“মোল্লার কাজ মোল্লা করেছে”
সোভিয়েত ইউনিয়নে পতিতাবৃত্তি ছিল না। সমাজতন্ত্রের পতনের পরে চাকুরি হারানো মেয়েরা পতিতা হিসাবে নাম লেখাতে থাকে। প্রতি এলাকাতেই গড়ে উঠতে থাকে পতিতালয়। সেগুলো উদ্বোধনের সময় স্বস্ত্যয়ন করে দিত পাদ্রিরা। কক্সবাজারে মোল্লা সাহেব ধর্ষকের জন্য দোয়া করেছেন, এটা হুজুরদের জন্য কোনো নতুন ঘটনা নয়।

মোল্লাদের কড়কে দেয়াটা উনার কর্তব্য জ্ঞান করেন, আর সোভিয়েত ইউনিয়নের গুণ কীর্তন করাটা তার অবশ্য কর্তব্য, কারণ তাতে তার বাকশাল প্রেম বৈধতা পায়।
কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের গুণ কীর্তন করতে গিয়ে তিনি যা যা বলেন তার কোন কিছুই সত্য নয়। তার মাথায় তার নেতাদের বলা কথাগুলো দিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন নামের ইউটোপিয়া নির্মান করে রেখেছেন। সেটা তার দুনিয়ার বেহেশত। খনো যাচাই করে দেখেন নি তার নেতাদের বলা কথাগুলো সত্য কিনা? কিন্তু, উনি কোথায় পেয়েছেন সোভিয়েত ইউনিয়নে পতিতাবৃত্তি ছিলোনা? সোভিয়েত ইউনিয়নে পতিতাবৃত্তি ছিল। খুব ভালোভাবেই ছিল।
জারের রাশিয়ায় পতিতাদের মেডিক্যাল পুলিশের কাছে রেজিস্টার করতে হতো। এবং পতিতাবৃত্তির উপরে একধরণের পুলিশি নিয়ন্ত্রণ ছিলো। এটার লক্ষ্য ছিলো যৌন রোগের প্রাদুর্ভাব কমানো। তাদেরকে সপ্তাহে একদিন মেডিক্যাল চেক আপের জন্য মেডিক্যাল পুলিশের কাছে যেতে হতো। সেই সময় দেশের ভিতরেও চলাচলের জন্য আভ্যন্তরীণ পাসপোর্ট ছিলো, সেই পাসপোর্টে রেজিস্টার্ড পতিতাদের হলুদ সীল দেয়া থাকতো। যেহেতু এই পাসপোর্ট বাসা ভাড়া নেয়া থেকে নানা কাজে প্রয়োজন হতো তাই এই হলুদ সীলের কারণে তাদের নানা ধরণের সামাজিক সমস্যার মধ্যে পড়তে হতো।
১৯২৩ সালের পোস্টার (সিফিলিস)
১৯১৭ তে রাশান বিপ্লবের পরে এই রেগুলেশন বা নিয়ন্ত্রণ তুলে দেয়া হয়। কমিউনিস্টরা মনে করতো পতিতাবৃত্তি পুজিবাদী শোষণের এবং অসাম্যের একটি রূপ। লেনিন বলেছিলেন, “যতদিন পর্যন্ত মজুরী দাসত্ব থাকবে ততদিন পতিতাবৃত্তি থাকবে।“ কমিউনিস্টদের কাছে পতিতাবৃত্তি জারের রাশিয়ার মতো মরাল বা নৈতিকতার ইস্যু ছিলোনা, এটা ছিল নিপীড়ন আর বৈষম্যের আরেকটা রূপ। ১৯১৭ থেকে ১৯১৯ এর মধ্যেই সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টি নারীর মুক্তির লক্ষে কয়েকটা আইন পাশ করে। তার মধ্যে ছিল আইনি ও রাজনৈতিক সাম্য নিশ্চিত করা আইন, বিবাহ বিচ্ছেদের আইন এবং পতিতাবৃত্তির উপরে নিয়ন্ত্রণ তুলে দেয়া। পরিশেষে ক্রিমিন্যাল কোড ১৯২২ এর মাধ্যমে পতিতাবৃত্তিকে ডিক্রিমিনালাইজড করা হয়। মানে পতিতাবৃত্তি যা জারের আমলে অপরাধ বলে গণ্য হতো সেটা আর অপরাধ বলে বিবেচিত হল না।
জার আমলে পতিতাবৃত্তি ছিলো মেডিক্যাল এবং মরাল কনসার্ণ। এর জন্য দায়ী করা হতো পতিতাদেরকেই।
কমিউনিস্ট আমলে তারা বললো, না এটা একা মহিলার দায় নয়, যৌন রোগ থেকে দূরে থাকতে হলে পুরুষদের কেও ব্যক্তিগত হাইজিন মেনে চলতে হবে। ১৯২০ সালে প্রকাশিত স্বাস্থ্য শিক্ষা পোস্টার দেখুন।

১৯২০ সালের পোস্টার (আমরা সিফলিস নিরাময় করবো )
১৯২১-১৯২৮ নিউ ইকোনোমিক পলিসির সময় দারিদ্র্য এক ভয়াবহ রুপ ধারণ করে। যেই নারীরা রাশিয়ার কর্মশক্তির ৪৫% ছিলো, তা নেমে আসে ২৮.৬% এ। নারীরা কাজ হারিয়ে নেমে পরে পতিতাবৃত্তিতে। পতিতাবৃত্তি আর যৌন রোগ ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পরে। নিউ ইকোনোমিক পলিসির কারণে যেহেতু পতিতাবৃত্তি ছড়িয়ে পড়েছিল তাই এই পতিতাদের বলা হতো NEPwomen.(সুত্রঃ Elizabeth A, Wood, The Baba and the Comrade: Gender and Politics in Revolutionary Russia (Bloomington and Indianapolis: Indiana University Press, 1997)
নিউ ইকোনমিক পলিসির সময়ে যৌন রোগ এমন ভয়াবহভাবে বেড়ে যায় যে, ১৯২৬ সালে আর্টিকেল ৫০ নামের নতুন আইনের মাধ্যমে সোভিয়েত রাশিয়া যৌন রোগ ছড়ানোকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে ঘোষণা করে। ১৯২৮ সালে সোভিয়েত হেলথ কমিশ্যিয়ারেট পতিতাবৃত্তি রোধ করার জন্য আলাদা ক্লিনিক এবং পতিতাদের পুনর্বাসন ব্যবস্থার জন্য কর্মসুচী নেন। যদিও সেই কর্মসুচী এতো ব্যাপক সংখ্যক পতিতা ততদিনে হয়ে গিয়েছিল যে তাদের মেডিক্যাল চিকিৎসারও কোন ব্যবস্থা করতে পারেনি। তাই এই কর্মসুচী আদতে ফেইল করে।
(সুত্রঃ Frances Bernstein, ‘Prostitutes and Proletarians: The Soviet Labour Clinic as Revolutionary Laboratory’ from The Human Tradition in Modern Russia, ed. Husband, William B. (Deleware: Scholarly Resources 2000))
সোভিয়েত ইউনিয়নে পতিতাবৃত্তি কখনোই লোপ পায়নি, একসময় সকলের কাজ নিশ্চিত হলেও অতিরিক্ত কিছু উপার্জনের আশায় সোভিয়েত নারীদের একটা অংশ পতিতাবৃত্তিতে লিপ্ত থাকতো।
(সুত্রঃ The Soviet Union: Empire, Nation, and System By Aron Katï¸ s︡enelinboÄgen পৃষ্ঠা ৩২৪)
রেড স্কয়ারে পুলিশের সামনেই খদ্দেরের অপেক্ষায় অষ্টাদশী কাতিয়া। তখনো সমাজতন্ত্রের পতন হয়নি
এবার জাকির তালুকদার জানাবেন কি কোন ধর্মনেতা পতিতালয় উদ্বোধনের সময় স্বস্ত্যয়ন করে দিয়েছিলো?