১৯৭৫ সালের ১৯শে জুন তারিখে বাকশালের কেন্দ্রীয় কমিটিতে বঙ্গবন্ধু একটা ভাষণ দেন। সেখানে তিনি বলেন, “আমি ফেরেশতা নই শয়তানও নই। আমি মানুষ, আমি ভুল করবোই। আমি ভুল করলে আমার মনে রাখতে হবে, আমি যদি রেকটিফাই করতে পারি, সেটাই আমার বাহাদুরি। ফেরেশতা নই যে সব কিছু ভালো হবে।”

সুত্রঃ বাংলাদেশ, জাতি গঠনকালে এক অর্থনীতিবিদের কিছু কথা, নুরুল ইসলাম, ইউ পি এল, পৃষ্ঠা ১০৯

ইন্টারেস্টিং বিষয় হচ্ছে আজকে যারা বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির ধারক ও বাহক বলে দাবী করে তারা নিজেরা নিজেদের মানুষকে ফেরেশতা আর অপরকে শয়তান হিসেবে হাজির করে। এমনকি নিজেদেরকে নির্ভুল বলেও দাবী করে। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান রাষ্ট্রপতি হবার আগে বলেছিলেন, তাঁর নেত্রী কোন ভুল করতে পারেন না। স্পষ্টতই এটা বঙ্গবন্ধুর আত্মউপলব্ধির সাথে সাংঘর্ষিক।

শুধু আমি স্যেকুলারকুলেরই দোষ দেই কীভাবে? ইসলামপন্থী রাজনীতিতেও এই একই ধারা বর্তমান। সেখানেও আছে এই একই প্রকল্প। তুমি আমার সাথে থাকলে খুব ভালো, না থাকলে তুমি খুব খারাপ।

মজিবুর রহমান মঞ্জু যাকে নিয়ে দুদিন আগে লিখেছিলাম, তিনি দেখি একই দুঃখে তাঁর সমালোচকদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, “আমার ত্রুটি যদি ধরিয়ে দেন তাহলে আপনার আমার দুজনেরই লাভ। আমার লাভ এইযে, আমার ত্রুটি সংশোধন হল আর আপনার লাভ হচ্ছে, আপনি পেলেন সংশোধনকারীর মর্যাদা ও সওয়াব।” তিনি তাঁর কথাটা তাঁর ভাষাতেই বলেছেন। তবে মানবিক ত্রুটি সম্পর্কে তাঁর এই উপলব্ধির প্রশংসা করতেই হয়।

এই মাটির পৃথিবীতে মানুষ- শয়তান বা ফেরেশতা কোনটাই নয়। সে রক্ত মাংসের জীব। তাঁর সমস্ত ত্রুটি আর অসম্পুর্নতা নিয়েই তাঁর প্রজাতি হিসেবে অনন্ত যাত্রা। আমরা কেউই পারফেক্ট নই, পারফেক্ট হয়ে উঠতে চাই। আমরা কেউই ভুলের উর্ধে নই। সেইকারনেই তো এমন একটা সমাজ আর রাষ্ট্র দরকার যেখানে আমরা আমাদের বিরুদ্ধ চিন্তার লোকের সাথেও কথা বলে বিতর্ক করে আমাদের মতপার্থক্যকে কমিয়ে আনার মতো একটা পরিবেশ তৈরি করবো।

এটাকেই তো বলে রিপাবলিক।

লেখাটির ফেইসবুক ভার্সন পড়তে চাইলে এইখানে ক্লিক করুন

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Feeling social? comment with facebook here!

Subscribe to
Newsletter