পাকিস্তানিদের আমি অবিশ্বাস করি, যখন তারা গোলাপ নিয়ে আসে, তখনও।- হুমায়ুন আজাদ

এই বক্তব্যই প্রমাণ করে উনি মুক্তিযুদ্ধ দেখেননি। দেখবেন কী করে তখন তো উনি পাকিস্তান সরকারের বেতন গুনতে ব্যস্ত ছিলেন। এই ভয়াবহ রেইসিস্ট প্রবচন এক দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত তৈরি করে চলেছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সেটার দায় কার? উনি জানেনই না কত পাকিস্তানি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দাঁড়িয়েছিল, নির্যাতিত হয়েছিল, গ্রেফতার হয়েছিল কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিল, কলম ধরেছিল, রাজপথে বিক্ষোভ করেছিল। সেইসব বন্ধুদের বাংলাদেশ ভুলে যায়নি। ১৩ জন পাকিস্তানিকে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সন্মাননা দেয়া হয়েছে।

পাকিস্তানের মালিক গোলাম জিলানীর পক্ষে তার মেয়ে আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী আসমা জাহাঙ্গীর যখন সম্মাননা নিতে মঞ্চে আসেন, তাকে বুকে টেনে নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু কন্যা সেই পাকিস্তানিদের অবিশ্বাস করেননি।

কিন্তু পাকিস্তানি ক্ষুদ্র শাসকদের সাথে বাঙালির লড়াইকে সুকৌশলে হুমায়ুন আজাদ পাকিস্তানের জনগনের বিরুদ্ধে বাঙালির জাতিগত ঘৃণায় পর্যবসিত করতে পেরেছেন।

হুমায়ুন আজাদ কাকে অবিশ্বাস করেন? বেগম নাসিম আখতার, বেগম তাহিরা মাজহার আলী, মালিক গোলাম জিলানী, সাংবাদিক ও কবি ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ, অধ্যাপক ও সাংবাদিক ওয়ারিস মীর, ১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধুর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পক্ষে অবস্থান নিয়ে চাকরিচ্যুত পাকিস্তান বিমানবাহিনীর পাইলট ও কবি আনোয়ার পীরজাদো। এজন্য সামরিক আদালতে তাকে সাত বছরের কারাদণ্ডও দেয়া হয়, বাংলাদেশের মানুষের ওপর গণহত্যা, নির্যাতন ও নিপীড়নের প্রতিবাদে কবিতা লিখে সামরিক আদালতে কারাদণ্ডের পাশাপাশি বেত্রাঘাত সহ্য করা মানবাধিকারকর্মী আহমদ সালিমকে, কবি হাবিব জালিব, পাকিস্তানি দার্শনিক একবাল আহমেদ, পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মীর গাউস বকস বিজেঞ্জো, কাজী ফয়েজ মোহাম্মদকে, একাত্তরে যিনি ছিলেন নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ও বঙ্গবন্ধুর সহযোগী, শামিম আশরাফ মালিক। তার স্ত্রী নাসিম আখতার, জাফর মালিক। কাকে?

আসলে উনি অবিশ্বাস করেন নিজেকে। নিজের পৌরুষকে, নিজের দেশপ্রেম কে, যে সময় তার যুদ্ধে যাবার কথা সেই সময় নিরাপদে পার করে দিয়ে হঠাৎ দেখলেন দেশ স্বাধীন। আর তো তিনি মুক্তিযোদ্ধা হতে পারবেন না। এখন উপায়? তাই আবিষ্কার করলেন বিখ্যাত প্রবচন, ” একজন মুক্তিযোদ্ধা চিরকাল মুক্তিযোদ্ধা নয়”। আর নিজের সেই অক্ষমতা ঢাকেন পর্বতপ্রমাণ ঘৃণা তৈরি করে। শুধু তাই নয় সেই ঘৃণার বিষ পরের প্রজন্মের মধ্যে সঞ্চারিত করে। যেন সেই ঘৃণার আড়ালে নিজের ভিরুতার ক্ষত ঢাকা পড়ে যায় চিরতরে।

বড়ই কামেল মানুষ ছিলেন তিনি।

লেখাটির ফেইসবুক ভার্সন পড়তে চাইলে এইখানে ক্লিক করুন

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Feeling social? comment with facebook here!

Subscribe to
Newsletter