আগামীর রিপাবলিকের কথা শুনে স্যেকুলারদের ভয় পাওয়ার কিছু নাই। আপনি সংখ্যায় বেশি বা কম হন, আপনি যে কোন ধর্মের হন, আপনি সাওতাল হন বা চাকমা হন, নির্বিশেষে সবাই সমান মানবিক মর্যাদায় সেই রিপাবলিকে থাকবেন।
আপনাদের সকলেরই কথা বলার স্পেস থাকবে। বরং এখনকার চেয়ে ভালোভাবে বলতে পারবেন (দুঃখিত কেবল কোন ধর্মবিদ্বেষ করতে দিতে পারবো না)। আর এখন তো পুলিশের পাহারায় কথা বলতে হচ্ছে, তখন পুলিশের পাহারা ছাড়াই কথা বলতে পারবেন। এই কথা বলার জন্য কেউ আপনাকে গুম করবেনা, ক্রস ফায়ারে মেরে ফেলবেনা। কাউকে তার চিন্তা বা বিশ্বাসের কারণে পাকিস্তান বা ভারতে চলে যাওয়ার নসিহত দেয়া হবেনা। জনগনের যে ক্ষমতা কেড়ে নেয়া হয়েছে সেই ক্ষমতা এবার তাঁরা ফিরে পাবে। আমরা বাঙালি নাকি বাংলাদেশী সেই কূটতর্কে কাউকে লিপ্ত হতে হবেনা, আমরা সবাই হবো বাংলাদেশ নামের এক অগ্রসর রিপাবলিকের গর্বিত নাগরিক।
এসব কিছু সম্ভব হবে কারণ কোন প্রাক-পরিচয়ের সুত্রেই (যেমন কোন জাতিবাদি সুত্রে) আমরা নাগরিক হব না। প্রত্যেকেই হবো সমান নাগরিক, সমমর্যাদা সম্পন্ন নাগরিক। কোন পরিচয়ের আড়ালে কাউকে নিজের অধিকার দাবী করতে হবেনা, রাষ্ট্রই নাগরিক হিসেবে আপনার সমান সুরক্ষা দেবে। আপনার ধর্ম পালনের অধিকার রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে। সমাজকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলা হবে। সমাজের সব বিতর্ক সমাজেই ফয়সালা করা হবে। মানুষ রাষ্ট্রের নয় সমাজের সমষ্টির অনুগত হবে। প্রতিটা জীবন মাত্রই সামাজিকভাবে থাকা জীবন, শেয়ার করা দেয়া নেয়ার জীবন হিসেবে গড়ে উঠবে। একথাগুলো স্মরণ রেখে আমরা সকলের সাথে এবার সামাজিক জীবন গড়ে তুলবো।
সাধারণত রাষ্ট্রের যেসব অঙ্গ গুলোর নিপীড়ক হয়ে উঠতে দেখা যায়। আগে থেকেই এগুলোর প্রতি সামাজিক বিশেষ নজরদারি বিশেষ চেক ও ব্যালেন্স ব্যবস্থা করে প্রয়োজনে সেগুলোকে কেটেছেটে ছোট করা হবে। সমাজে হেদায়েতি প্রতিষ্ঠানের চাপ তৈরি করতে হবে। শক্তিশালী গণ প্রতিরক্ষার জন্য বাহিনী গড়ে তোলা হবে, সক্ষম সকল তরুণ তরুণী পাবে সামরিক শিক্ষা।
আমাদের কোন নাগরিককে সীমান্তে খুন করার কারো সাহস হবেনা, আমাদের কোন নদীর পানিকে কোন রাষ্ট্র আঁটকে দেয়ার হিম্মত দেখাতে পারবেনা। কোন রাষ্ট্র তার ক্ষমতার কারণে অযাচিত আমাদের মাথার উপরে ছড়ি ঘুরানোর কথা কল্পনাও করতে পারবেনা।
মানুষ মানুষকে ভালবাসতে শিখবে, জীবনের ইতিবাচক দিক আর সম্ভাবনাকে তুলে ধরে, নেতি বা ঘৃণার চর্চা অসম্ভব করে তোলা হবে। মানুষ সমাজের মঙ্গল কামনাকে সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দেবে। তরুণ পাবে শিক্ষা, যৌবন পাবে কাজ আর বয়স্করা পাবে নির্ভরতা। মুরুব্বীরা হবেন সন্মানীয়, নারীরা যথাযোগ্য গুরুত্ব ও জ্ঞানে হবেন সন্মানিত। জীবন থেকে শঙ্কা, ভয়, কুট চিন্তা, অনিশ্চয়তা দূর হয়ে সকল নাগরিকের জীবন হয়ে উঠবে এক দারুণ এডভেঞ্চার।
বাংলাদেশ নামের ভূখণ্ড হয়ে উঠবে এক অমিত সম্ভাবনার নাম।
আসুন সেই অনাগত সময়ের জন্য, মুক্তিযুদ্ধের অমর তিন নীতি সাম্য, মানবসত্তার মর্যাদা আর ইনসাফের ভিত্তিতে সবাই এক আলোকিত ভবিষ্যতকে আলিঙ্গন করার জন্য প্রস্তুত হই। যেই রাষ্ট্র আমাদের গড়তে দেয়া হয় নাই, সেই রাষ্ট্র তৈরির জরুরী কাজে হাত দেই।
সৃষ্টিকর্তা আমাদের সেই অসমাপ্ত মহান কাজ করবার তৌফিক দান করুন।
লেখাটির ফেইসবুক ভার্সন পড়তে চাইলে এইখানে ক্লিক করুন