মানুষ একদিন না একদিন ইতিহাস খুড়ে সত্য বের করবেই।

আজকে সকালে বন্ধু মিল্টন হাসনাতের একটা স্ট্যাটাস দেখলাম যেখানে মিল্টন লিখেছে, “খন্দকার মোশতাক ও জেনারেল জিয়ার নির্দেশে সেনাসদস্যরা অনেকটা জোরপূর্বক কারাগারে প্রবেশ করে রাতের অন্ধকারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে।”

খুব ইন্টারেস্টিং!! একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, রক্তাক্ত মধ্য-আগস্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর নামে কর্নেল শাফায়াত জামিলের একটা বই আছে সেই বইয়ে ১২৩-১৫১ পৃষ্ঠায় নভেম্বর ষড়যন্ত্রের বিস্তারিত বর্ণনা আছে। উল্লেখ্য কর্নেল শাফায়াত জামিল ৩রা নভেম্বরের সামরিক ক্যুয়ের একজন অন্যতম কুশীলবও বটে।

তিনি লিখছেন, ক্যু শুরু হয় ৩রা নভেম্বর দিবাগত রাত দুইটায়। ক্যুয়ের শুরুতেই জিয়াউর রহমানকে শাফায়াত জামিলের ভাষায় নিরাপত্তা হেফাজতে নেয়া হয়। এবং জিয়া অপ্রস্তুত অবস্থায় গৃহবন্দী হন। সেনাপ্রধান জিয়া নিরাপত্তা হেফাজতে যাওয়ার পরেই ক্যু সফল হয়। ক্যু সফল হওয়ার পরেই রাত চারটার পরে সেই রাতেই জেল হত্যা হয়। তাহলে জিয়াউর রহমান নির্দেশ দিলেন কখন? নিরাপত্তা হেফাজতে যাওয়ার নামে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে? জিয়া কি জানতেন ক্যু হচ্ছে? জিয়া ক্যু হচ্ছে জানলে খালেদ মোশাররফ কী ক্যু করতে পারে?

জিয়াউর রহমানের কথা শুনলে তো খন্দকার মুশতাকের মতো মানুষ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হতে পারেনা। জিয়া তো বঙ্গবন্ধু হত্যার কথা শুনে প্রথমেই বলেছিলেন “ভাইস প্রেসিডেন্ট ইজ দেয়ার আপহৌল্ড দ্য কন্সটিটিউশন”। জিয়ার এই কথা শোনা হয়নি। ইতিহাস সাক্ষী। খন্দকার মুশতাকের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছিলেন জিয়ার বস জেনারেল শফিউল্লাহ। শফিউল্লাহর দায় কেন জিয়াকে বইতে হবে? জিয়ার কাছে তখন উপ সেনাপ্রধান হিসেবে অপশন আর কী থাকে সেনাপ্রধানের অনুগত হওয়া ছাড়া?

আমি যদি তর্কের খাতিরেও ধরে নেই জিয়াই জেল হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন; তাহলে জেল হত্যা মামলার পুর্নাংগ ২৩৫ পৃষ্ঠার রায়ে কোথাও লেখা আছে কি এই কথা যে জিয়া নির্দেশ দিয়েছিলেন জেল হত্যার?

এখন যদি কন যে খুনিরা কইছে, জিয়া তাগো নেতা আছিল, জিয়াই কইয়্যা দিছে। তাইলে তো কইতে হয় ম্যালা সাইকোপ্যাথ খুনিরা খুন কইর‍্যা কইছে তাগো ঈশ্বর আদেশ দিছিল তাই জবেহ দিছে। হ্যাগো কথা বিশ্বাস করেন? খুনী সাইকোপ্যাথের কথায় এতো আস্থা কেন আপনাগো?

স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে সিলেট শহরে যখন জেড ফৌর্সের সদস্যদের সাথে জিয়া অবস্থান নিয়েছে তখন তাদের দেখতে আসা জনতা কয়েকজন রাজাকারদের মারধর শুরু করলো। জিয়া বিচলিত হয়ে সিলেটের ডিসিকে বলেছিলেন, ” Anyone must not be punished without proper trial. There must be no retribution and no reprisals.” জিয়াকে যদি খুনী বা খুনের দোসর বলতে হয় তাহলে প্রোপার ট্রায়াল করেই বলা উচিত নয়কি?

জিয়ার সাথে রাজনীতির বিরোধ থাকতে পারে তোর, আমারো আছে, কিন্তু তাই বলে জিয়াকে প্রতিহিংসাবশত প্রমাণ ছাড়া অহেতুক ছোট করলে কি কোন রাজনৈতিক লাভও আছে? মানুষ তো একদিন না একদিন ইতিহাস খুড়ে সত্য বের করবে। বিষয়টা ভেবে দেখার অনুরোধ রইলো বন্ধু মিল্টনকে।

Share

One thought on “মানুষ একদিন না একদিন ইতিহাস খুড়ে সত্য বের করবেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Feeling social? comment with facebook here!

Subscribe to
Newsletter