জাপানের যুবরাজ শোতাকু ৬০৪ খ্রিস্টাব্দে জাপানে একটা নতুন সংবিধান চালু করেন। এই সংবিধানে ধারা ছিলো ১৭ টা; নাম ছিলো কেমপো। এই কেমপোতে একটা গুরুত্বপূর্ণ ধারা ছিল এমন যে, দেশের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত কখনো একা একা নেয়া যাবেনা।
এটাই একটা রিপাবলিকের মুখ্য ধারণা। গণতন্ত্রের মৌলিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে রাস্ট্রীয় গুরুত্বপুর্ন সিদ্ধান্ত গ্রহনে নাগরিকের অংশগ্রহণ। নাগরিকেরা তাহলে কীভাবে এই সিদ্ধান্ত গ্রহন প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে? তৃতীয় বিশ্বের শাসকেরা বলতে চায়, আপনারা আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে দেবেন, আমরা আপনার হয়ে কথা বলবো। তো উনি আমাদের কথা জানবেন কীভাবে? উনি কি ভোট পেয়ে অন্তর্যামী হয়ে যান? যাননা। ভোট দিতে পারি নাকি পারিনা ওই আলাপে আর গেলাম না। কিন্তু ভোট দিলেই আমার কন্ঠস্বর যে শোনা যাবে তার নিশ্চয়তা নাই।
এই কণ্ঠস্বর শোনানোর জন্যই একটা রাজনৈতিক পরিসর লাগে। যেখানে নাগরিকেরা নির্ভয়ে তার মত প্রকাশ করতে পারবে, নানা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বিতর্ক করতে পারবে। এই কন্ঠস্বরকে আরো জোরালো করার জন্য সমবেত হতে পারবে, দাবী জানাতে পারবে, তার ক্ষোভ বিক্ষোভ প্রকাশ করতে পারবে।
রাজনীতি মানে ক্ষমতা চর্চা নয় বা ক্ষমতায় যাওয়ার পদ্ধতি নয়; রাজনীতি মানে একটা জনগোষ্ঠীর আশা, ইচ্ছা আর চিন্তাকে রাস্ট্র পরিচালনায় প্রতিফলিত করা। এটা পাচ বছরে একবার ভোট দিয়ে নিশ্চিত করা যায়না। এই ইচ্ছা আজ আশা প্রকাশের জায়গাই হচ্ছে রাজনৈতিক পরিসর।
যেই জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক পরিসর থাকে, সেই জনগোষ্ঠীকে পলিটিক্যাল কমিউনিটি বা রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী বলা হয়। রাজনৈতিক পরিসর না থাকলে রাজনৈতিক জনগোষ্ঠীর মৃত্যু হয়। রাজনৈতিক পরিসরের অনুপস্থিতি মানে রাজনীতির অনুপস্থিতি।
সমাজ থেকে রাজনীতি তিরোহিত হলে, সেই শুন্যস্থান পুরণ করে “অরাজনীতি”। এই অরাজনীতির অনুসংগ হচ্ছে, বলপ্রয়োগ আর ভীতি উৎপাদন।
রাস্ট্র পরিচালনায় জনগনের সার্বভৌম ইচ্ছার প্রতিফলন না হলে সেই রাস্ট্র কখনো এগোয় না। আমাদের এমন রাস্ট্র গড়ে তুলতে হবে, যেই রাস্ট্রে যেন কোন কন্ঠস্বর অশ্রুত না থাকে। রাস্ট্র আপনার পলিটিক্যাল এজেন্ট। রাস্ট্রের নাগরিক হয়ে আপনার কি “অরাজনৈতিক” হয়ে থাকার কোন সুযোগ আছে? ” আই হেইট পলিটিক্স” বলার কোন সুযোগ আছে?
শাসক কি নাগরিককে “রাজনীতি” না করার পরামর্শ দিতে পারে? রাজনীতি ছাড়া আমি আপনি আসলে নাগরিক থাকি কি?