আনিসুজ্জামান স্যার কইছেন, “বাংলাদেশ রাষ্ট্র পিছায়ে যাইতেছে”। আনিসুজ্জামান স্যারের বয়ান বুঝতে চাইলে উনারে আগে পাঠ করা জরুরী। উনি আসলে কে? উনার সবচাইতে বড় পরিচয় তিনি পদ্মভূষণ। পদ্মভূষণ হইতেছে ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক খেতাব। তার মানে তিনি হংসদের মাঝে বক। তিনি বাংলাদেশের মাঝে এক টুকরা ভারতমাতার কণ্ঠস্বর। তাই উনার বয়ানে “পিছায়ে পড়া” মানে বুঝতে হবে সেইখান থিকা।
ভারতের কাছে মনে হইছে এই রাষ্ট্র পিছায়ে পড়ছে। তাইলে রাষ্ট্র আগায়ে ছিল কখন? তিনি সেইটা আবার খোলাসা কইরা কইছেন ৭০ থিকা ৭৩ সাল পর্যন্ত। স্যারের শইলে ম্যালা দয়া । তিনি না কইয়া দিলে আমরা কেমনে বুঝতাম আমরা একসময় আগায়া ছিলাম। তিনি কইছেন, “৭০, ৭১, ৭২ ও ৭৩-এ যে স্বপ্ন দেখেছিলাম, সেই স্বপ্নের একটা ভিত্তি ছিল। সেটা প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে আমরা অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারতাম।“
এই ভিত্তিটা তাইলে কী ছিল। এই ভিত্তিটা ছিল ভারতমাতার সাথে আমাগো মুক্তিযুদ্ধকালীন বুঝাপড়া। সেইসময় আমরা স্যেকুলারিজমের ইন্ডিয়ান বটিকা খাইয়া আগায়া ছিলাম। ভিত্তি হিসাবে সংবিধানে ঢুকাইছিলাম স্যেকুলারিজম। আমরা বাঙাল ভাষায় যেভাবেই কই না কেন, তিনি শান্তিনিকেতনের ভাষায় সুর কইর্যা এটাই কইছেন।
এই বাংলাদেশে ভারতের যেইটা আকাঙ্খা মানে হেই “সেকুলারিজমের” অর্থ কী? তা বুঝতে চাইলে ৭১ এ ফিরা যাইতে হইবেক। ইন্দিরার দুর্ভাগ্য যে ৭১ সালে তারে পুর্ব পাকিস্তানের বাঙাল “মুসলমানকেই” সাহায্য করতে হইছিল। ইন্দিরাজির আর কোন বিকল্প ছিল না। ভারতের দিক থিকা নিজের স্ট্রাটেজিক স্বার্থে এইটা করতেই হইছিল। এইটা নিয়া তাই কেউ যদি প্রশ্ন তুলে, যে ক্যান মুসলমানের একটা রাষ্ট্র বানাইলেন। মুসলমানের একটা পাকিস্তান রাষ্ট্র ভাইঙ্গা দুইটা মুসলমানের রাষ্ট্র বানাইলেন? এর এক আগাম জবাব তিনি তৈরি করতে চাইলেন। আসলে তিনি আমাগো পারলে কইতেন “তোরা সব মুসলমানি ত্যাগ কর। আমার কাজটা সহজ কইরা দে”। কিন্তু একথা তো কওন যায় না, দুষ্ট লোকেরা এটা নিয়া অনেক খারাপ কথা বলবো। তাই তিনি আমাগো কইলেন, তোরা সেকুলার হইয়া যা। হইয়া থাকবি কিন্তু। তোগোরে ঐ মর্ডান রিপাবলিকের মানবিক মর্যাদা, সাম্য আর ন্যায়বিচার – এইগুলা থো ফালাইয়া। আমি দ্যাখতে চাই তোরা সেকুলার হইছিস, মানে “না-মুসলমান” অথবা মৃদু মুসলমান হইছিস কিনা সেইটা আগে বলবি।
তাইলে দাড়াইলো, সেকুলার= ‘না-মুসলমান’ বা “মৃদু মুসলমান”।
এই হলো বাংলাদেশে ভারতের আকাঙ্খা – সেকুলারিজমের অর্থ।
এখন আসেন, আনিসুজ্জামান স্যাররে আবার পাঠ করেন, আগায়া যাওয়া আর পিছায়ে যাওয়ার এইবার অর্থ পাইবেন।
তাইলে এখন সেইখান থিকা পিছাইলাম কীভাবে? ভারতমাতা মনে করতেছে আমরা এই স্যেকুলারিজমের পথ থিকা সইর্যা আসছি। কিন্তু তামশাটা হইল, তাঁরা মনে করতেছে,এইবার এই সইর্যা আসাটা হইছে আওয়ামীলীগের কারণেই। তারা কোর্ট পাড়ার মুর্তি আর পাঠ্যবইয়ে বদলানিতে কইতে চায়, মোল্লাগো কথা শুনছে হাসিনা – এই হইলো ভারতের কড়া অভিযোগ। এইটাতে লীগ বইলা কোন খাতির নাই। কারণ এটা বাংলাদেশের পিছাইয়া যাওয়নের মামলা। সেই স্যেকুলারিজমের ইন্ডিয়ান বটিকা মনে হয় এইবার দুষ্টু পোলার তিতা ওষুধ খাইতে না চাওয়ার মতো কইর্যা মুখ থিকা ফেলায়ে দিতাছে বাংলাদেশ।
তাই এইটা হইতেছে বাংলাদেশের ‘না-মুসলমান’ থাকা অথবা না-থাকার মামলা। ভারত ব্যাপারটা হালকা কইরা নিতে পারে না। ইজ্জত কা সওয়াল।
তাইলে এইটা হইতেছে শাসক ক্ষমতার আভ্যন্তরীণ তর্ক। বন্ধু রাষ্ট্রের চৌম্বক আকর্ষনে আমাগো দ্যাশে যেই শাসক ক্ষমতাটা তৈরি হইছে, সেই ক্ষমতার অন্দরমহলের তর্ক । ফলে এটা বন্ধু আর সরকারের হালকা ক্যাচাল, ঠিক আমাগো তর্ক না। এইটা হইতেছে মৃদু গৃহযুদ্ধ। সেই যুদ্ধের কোমল শিঙ্গা ফুকিলেন আমাগো পদ্মভূষণ।
আমরা তো আম জনতা; পপকর্ন কিনার পয়সা নাই, তাই মুড়ির টিন নিয়া বসলাম। লাগুক গিয়াঞ্জাম। এই গিয়াঞ্জামে বাংলাদেশের আম জনতার জন্য বরকত আছে, কারণ, ক্ষমতার আয়ু ওর ভিত্রের গিয়াঞ্জাম সামলানোর কুটিল যোগ্যতার উপরে নির্ভর করে।
ক্ষমতার ভিত্রের গিয়াঞ্জাম দীর্ঘজীবি হোক। খোদাতায়ালা আমাদের বেশি কইরা ক্ষমতার ভিত্রের গিয়াঞ্জাম দেখার তৌফিক দান করুন। আমিন।