সম্ভ্রান্ত চেহারার বয়স্ক সেই ভদ্রলোককে প্রায়ই দেখি, একা একা জিমে ওয়ার্ক আউট করতে। খুব চেনা মনে হয়। কোথায় যেন দেখেছি? উনি কি কোন সেলিব্রিটি? সরকারের মন্ত্রী বা উপদেষ্টা? টিভিতে দেখতে দেখতে চেনা হয়ে গেছে মুখটা? কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করি, চেনেন উনাকে? একজন বললেন, রিটায়ার্ড গভর্নমেন্ট অফিসার। কিন্তু এতো চেনা মনে হবে কেন? একদিন উনাকেই জিজ্ঞেস করে ফেলি, “স্যার, আপনাকে খুব চেনা মনে হচ্ছে, আপনি কোথায় আছেন?” উনি মৃদু হেসে বললেন, আমি দুদকের উপ পরিচালক ছিলাম এখন রিটায়ার করেছি। আমি নাছোড়, ” আপনি কি স্যার টি ভি ইন্টারভিউয়ে আসতেন নাকি?” উনি হেসে বললেন, হ্যাঁ কয়েকবার তো ইন্টারভিউ দিয়েছি।
খটকা যায়না। তবে উনি বলতে শুরু করেন, আমার কিন্তু পুলিশের ব্যাকগ্রাউন্ড, সি আই ডি থেকে দুদকে গেছি।
আমি বলি, ও আচ্ছা। হবে হয়তো টিভিতে তাহলে কখনো দেখেছি।
উনিও বলেন, আপনি কী করেন? বাড়ি কোথায়? আমি বললাম বগুড়ায়। ওখানে কখনো ছিলেন নাকি? উনি বললেন, না। আমাকে জিজ্ঞেস করেন কোন মেডিক্যালের আপনি? আমি বলি রাজশাহী।
হঠাৎ উনার চোখ বিস্ফোরিত হয়ে ওঠে, আমার নাকের কাছে আস্তে আস্তে আঙ্গুলটা তুলে নাটকীয় ভঙ্গিতে বলে ওঠেন, “অ্যাই, আপনি পিনাকী না?” আমি মোমেন?
আরে মোমেন ভাই। সেই সময় রাজশাহী থানার ওসি।
মোমেন ভাই বলতে থাকেন, ইস, যা মারটাই খাইছিলেন সেই সময়!
“আপনার পুলিশ ই তো মাইর টা দিলো মোমেন ভাই, থামাইতে পারলেন না?” একটু অভিমান নিয়ে বলি।
আরে না না, আমাদের থানার পুলিশ না। আমি তো ওইখানে ছিলাম ই না। আপনারে ধরছিল রিজার্ভ পুলিশ। আমার হাতে ধরা পড়লে মাইর খাইতেন না।
৯০ এ এরশাদ পতনের পরে কয়েকবার আমার হোস্টেলের রুমেও এসেছিলেন মোমেন ভাই। তখন তো আমরাই হিরো।
আজ প্রায় ২৫ বছর পরে আমি আর মোমেন ভাই পাশাপাশি ওয়ার্ক আউট করি। আমার তারুণ্য আর উনার যৌবনের নানা স্মৃতি রোমন্থন করি। নতুন করে আবিষ্কার করি মোমেন ভাই ও একজন চমৎকার হৃদয়বান মানুষ। তখনই সেই সব অলীক দেয়ালের কথা মনে আসে যা অনর্থক আমাদের পরস্পরকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়ে শত্রু শত্রু খেলিয়েছিল।
লেখাটির ফেইসবুক ভার্সন পড়তে চাইলে এইখানে ক্লিক করুন