ভারতবর্ষে মুসলমানরা আসার অনেক আগেই পর্দা বা অবরোধ প্রথা ছিল। কৃষিভিত্তিক সমাজের সাথে মেয়েদের যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মেয়েরা গৃহবন্দিত্ব বরন করতে বাধ্য হয়। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকেই সম্রাট অশোকের শিলালিপিতে ‘অবরোধবসিনী’ ও ‘অসূর্যম্পস্যা’ শব্দ দুটি পাওয়া যায়। রামায়নে সীতা রামের সঙ্গে বনে যাবার সময় বিলাপ করে বলছে, ‘যার মুখ কেউ কখনো দেখেনি তিনি আজ পায়ে হেঁটে বনে যাচ্ছেন’।
জাতকের কয়েকটি গল্পে পাওয়া যায় রাজমহিষীরা আচ্ছাদিত চতুর্দোলায় চড়ে রাজপথে বের হয়েছেন। প্রাচীন ভারতে অবরোধ হয়ে উঠেছিল অভিজাত ভারতের যৌন শুচিতার লক্ষণ। ‘মৃচ্ছকটিকে’ গণিকা বসন্তসেনা যখন কুলবধূর মর্যাদা পায় তখন অবরোধের চিহ্ন হিসেবে তার মুখ ঢাকা পড়ে ঘোমটায়। আবার ‘ললিতবিস্তারে’ বুদ্ধের বাগদত্তা গোপা পর্দা আরোপিত শুচিতা উপেক্ষা করে বলছিলেন, ‘স্বামীর প্রতি বিশ্বস্ত থাকার জন্য আমার মুখ ঢাকার কোনো দরকার নেই’।
মেয়েদের পর্দা শুধু আরবের সংস্কৃতিই নয়, প্রাচীন ভারতেরও বটে। আর এই সংস্কৃতির উদ্ভবের সাথে ধর্ম নয় বরং যুক্ত আছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বিচ্ছিন্নতার ইতিহাস।
তথ্যসূত্র: The Position of Women in Hindu Civilization, from Prehistoric Times to the Present Day, Anant Sadashiv Altekar; সুকুমারী ভট্টাচার্য, ধ্রুপদী সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাস; প্রাচীন ভারতে নারী, রত্নাবলি চট্টোপাধ্যায় ও প্রীতা ভট্টাচার্য।।
One thought on “ভারতবর্ষে মুসলমানেরা আসার অনেক আগেই পর্দা বা অবরোধ প্রথা ছিল।”
সমৃদ্ধ করলাম নিজেকে লেখাগুলো পড়ে।