বাংলাভাষী নাস্তিকদের মাথায় ঢুকে আছে যে ধর্ম যেহেতু মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরি করে তাই ধর্মের উচ্ছেদ পৃথিবীর মানুষকে মিলিয়ে দেবে। সৎ আকাঙ্ক্ষা হিসেবে আমি মানুষে মানুষে মিলানোর জন্য তাঁদের স্বপ্নকে শ্রদ্ধা জানাই। কিন্তু মানুষে মানুষে বিভেদ কীভাবে তৈরি হয় সেই সমাজবিজ্ঞানের গভীর পাঠ না থাকার নাস্তিকদের এই আকাঙ্ক্ষা শিশুসুলভ রোমান্টিকতার বেশী কিছু নয়। মানুষ প্রকৃতিগত ভাবেই প্রতিনিয়ত “আদার” তৈরি করে। সেই আদার কখনো ধর্ম দিয়ে, কখনো লিঙ্গ দিয়ে, কখনো বর্ণ দিয়ে কখনো জাতি পরিচয় দিয়ে, কখনো শিক্ষা দিয়ে। ধর্ম ছাড়াও এমন অসংখ্য প্রপঞ্চ তৈরি করা যায় যা দিয়ে মানুষে মানুষে ভয়াবহ বিভেদ তৈরি করা সম্ভব। ধর্ম না থাকলেও সেই বিভেদ তৈরির প্রক্রিয়া এবং “অপর” বা আদারের নির্মাণ বন্ধ হবেনা। আমার গাত্রবর্ণ যদি বিভেদের কারন হয় তবে কি আমি গায়ের চামড়া তুলে ফেলবো?
এই প্রসঙ্গে হান্টিংটন তাঁর ক্ল্যাশ অব সিভিলাইজেশনে একটা চমৎকার আলোচনা করেছেন। আমি অনুবাদসহ সেটার বিশেষ অংশ পাঠকের জন্য তুলে দিচ্ছি।
“Marxist-Leninism and liberal democracy can at least be debated if not resolved. Differences in material interest can be negotiated and often settled by compromise in a way cultural issues cannot. Hindus and Muslims are unlikely to resolve the issue of whether a temple or a mosque should be built at Ayodhya by building both, or neither, or a syncretic building that is both a mosque and a temple. Nor can what might seem to be a straightforward territorial question between Albanian Muslims and Orthodox Serbs concerning Kosovo or between Jews and Arabs concerning Jerusalem be easily settled, since each place has deep historical, cultural, and emotional meaning to both peoples. Similarly, neither French authorities nor Muslim parents are likely to accept a compromise which would allow schoolgirls to wear Muslim dress every other day during the school year. Cultural questions like these involve a yes or no, zero-sum choice.
…. For self-definition and motivation people need enemies: competitors in business, rivals in achievement, opponents in politics. They naturally distrust and see as threats those who are different and have the capability to harm them. The resolution of one conflict and the disappearance of one enemy generate personal, social, and political forces that give rise to new ones. “The ‘us’ versus ‘them’ tendency is,” as Ali Mazrui said, “in the political arena, almost universal.”
“দুই ইহবাদী রাজনৈতিক মতাদর্শ মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদ ও উদার গনতন্ত্রের বিরোধ কোনদিনই মীমাংসা হবেনা। বস্তুগত স্বার্থ নিয়ে সংঘাত কোন না কোনভাবে আপোষ-রফা করা গেলেও সাংস্কৃতিক ইস্যু নিয়ে করা যায় না। অযোধ্যায় যদি মসজিদ মন্দির দুটোই নির্মাণ করে দেয়া হয় তবুও ভারতে হিন্দু- মুসলমানের সংঘাত নিরসন হবে না। আলবেনিয়ার মুসলমান ও অর্থোডক্স সার্বদের কসোভো নিয়েও না এবং জেরুজালেম নিয়ে আরব-ইহুদিরাও না। কারণ অযোধ্যা বা কসোভো বা জেরুজালেমের গভীর তাৎপর্যমণ্ডিত ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও আবেগিক গুরুত্ব রয়েছে সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায়গুলোর কাছে। একইরুপে ফ্রান্সে স্কুলে পড়ুয়া মুসলিম মেয়েদের হিজাব বা স্কার্ফ পরিধান নিয়ে বিরোধের মীমাংসাও কোনদিন হবে না। সাংস্কৃতিক বিষয়গুলোই এরকম। এর মধ্যে হ্যাঁ-না বা পছন্দ-অপছন্দের মাত্রা শূন্য, এ বিষয়ে কেউই আপোষ করেনা।
……আত্নপরিচয় এবং প্রেষণার জন্য মানুষের দরকার হয় প্রতিপক্ষঃ ব্যবসার জন্য দরকার প্রতিযোগী, কোন কিছু অর্জনের জন্য দরকার প্রতিদ্বন্দ্বী, এবং রাজনীতিতে দরকার বিপক্ষ। মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই সক্ষম প্রতিপক্ষকে সন্দেহ করে এবং নিজের জন্য হুমকি মনে করে। এক দ্বন্দ্ব দূর হলে আরেক দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এরকমটি ব্যাক্তিগত, সামাজিক বা রাজনৈতিক সবক্ষেত্রেই সমান। “আমরা” বনাম “তারা” প্রবণতা যেমন আলী মাজরুই বলেন সেভাবে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সর্বকালের সার্বজনীন সমস্যা।“