ওয়ারেন হেস্টিংস ভারতে কোম্পানি শাসনের ভীত তৈরির জন্য এক গুরুত্তপুর্ণ ব্যক্তি ছিলেন। উনি ছিলেন বাঙলা প্রেমিক; আর সেই সুবাদে উনি কিছু কিছু বাঙালি চরিত্র গ্রহণ করে নিজের বাঙালি করণ করেছিলেন। কীভাবে?
বাঙলা ছিল তাঁর প্রথম কর্মস্থল। উনি সেই সময় ফারসি শিখেছিলেন সমবয়সী নবকৃষ্ণ দেবের কাছে। গড়ে ওঠে ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব। নবকৃষ্ণের সুত্রে আরো এক বাঙালি বন্ধু জোটে নাম ছিল কান্তবাবু। বাঙালি সংস্কৃতি নিয়ে ওয়ারেন হেস্টিংসের এভাবেই এক গভীর ব্যক্তিগত পরিচয় ও ভালবাসা গড়ে ওঠে। শত্রুও পেয়েছিলেন একজন বাঙালিই, নাম নন্দকুমার। নন্দকুমার হেস্টিংসের নামে মিথ্যা দলিল তৈরি করে অভিযোগ করেন হেস্টিংস নবাবের কাছে ঘুষ খেয়েছেন।
মীর কাশিমের সাথে যখন কোম্পানির দ্বন্দ্ব চরমে তখন নবাবের সিপাহী হেস্টিংসকে কোতল করতে আসে। হেস্টিংসকে লুকিয়ে রাখে বাঙালি বন্ধু কান্তবাবু এক অজ পাড়াগাঁয়ে, এক অন্ধকার কুঁড়েঘরে। খাবার ছিল পান্তাভাত আর চিংড়ি মাছের চচ্চড়ি। এরপর থেকে তাঁর প্রিয় খাবার হয়ে ওঠে পান্তাভাত আর ঝাল ঝাল করে রান্না করা চিংড়ি মাছের চচ্চড়ি। জীবন রক্ষার জন্য বন্ধুর প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতার অন্ত ছিলনা।
ভারতের আমলাতন্ত্রের গোড়াপত্তন হয়েছিল হেস্টিংস এর হাতেই। তবুও হেস্টিংস ছিলেন নিজের মানুষদের মানে অনুগত মানুষদের প্রতি ও বন্ধুদের প্রতি অকৃপণ। তাদের কোন দোষই তাঁর চোখে পড়তো না। টিপিক্যাল বাঙালি হয়ে ওঠার খুব বেশী বাকী ছিলনা ওয়ারেন হেস্টিংসের।
তথ্যসুত্রঃ The East India Company: The World’s Most Powerful Corporation, Tirthonkar Roy, 2012
লেখাটির ফেইসবুক ভার্সন পড়তে চাইলে এইখানে ক্লিক করুন