আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের ৭৯ তম জন্মদিনে দেয়া বক্তব্য শুনলাম। স্যার খুব ভালো বলেন, শুনতে ভালো লাগে। কিন্তু স্যার তার বক্তব্যে যা যা বলেন; তা অনেক ক্ষেত্রেই বিপজ্জনক, মারাত্মক ও ভ্রান্ত।
উনি দারিদ্র্যকে সেলিব্রেট করতে শিখান, সম্পদকে ঘৃণা করতে শেখান। সম্পদশালীরা তার কাছে আনকালচার্ড, প্রদর্শনবাদী। এই চিন্তা বিপজ্জনক।
তিনি আমার বাবার বন্ধু, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রথম দিকে তিনি বগুড়া গেলে আমাদের বাসাতেই আসন নিতেন। আমি নিজেও কিশোর বয়সে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সাথে যুক্ত ছিলাম। বগুড়ার কেন্দ্র আমাদের বাসাতেই ছিল।
অনেক আগে, আমি ব্যবসা করি জেনে তিনি বলেছিলেন, শ্যামলদার ছেলে শেষ পর্যন্ত ব্যবসা করে!! আমি বলেছিলাম, ব্যবসা কি অশ্লীল শব্দ স্যার? নাকি মাস্টারি আর কেরানিগিরি ছাড়া পৃথিবীতে আর কোনো পেশা নেই? আপনার এই বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র তো ব্যবসায়ীদের দানেই চলে, ঠিক কিনা? আপনার প্রিয় আনিসুল হক তো ব্যবসাই করে নাকি? আনিসুল হক ব্যবসা করলে ঠিক আছে, পিনাকী ব্যবসা করলে ঠিক নাই?
আমার উষ্মামিশ্রিত জবাব শুনে সায়ীদ স্যার সেদিন চুপ করে গেছিলেন, কিন্তু সেদিনের সেই ঠোঁট কাটা জবাব উনার ভালো লাগে নাই। উনাকে যারা চেনেন, তারা জানেন, তিনি রাগ পুষে রাখেন, আর সূযোগ পেলে সেটা নিয়ে খোঁচাতে ছাড়েন না।
এই ৭৯ তম জন্মদিনে তিনি এক কন্ট্র্যাক্টরের স্ত্রীর সম্পদ প্রদর্শনের গল্প শোনালেন। সেই কন্ট্র্যাক্টরের স্ত্রী “আপা”-কে শুদ্ধভাবে উচ্চারণ করতে পারে না “আফা” বলে উচ্চারণ করে সেটাও স্মরণ করিয়ে দিলেন। সেই কন্ট্র্যাক্টরের স্ত্রী কীভাবে তার হাত ভর্তি গহনা স্যারের স্ত্রীকে প্রদর্শন করেছিল তার একটা বর্ণনা দিলেন। এমনভাবে যেন কন্ট্র্যাক্টরের পেশাটা একটা তুচ্ছ ও ফেলনা পেশা।
স্যার, আপনি নিজেও একজন কন্ট্র্যাক্টর, আপনার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রও নানা কাজের ঠিকা বা কন্ট্র্যাক্টরি নেয়। কখনো সরকারের, কখনো ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের, কখনো অন্য দাতা সংস্থার।
আপনার বই পড়ানোর কন্ট্র্যাক্টরি যদি মহৎ হয় তাহলে রাস্তার নর্দমা পরিষ্কারের কন্ট্র্যাক্টরি তুচ্ছ হবে কেন?
লেখাটির ফেইসবুক ভার্সন পড়তে চাইলে এইখানে ক্লিক করুন