বৃটিশ শাসনের অবসানে ও মুসলমান সমাজের লড়াই।

কলকাতাবাসী এক ফেসবুকারের লেখা দৃষ্টিগোচর হল। লেখার মুল বক্তব্য ব্রিটিশদের ভারতের হিন্দুরা একাই তাড়িয়েছে। হিন্দুরা মুসলমানদের ডেকেছিল কিন্তু মুসলমানেরা হিন্দুদের ডাক শুনে এই লড়াইয়ে যোগ দেয়নি, তাই ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে মুসলমান শহীদ নাই।

বড়ই কৌতুহলউদ্দীপক ইতিহাস চর্চা। তাদের কাছে তিতুমির, নুরুলদিন ও শহীদ নন, শহীদ নন সিপাহী বিদ্রোহের মুসলিম শহিদেরাও।

বস্তুত ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে মুসলমান সমাজের প্রতিরোধ এবং বিদ্রোহ  রক্তাক্ত সামরিক যুদ্ধ এবং কৃষক বিদ্রোহের মধ্যে দিয়ে সংগঠিত হয়েছিল। এই রক্তাক্ত বিদ্রোহগুলো ব্রিটিশ রাজকে এতই ভীত করেছিল যে ভাইসরয় লর্ড মেয়ো প্রশ্ন করেছিলেন, “ভারতীয় মুসলমানগণ কি তাদের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে বাধ্য?”

উইলিয়াম হান্টার নামের এক ব্রিটিশ আই সি এস অফিসার মুসলমানদের সাথে ব্রিটিশদের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের কারণ অনুসন্ধান করে একটা বই লিখেছিলেন। নাম দ্য ইন্ডিয়ান মুসলমানস।

একটা ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর বিধর্মী রাজশক্তির কাছে সাম্রাজ্য ও রাজনৈতিক ক্ষমতা হারানোর পর তাদের ক্রোধ, অভিমান এবং অভ্যুথানের লড়াইকে কীভাবে সামরিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কৌশলে দমন করা হয়েছিল সেটার একটা অসাধারণ দলিল এই বইটি।

একটা খুব ইন্টারেস্টিং অংশ আছে সোয়াত অঞ্চলে বিদ্রোহ সম্পর্কে। এই সোয়াত উপত্যকা যে সেই সুদুর ব্রিটিশ আমল থেকেই শাসকদের মাথাব্যাথা ছিল সেটা জেনে আমোদিত হয়েছি। তিনি সোয়াত সম্পর্কে লিখছেন।

“সোয়াত অঞ্চলের আধ্যাত্মিক রাজ্য, বা যাকে সোয়াতের মুসলমান ধর্মীয় এলাকা বলে অভিহিত করা যায় তার মধ্যে ৯৬ হাজার লোকের বাস। এদের প্রত্যেকেই উত্তরাধিকার সুত্রে ব্রিটিশ আক্রমনের আশঙ্কার মধ্যেই বড় হয়েছে, এবং এই ভাবনা তাদের মধ্যে জন্মের পর থেকেই প্রথিত যে বিধর্মীদের সঙ্গে লড়াই করতে গেলে একজন ধর্মগুরু থাকা ভালো, যে ধর্মগুরুর পতাকাতলে মৃত্যুবরন করলে শহীদ হবার আনন্দ লাভ করা যাবে। আমরা ১৮৬৩ সনের অভিযানে অনেক মুল্য দিয়ে শিখেছিলাম যে ধর্মান্ধদের শিবিরের বিরুদ্ধে অভিযানের অর্থ, পৃথিবীর সবচেয়ে সাহসী জনগোষ্ঠীসমূহের তিপান্ন হাজার লড়াকু লোকের সঙ্গে যুদ্ধ করা।”

সেই সময়েও সোয়াতের মানুষের সাথে লড়াই করতে গেলে ব্রিটিশ শক্তির রক্ত হিম হয়ে আসতো সেটা পরিস্কার।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Feeling social? comment with facebook here!

Subscribe to
Newsletter