দুর্জন বিদ্যান হইলেও পরিত্যাজ্য নয়

ভলতেয়ার মাদমোয়াজেল দুমিনিকে তাঁর লেখা একটা নাটকের খল চরিত্রে অভিনয়ের তালিম দিচ্ছেন। অভিনেত্রীর অভিনয় পছন্দ না হওয়ায় তাঁকে বারবার বলছেন তোমাকে চরিত্রটার ট্র্যাজিক উচ্চতায় পৌছুতে হবে। অভিনেত্রি বললেন, আপনি যেই আবেগের কথা বলছেন সেটা বের করতে গেলে আমাকে আস্ত একটা শয়তান হয়ে উঠতে হবে। ভলতেয়ার তখন বলেছিলেন, “ঠিক তাই। সেটাই চাইছি আমি। শিল্পের যেকোন ক্ষেত্রে তোমাকে সফল হয়ে উঠতে হলে তোমার মধ্যে একটা শয়তান চাই।”

ভলতেয়ারকেও সমসাময়িক সমালচকেরা “শয়তান” বলতে ছাড়েননি। সাৎ বুভ বলেছিলেন “তার শরীরের মধ্যে একটা শয়তান বাস করত।” আর দ্য মেস্ত্র বলেছেন তিনি সেই মানুষ, “যার হাতে নরক তুলে দিয়েছে সমস্ত ক্ষমতা।” ভলতেয়ার নিজেও বলেছেন, “আদতে আমি একজন ভালো শয়তান।”

আজকের স্যেকুলারদের বুর্জোয়া এনলাইটেনমেন্ট যাদের কাছে ঋণী, ভলতেয়ার তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য। কেন বলছি এই কথা? এই স্যেকুলারেরাই কে কেমন মানুষ তার মরাল জাজমেন্টে বসে সব সময়। মানুষের চিন্তার বিচারে সে কেমন মানুষ ছিল সেটা অনাবশ্যক আলোচনা। এবং মর্মে সেই আলোচনা মোটেই আধুনিক নয়।

ভলতেয়ার ছিলেন গর্বে টইটুম্বুর, বাচাল, অশ্লীল, বেহায়া, কখনো কখনো চাটুকার এমনকি অসৎ। সেই সময়ের সব ত্রুটিতে আচ্ছন্ন মানুষ ছিলেন ভলতেয়ার।

এহেন দুর্জন ধরনের মানুষের কাছে পৃথিবীর ইতিহাস ঋণী। ভিক্টর উৎগো বলেছিলেন, “ভলতেয়ারের নাম উচ্চারণ করা মানেই সমগ্র অষ্টাদশ শতাব্দীকে (অর্থাৎ চিন্তাকে) চিহ্নিত করা।”

ইতালির যেমন ছিল রেনেসাঁ, জার্মানির রিফর্মেশন তেমনি ফ্রান্সের ছিল ভলতেয়ার নামের মানুষ। ফ্রান্সের কাছে তিনিই রেনেসাঁ, তিনিই রিফর্মেশন, তিনিই অর্ধেক বিপ্লব।

তাঁর মুল অবদানটা কী? ভলতেয়ার চিন্তা করতে শিখিয়েছিলেন পুরো ফরাসি জাতিকে। তাঁর হাত ধরেই চিন্তা করতে শেখে ফ্রান্স। ভলতেয়ার বলেছিলেন, “একটা জাতি যখন চিন্তা করতে শেখে তখন আর তাঁকে আটকানো যায়না।” ফ্রান্সকে আটকানো যায়নি ইতিহাস সাক্ষী।

তাহলে দাঁড়ালোটা কী? দুর্জন বিদ্যান হইলেও পরিত্যাজ্য নয় তাহলে সব সময়।

ফুট নৌটঃ ভলতেয়ার তাঁর আসল নাম ছিল না, এটা ছদ্ম নাম। তাঁর আসল নাম ছিল ফ্রাসোয়া মারি আরুয়ে।

Share

Feeling social? comment with facebook here!

Subscribe to
Newsletter