ডাক্তারদের হাতের লিখা স্পষ্ট করতে আদালতের নির্দেশ

চিকিৎসকদের হাতের লেখা নিয়ে আদালত নির্দেশনা দিয়েছে, যেন তারা স্পষ্টাক্ষরে লেখেন। উত্তম নির্দেশনা। এই প্রসঙ্গে নানা বক্তব্য করে চলেছেন কেউ কেউ। একজন দেখলাম বলেছেন, চিকিৎসকেরা তাঁর সীমাবদ্ধতা ঢাকতে এভাবে দুর্বোধ্যভাবে লেখেন। কি চমৎকার জাজমেন্ট!! পেশা হিসেবে ডাক্তারদের বাশ দিতে পারার একটা উপলক্ষ পেলে অনেকেই সেটা সহজে ছাড়তে চাননা, সেইটা দেখে পুলকিত হলাম। তাই কলম একটু ধরতেই হল।

আমি নিজের গল্পটা বলি। আমার বাংলা ও ইংরেজি হাতের লেখা দারুণ ছিল, আমি ছাত্র জীবনে পোস্টার লিখতাম, দেয়ালে চিকা মারতাম। অনেকে আমাকে লেখার জন্য হায়ার করে নিয়ে যেত। আমাদের পরিবারে সকলের হাতের লেখা মুক্তার মতো ঝকঝকে। আমার বাবার ছাত্র যারা, তারা নিশ্চয় আমার বাবার হাতের লেখা দেখেছেন। আমি তাঁর ৫০% পেলেও আমার হাতের লেখা কেমন ছিল সেটা বুঝাতে কষ্ট হবার নয়। সেই আমার ডাক্তার হবার পরে আস্তে আস্তে হাতের লেখা খারাপ হতে থাকলো। এখন তো আমি নিজে লিখলেই, নিজের লেখা আমি পড়তে পারিনা। কেন এটা হয়?

প্রথম কথা এটা সবার হয়না। সকল মানুষের হাতের লেখা বয়স বাড়ার সাথে সাথে খারাপ হতে থাকে, কারো দ্রুত হয় কারো ধীরে হয়। তাঁদের আরো দ্রুত হয়, যাদের প্রচুর লিখতে হয়। ডাক্তারদের প্রচুর লিখতে হয়। ধরেন প্রত্যেকদিন প্রায় ৪০-৫০ পৃষ্ঠা ফুলস্কেপ কাগজে ঠেসে লেখা। এই কাজটা অসম্ভব পরিশ্রমের আর টায়ারিং। এই লেখা লিখতে লিখতে লেখার পাঠযোগ্যতা ধরে রাখা যায়না। আপনি নিজে চেষ্টা করে দেখতে পারেন এক সপ্তাহ, কেমন লাগে বুঝবেন। আপনার হাতের লেখা বদলাচ্ছে কিনা সেটা আপনি আপনার এখনকার সিগনেচার আর দশ বছর আগের সিগনেচার মিলিয়ে দেখলেই বুঝবেন।

ইংল্যণ্ডে একটা গবেষণা হয়েছিল পেশার সাথে হাতের লেখার দুর্বোধ্যতার কোন সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা খুঁজে দেখার জন্য। বৃটিশ মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত সেই গবেষণায় দেখা গেছে, ডাক্তারদের হাতের লেখা অন্য পেশার লোকেদের চাইতে বেশী দুর্বোধ্য নয়।

তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে, ডাক্তারদের এই বদনাম হলো কেন? এর কারণ হচ্ছে, ডাক্তাররাই একমাত্র মানুষ যার হাতের লেখা আপনি দেখেন। আপনি উকিল, মোক্তার, ব্যাঙ্কার, সাংবাদিক, লেখক, কবি, শিক্ষক কারো হাতের লেখা দেখেন? দেখেন না। দেখে থাকলেও কদাচিৎ।

তবে এই হাতের লেখার কারণে মেডিক্যাল এরর যেহেতু হচ্ছে, অস্বীকার করার কারণ নাই; তাই রোগীর প্রেসক্রিপশন স্পষ্ট হতে হবে। এইটার একটা সমাধান হতে পারে কেন্দ্রীয় একটা সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রেসক্রিপশন করা। এতে অনেক লাভ, চাইলে প্রেসক্রিপশন অডিট ও করা যাবে।

আদালত সরকারকে নির্দেশ দিতে পারে, এইভাবে প্রেসক্রিপশন করাটাকেই ডিজিটালাইজ করার পদক্ষেপ নিতে। কারণ, এইটা জমির রেজিস্ট্রি ডিজিটালাইজ করার চাইতে গুরুত্বপুর্ণ কাজ।

লেখাটির ফেইসবুক ভার্সন পড়তে চাইলে এইখানে ক্লিক করুন

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Feeling social? comment with facebook here!

Subscribe to
Newsletter