বাংলা ভাষা মুসলমানদের সৃস্টি

আজকে যে বাংলা ভাষায় কথা বলি তার উদ্ভব বা সৃস্টিই হয়েছিল মুসলমানদের অবদানে, এটা আজকে সকালে আমার স্ট্যাটাসে কমেন্ট করায় অনেকে চটেছেন। আসুন বাংলা ভাষার উৎস নিয়ে কিছু আলাপ করি।

সবচেয়ে প্রাচীনতম যে বাংলা ভাষার নিদর্শন তা চর্যাপদ। চর্যাপদ ছিলো শৌরসেনী প্রভাবিত অতি আদিম বাংলা যখন বাংলা ভাষার গঠন সুস্থির ছিলোনা। এখনো চর্যাপদের ভাষা বাংলা কিনা তা নিয়ে একাডেমিশিয়ানরা তর্ক করেন। এবিষয়ে স্বয়ং সুনীতিকুমার বলেছেন, চর্যাপদের ভাষা বাংলাই, তবু সংশয় কোন কোন মহলে থেকেই গেল। চর্যার শেষ পদাবলী গুলো রচিত হয়েছিলো ১২০০ সাল পর্যন্ত।

সুস্থিত আদি বাংলায় প্রথম রচনা বড়ু চণ্ডিদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন যা রচিত হয়েছিল চতুর্দশ থেকে পঞ্চদশ শতকে, মুসলমান শাসন তখন মধ্য গগনে।

বাংলা ভাষা মুসলমানের সৃস্টি এটা আমার কথা নয়। দীনেশচন্দ্র সেনের কথা। তিনি কী লিখেছিলেন সেটা দেখুন।

“মুসলমান আগমনের পূর্বে বঙ্গভাষা কোনো কৃষক রমণীর ন্যায় দীনহীন বেশে পল্লী কুঠিরে বাস করিতেছিল। বাঙ্গালা ভাষা মুসলমান প্রভাবের পূর্বে অতীব অনাদর ও উপেক্ষায় বঙ্গীয় চাষার গানে কথঞ্চিত আত্মপ্রকাশ করিতেছিল। পণ্ডিতেরা নস্যাদার থেকে নস্য গ্রহণ করে শিখা দোলাইয়া সংস্কৃত শ্লোকের আবৃত্তি করতে ছিলেন এবং ‘তৈলাধার পাত্র’ কিংবা ‘পত্রাধার তৈল’ এই লইয়া ঘোর বিচারের প্রবৃত্ত ছিলেন। সেখানে বঙ্গভাষার স্থান কোথায়? ইতরের ভাষা বলিয়া বঙ্গভাষাকে পণ্ডিতমণ্ডলী দূর দূর করিয়া তাড়াইয়া দিতেন, হাড়ি-ডোমের স্পর্শ হইতে ব্রাহ্মণেরা যেরূপ দূরে থাকেন বঙ্গভাষা তেমনই সুধী সমাজের কাছে অপাঙ্্ক্তেয় ছিল তেমনি ঘৃণা, অনাদার ও উপেক্ষার পাত্র ছিল। কিন্তু হীরা কয়লার খনির মধ্যে থাকিয়া যেমন জহুরীর অপেক্ষা করিয়া থাকে, বঙ্গভাষা তেমনই কোনো শুভদিন, শুভক্ষণের জন্য প্রতীক্ষা করিতেছিল। মুসলমান বিজয় বাঙ্গালা ভাষার সেই শুভদিন, শুভক্ষণের সুযোগ আনয়ন করিল। বঙ্গ-সাহিত্যকে একরূপ মুসলমানের সৃষ্টি বলিলেও অত্যুক্তি হইবে না।”

লেখাটির ফেইসবুক ভার্সন পড়তে চাইলে এইখানে ক্লিক করুন

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Feeling social? comment with facebook here!

Subscribe to
Newsletter