মুসলমানদের কি মানুষ হিসেবে মুক্তির দরকার নেই?

গতকাল বাংলাদেশের হিন্দু মুসলিম সমস্যার প্রসঙ্গে আমি ব্রুনো বাউয়ারের কথা বলেছিলাম। ব্রুনো বাউয়ারের “ইহুদি প্রশ্নের” রেফারেন্সও দিয়েছিলাম। এবার সেখান থেকে কিছু নির্বাচিত অংশ দিচ্ছি। শুধু ইহুদিদের জায়গায় হিন্দু, খ্রিস্টানের জায়গায় মুসলমান আর জার্মানের জায়গায় বাংলাদেশ বসিয়ে দেয়া হয়েছে। কিছু সংযোজক বাক্য যুক্ত করা হয়েছে বোধগম্যতার কারণে। আগে লেখাটা দেখুন; ব্রুনো বাউয়ারের আর্গিউমেন্ট দেখুন। শেষে আমার প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবেন।

“হিন্দুরা কী ধরনের মুক্তি চায়? তারা চায় ‘সামাজিক রাজনৈতিক মুক্তি’ । কিন্তু একটি সাম্প্রদায়িক ও অগণতান্ত্রিক বাংলাদেশ রাষ্ট্রে কেউই মুক্ত নয়। আমরা নিজেরাই মুক্ত নই, তাহলে হিন্দুদের আমরা কী করে মুক্ত করব? তাছাড়া কেউ যদি শুধু হিন্দু হয়ে মুক্তি চায়, তাহলে বলা উচিত তারা খুবই স্বার্থপর বা আত্নকেন্দ্রিক। তাদের উচিত বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নাগরিক হিশাবে সকল নাগরিকের সামাজিক-রাজনৈতিক মুক্তি। তারা মানুষ হিশাবে যদি মুক্তি চায়, তাহলে উচিত হবে শুধু হিন্দু কেন- সকল মানুষেরই মুক্তি চাওয়া। মুসলমানদের কী মানুষ হিশাবে মুক্তির দরকার নেই?

হিন্দুরা যে-অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার হতে চলছে তাকে তারা নিয়মের ব্যতিক্রম হিশাবে ভাবে। অর্থাৎ বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বভাব বা বৈশষ্ট্যের মধ্যে এই অত্যাচার আর নির্যাতনের অনিবার্যতা নিহিত নেই, যেন এই অত্যাচার আর নির্যাতন শুধুই হিন্দুদের বিরুদ্ধে। অথচ এই অত্যাচার আর নির্যাতনই আর বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নিয়ম বা চরিত্র। হিন্দুর ওপর নির্যাতন ও অত্যাচার সেই নিয়মেরই প্রমাণ মাত্র।

নিজেদের মুক্তির দাবি তুলে কি হিন্দুরা মুসলমানদের সমতুল্য হতে চাইছে? যদি তাই হয় তাহলে তো তারা সাম্প্রদায়িক, গণবিরোধী ও অগণতান্ত্রিক বাংলাদেশ রাষ্ট্রটিকেই ন্যায্য করে তুলেছে। যে- রাষ্ট্র সকলকেই ‘দাস’ করে রাখে, যে রাষ্ট্রে কেউই ‘মুক্তি’ নয়, সেই রাষ্ট্রটিকেই তারা স্বীকৃতি দিচ্ছে। যে- শৃঙ্খলের জোয়াল তারা এখন বহন করছে তাতে তারা পরিতৃপ্ত নয়, তারা চাইছে আরও সাধারণ আরও সার্বজনীন আরও সর্বব্যাপী শৃঙ্খল। কেন বাঙালি বা বাংলাদেশীরা হিন্দুর মুক্তিতে উৎসাহিত হবে যখন তারা বাঙালি বা বাংলাদেশীর মুক্তির জন্য উৎসাহিত নয়?

ইসলামী রাষ্ট্রে শুধু কে কতটা সুযোগসুবিধা পাবে সেটাই বোঝে। এই রাষ্ট্রে হিন্দুর সুযোগ হোল হিন্দু হিশাবে থাকা। হিন্দু হিশাবে তাদের কিছু অধিকার আছে মুসলমানদের যা নাই। তাহলে হিন্দু ইসলামী রাষ্ট্রে মুসলমানের সমান অধিকার চাইছে কেন?

অষ্টম সংশোধনীর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক ইসলামী রাষ্ট্র হয়ে উঠেছে। হিন্দুরা দাবি করছে এই রাষ্ট্র তার ইসলামী চরিত্র পরিত্যাগ করুক। কিন্তু হিন্দুরা কি তাদের হিন্দু চরিত্র পরিত্যাগ করতে রাজি? যদি রাজি না থাকে তাহলে অন্যে তার ধর্ম পরিত্যাগ করুক সেই কথা বলার অধিকার কি তাদের আছে?

ইসলামী রাষ্ট্র বা এখনকার বাংলাদেশ রাষ্ট্র তাদের বর্তমান চরিত্রের কারণেই হিন্দুদের মুক্তি দিতে অক্ষম। কিন্তু হিন্দুরা যতক্ষণ তারা তাদের ধর্মের পরিচয়ে আবদ্ধ থাকে ততক্ষণ তাদের তাদের ধর্মীয় চরিত্রের কারণে মুক্তি পেতে অসমর্থ। যতক্ষণ বাংলাদেশ রাষ্ট্র ইসলামী চরিত্র নিয়ে বহাল থাকে আর হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান বা মুসলমান থেকে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান আর মুসলমান হয়ে-ততক্ষণ কেউ কাউকে মুক্তি দিতে বা নিজে মুক্ত করতে সক্ষম হবে না।”

এই প্রশ্নগুলো জার্মানিতে উঠেছিল। জার্মানিকে এই প্রশ্নগুলোর ফয়সালা করেই এগুতে হয়েছে। ধরা যাক এই প্রশ্নগুলো বাংলাদেশে উঠলো এটার ফয়সালা কী?

ব্রুনো বাওয়ার এই প্রশ্নের উত্তর কী দিয়েছিলেন জানেন? এবার আপনার পালা। ব্রুনো বাওয়ার এই প্রশ্নের ফয়সালা কীভাবে দিয়েছিলেন সেটা মুল লেখা না দেখে নিজের প্রজ্ঞা থেকে কমেন্ট বক্সে লিখুন। আমি কথা দিচ্ছি এই আলোচনাকে আরো অগ্রসর করলে বাংলাদেশেও আমরা হিন্দু মুসলমান সমস্যার সমাধানের ইশারা পাবো। সেই ইশারা খুঁজে পেতে আমাদের সকলের কন্ট্রিবিউশন থাকবে। এটা একটা সিরিয়াস আলোচনা। যারা গালাগালি করে এই সিরিয়াস আলোচনাকে নষ্ট করতে চাইবেন; বুঝবেন এই সমস্যার জনক তারা। তাই এই সমস্যা নিয়ে কেউ সমাধানের রাস্তায় হাটুক সেটা তারা চায়না।

লেখাটির ফেইসবুক ভার্সন পড়তে চাইলে এইখানে ক্লিক করুন

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Feeling social? comment with facebook here!

Subscribe to
Newsletter