের মধ্যে আইনসিদ্ধতা দেখতে পেয়েছেন, শুধু আইনসিদ্ধতা দেখতে পাননি চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্রাকটিস স্থগিতের সিদ্ধান্তের। চিকিৎসকরা তাঁদের কর্মস্থলে কাজ করছেন ঠিকই। কোন চিকিৎসক প্রাইভেট প্রাকটিস করতে বাধ্য নন। নিজস্ব সময়ে পরিবারকে এবং নিজেকে বঞ্চিত করে একটু অতিরিক্ত উপার্জনের জন্য যে প্রাণপাত পরিশ্রম করেন চিকিৎসকরা; সেই অতিরিক্ত উপার্জন না করার জন্য নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার চিকিৎসকদের আছে। সুরমান কে হাতকড়া পরানোর ব্যাখ্যা পুলিশকে দিতে হবে, অবিলম্বে জামিন মঞ্জুর করতে হবে, আর রানা দাসগুপ্তদের অর্থহীন কথা বলা বন্ধ করতে হবে। আইন আমরাও জানি। রানা দাসগুপ্ত, প্রয়োজনে আদালতে নিজের পক্ষে নিজেই যুক্তি তুলে ধরবো। দরকার হলে আইন পড়ে, আপনাদের সাহায্য ছাড়াই নিজেরদের লিগ্যাল রাইট প্রতিষ্ঠা করবো। এবার আপনারা একটু ডাক্তারী শিখে নিজের চিকিৎসা নিজেরা করেন, আমরা একটু বাঁচি।

Share

Feeling social? comment with facebook here!

Subscribe to
Newsletter