রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে আমার মতে শ্রেষ্ঠ লিটল ম্যাগাজিন ছিল “সাত সতেরো”। আঙ্গিকে, লেখার বিষয়বস্তুতে অতি উপভোগ্য ছিল লিটল ম্যাগাজিনটা। আমাদের সময়ের সবচেয়ে উজ্জ্বল ছাত্ররা যুক্ত ছিল সেই ম্যাগাজিনে। ইন্টারেস্টিংলি এক ছাত্র শিবির ছাড়া সব ছাত্র সংগঠনের নেতা কর্মীরাই ছিল সাত সতেরোর সঙ্গে। এই পত্রিকায় কেউ নিজের নামে লিখতো না। একটা লেখা থাকতো “চারু মামার ক্যান্টিন থেকে” শিরোনামে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এটা চারু মামার ক্যান্টিন থেকেই বিক্রি হবে। চারু মামাকে বগলে “সাত সতেরো” নিয়ে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বিক্রি করতে দেখে বেশ গর্বই হতো। কিন্তু ভুল ভাংলো কিছুদিন পরে। চারু মামা বিক্রির ছলে ম্যগাজিনটা বিনামূল্যেই গছিয়ে দিয়েছেন সবাইকে। ক্যান্টিনের খাবার যেভাবে বিনা পয়সায় চারু মামা বিলাতেন সেইভাবে ম্যগাজিন বিলাতে গেলে যে ম্যাগাজিন বাঁচবে না সেটা চারু মামা বুঝতে চাইতেন না। বলতেন, সামনের মাসে ক্যান্টিনের টাকার থেকে ম্যাগাজিনের দাম “ক্যাটে লিবো”। এই “ক্যাটে লেয়ার” কৌশলটা মনে হয় শেষ পর্যন্ত কাজে লাগেনি।
আর্থিক দায় আর বেশী ভালো জিনিস বেশীদিন টেঁকে না, এই আপ্তবাক্যটি প্রমাণ করার জন্যই সাত সতেরো এক সময় মৃত্যু বরণ করলো। মৃত্যুর আগে বাঙলা সিনেমার নায়কদের পরিচালকেরা যেভাবে একটা দীর্ঘ সংলাপ বলে মৃত্যুবরণের অধিকার দেন ঠিক সেভাবেই সাত সতেরোর শেষ সংখ্যায় একটা বড় সম্পাদকীয় লেখার জায়গা বরাদ্দ হলো। সেখানে মৃত্যুদৃশ্যকে নাটকীয় করবার জন্য লিখেছিলাম,” ঝরা পাতা মাটিতে মাটি হয় বটে কিন্তু মহীরুহের জন্য রেখে যায় অযাচিত সার………।”
আমাদের ত্যাগ করা টনকে টন অযাজিত সারের সাথে সাত সতেরোর কয়েক কেজি কোন মহীরুহের জন্ম দিতে পারেনি।
লেখাটির ফেইসবুক ভার্সন পড়তে চাইলে এইখানে ক্লিক করুন