১৯৭১ এর সংগঠিত বর্বরতার জন্য কী পাকিস্তান আনুষ্ঠানিক ভাবে ক্ষমা চেয়েছিলো?

১৯৭১ এ পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতার জন্য পাকিস্তানকে ক্ষমা চাইতে হবে বলে আওয়ামী লীগারেরা মাঠ গরম করে। কিন্তু পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চেয়েছিলো কী?

হ্যা চেয়েছিলো। আমি এর আগে মুজিব সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডঃ কামাল হোসেনের মুখে একটা বিবৃতি শেয়ার করেছিলাম।

১৯৭৪ এর ৫-৯ ই এপ্রিল বাংলাদেশ,-ভারত-পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রিদের ত্রিপক্ষীয় সভা অনুস্থিত হয়। সেই সভায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন মুজিব সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডঃ কামাল হোসেন। এই সভার অন্যতম প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীর বিচার। এই সভার পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রি বলেন, ” (My) Government condemned and deeply regretted any crimes that may have been committed.”

‘যে অপরাধ সংগঠিত হয়েছে (আমার) সরকার তার নিন্দা জানাচ্ছে এবং গভীর দুঃখপ্রকাশ করছে”

এদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীও বলেন,

“to forgive and forget the mistakes of the past in order to promote reconciliation.

“মিটমাট ত্বরান্বিত করার জন্য অতীতের সমস্ত ভুল ক্ষমা করে দিন এবং ভুলে যান”। এই দুই বক্ত্যব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার সিদ্ধান্ত নেয়

“not to proceed with trials as an act of clemency”

“ক্ষমাশীলতার নিদর্শন স্বরুপ এই বিচার প্রক্রিয়ায় (বাংলাদেশ) আর অগ্রসর হবে না”

দেশে ফিরে ১১ই এপ্রিল ১৯৭৪ ডঃ কামাল হোসেন বলেন,

“পাকিস্তান বাংলাদেশে যে অপরাধ করেছে তা প্রতিষ্ঠা করা, পাকিস্তান কর্তৃক তার সব অপরাধকে স্বীকার করানো ও বাংলাদেশের বিচার অনুষ্ঠানের সমর্থতা প্রতিষ্ঠা করাই ছিল প্রস্তাবিত যুদ্ধাপরাধী বিচারের মুখ্য উদ্দেশ্য। বর্তমান ক্ষেত্রেও পাকিস্তান তার অপরাধ স্বীকার ও ক্ষমা প্রার্থনা করায় একই লক্ষ্য অর্জন করা গেছে।”

ডঃ কামাল হোসেনের এই বক্তব্য পরদিন দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত হয়।

এখানে লক্ষ্য করুন, মুজিব সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী প্রকাশ্যে বিবৃতি দিচ্ছে যে “পাকিস্তান অপরাধ স্বীকার করেছে ও ক্ষমা চেয়েছে”।

তাহলে মুজিব সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী কি সেদিন দেশের জনগনকে মিথ্যা কথা বলেছিল?

আচ্ছা ধরে নিলাম, কামাল হোসেন তখুনি জানতো তিনি আওয়ামী লীগে থাকবেন না, তিনি এটাও জানতেন যে ২০১৮ সালে তিনি আওয়ামী বিরোধী জোটের নেতা হবেন। তাই আওয়ামী লীগকে বিপদে ফেলতে এই কথা বলেছিলেন।

মেনে নিলাম।

এইবার আসেন আমরা বিদেশী সংবাদপত্র থেকে আরো কিছু প্রমাণ দেখি। আমি প্রমাণ হিসেবে নিউ ইয়র্ক টাইমসের দুটো সংবাদ আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। দুটো সংবাদই আপনি নিউ ইয়র্ক টাইমসের অনলাইন আর্কাইভে পাবেন।

১৯৭৪ এর জুন মাসে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ভুট্টো ঢাকায় আসেন। ভুট্টোকে ঢাকায় উষ্ণ অভ্যর্থনা দেয়া হয়।তিনি প্রকাশ্যে ১৯৭১ এর পাকিস্তানের কৃত অপরাধের জন্য ক্ষমা চান। তিনি বলেন,

“আপনাদের উপরে স্বার্থপর অবিবেচক সামরিক কর্তৃত্ব লজ্জাজনক দমনপীড়ন ও অকথ্য অপরাধ করেছে। আমি পাকিস্তানের জনগনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের জনগনের জন্য শুভেচ্ছা বয়ে এনেছি। আমাদের দয়া করে তাদের (ইয়াহিয়া খান) সাথে এক করে দেখবেন না, যারা শুধু আপনাদের নয় আমাদের উপরেও তখন শাসন করতো। আমরা আপনাদের বেদনা, কষ্টকে অন্তর দিয়ে অনুভব করি। আপনাদের ক্ষতির জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। আমাদের শেষ নবীর নাম নিয়ে আমি আপনাদের কাছে বলতে চাই, আমরা আমাদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত (তওবা করছি)।”

ভুট্টোর এই বক্তব্যের সময়ে উপস্থিত ছিলেন শেখ মুজিব ও মন্ত্রী পরিষদের অন্যান্য সদস্য। তাদের অনেকেকেই আবেগতাড়িত হয়ে চোখ মুছতে দেখা যায়। ভুট্টো তার রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্যে এভাবেই আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চায়। বাংলাদেশের আর্কাইভে এই গুরুত্বপুর্ণ ভিডিও ও অডিও থাকা উচিত।

ভুট্টোর সফরের সময়ে ডিনার স্পিচে শেখ মুজিব বলেন, “আসুন আমরা অতীতের তিক্ততা এবং শত্রুতা ভুলে যাই এবং আমাদের জনগনের জন্য আশা ও সমৃদ্ধির নতুন অধ্যায় শুরু করি।”

সঙ্গত কারোনেই ভারত ভুট্টোর এই সফরকে ভালোভাবে নেয়নি।

দুই দেশের দুই নেতার এহেন ঐতিহাসিক উপলদ্ধির পরে শেখ মুজিবের নিজের দল কোন আক্কেলে পাকিস্তানকে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা করতে বলে? তাদের কি আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা চাওয়ার কোন মুখ আছে? নাই? কোনদিন তারা কুটনৈতিকভাবে চাইতেও পারবে না, কারণ এই বিষয়টা ১৯৭৪ এই মীমাংসিত হয়েছে।

তার পরেও আওয়ামী লীগ তাদের মুর্খ দলদাসদের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়ার মুলা ঝুলিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অনন্ত ঘৃণা জাগরুক রাখে।

লেখাটির ফেইসবুক ভার্সন পড়তে চাইলে এইখানে ক্লিক করুন

Share

5 thoughts on “১৯৭১ এর সংগঠিত বর্বরতার জন্য কী পাকিস্তান আনুষ্ঠানিক ভাবে ক্ষমা চেয়েছিলো?

  1. Really a good essential information ,,,
    But what a politics ,,, our politicians & media didn’t published these,,,

  2. Informative and important writings. It will help us to know the actual history and the actual condition of that time and also help us to make a good foreign policy. I am really glad to know this information and also about The Inter Dominion Agreement from you. Best wishes to you sir.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Feeling social? comment with facebook here!

Subscribe to
Newsletter