‘লাইলি-মজনু’ সুফি দর্শনের উৎক্ষেপ।

লায়লা-মাজনুন, আমরা যাকে লাইলি-মজনু বলে জানি; একটা ফার্সি প্রাচীন কাব্য, সেই কাব্য কবি নিজামি ১২ শতকে আবার পুনরায় নতুন করে লেখেন। আমরা লাইলি-মজনুর যেই ভাষ্য জানি সেটা কবি নিজামির লেখা ভাষ্য। ততদিনে সুফি দর্শন পারস্যে জায়গা করে নিয়েছে। সুফি দর্শন পড়তে গিয়ে দেখলাম লাইলি-মজনু নিছক মানবীয় প্রেমের মহাকাব্য নয়, এর পরতে পরতে আছে সুফি দর্শনের উৎক্ষেপ।

লাইলির জন্য মজনুর উন্মাদ দশা আসলে সুফিবাদের সাতটি পর্যায়ের দ্বিতীয় পর্যায় “ওয়াদি-এ-ইশক” বা প্রেম। মজনু শুধু লাইলিকে চোখের দেখার জন্য কাতর ছিল। সেই কাতরতা আমরা দেখি লালনের মধ্যেও, “আমি একদিনও না দেখিলাম তারে”। শ্রী কৃষ্ণের জন্যও একইভাবে শ্রীচৈতন্যের উন্মাদ দশা হয়েছিল।

মজনু বাস্তবিক সাধনার শেষ স্তরে পৌছায় যেখানে লাইলির প্রেমের সাগরে ফিকর ও ফানা (নিঃস্ব ও বিলীন) হয়ে যায় মজনু। মজনু মুক্তি পায়। মানতিকুত তোয়ায়েরে চারবার মজনুর গল্প বলা আছে। লাইলি সেই পরম সত্তা আর মজনু তাঁকে খুজে ফেরা সাধক।

মজনুকে নিয়ে একটা ইন্টারেস্টিং গল্প মানতিকুত তোয়ায়ে বলা আছে; একদিন সবাই দেখলো মজনু পাগল হয়ে হাত দিয়ে মাটি খুঁড়ছে। সবাই জিজ্ঞেস করছে, কী করছ? মজনু বলে লাইলিকে খুঁজছি। সবাই হাসে লাইলি কি মাটির নিচে আছে? মজনুও হাসে, সে বলে আমার প্রেমাস্পদ তো সব জায়গায় আছে। অসাধারণ!

লাইলি-মজনুর এই দার্শনিক আবিস্কারের এক অসাধারণ আনন্দ অনুভব করছি।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Feeling social? comment with facebook here!

Subscribe to
Newsletter