গুরু দ্রোণাচার্য রাজপুত্রদের অস্ত্রশিক্ষা দিচ্ছেন। এরমধ্যেই তীর ধনুক ছোঁড়া শেখা হয়েছে। গুরু দ্রোণাচার্য এবার শিষ্যদের পরীক্ষা নেবেন।
তিনি দূরে গাছের ডালে একটা কাঠের পাখি রেখে শিষ্যদের পাখির চোখে তীর বিদ্ধ করতে বললেন। প্রথমে এলো বড় রাজপুত্র যুধিষ্ঠির।
সে লক্ষ্য স্থির করার পরে দ্রোণাচার্য জিজ্ঞেস করলেন, কী দেখতে পাচ্ছো? যুধিষ্ঠির উত্তর দিলেন, একটা গাছ সেখানে একটা কাঠের পাখি, গাছে জীবন্ত পাখিরাও আছে, পাখির বাসা আছে, গাছে ফল আছে পাখিরা সেই ফল খায়, পিপড়ের বাসাও আছে, গাছের কোটরে সাপ আছে। আমাকে যদি তীর ছুড়তে হয় তাহলে আর কারো ক্ষতি না হয় সেটা দেখতে হবে।দ্রোণাচার্য আবেগে যুধিষ্ঠিরকে জড়িয়ে ধরে বললেন, বত্স, তুমি প্রাজ্ঞ ও হৃদয়বান রাজা হতে পারবে কিন্তু কখনোই একজন ধনুর্বিদ হতে পারবেনা।
এরপর এলো অর্জুন। সে লক্ষ্যস্থির করার পরে দ্রোণাচার্য জিজ্ঞেস করলেন, কী দেখতে পাচ্ছো বত্স । অর্জুন উত্তর দিলো, একটা চোখ গুরু, কাঠের পাখির একটা চোখ। দ্রোণাচার্য জিজ্ঞেস করলো, আর কিছু দেখতে পাচ্ছো বতস? অর্জুন উত্তর দিলো, না গুরু শুধু চোখ ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাচ্ছিনা। অর্জুন ছিলো মিথোলজীর একজন শ্রেষ্ঠ ধনুর্বিদ।
আজকের দিনে আপনি যদি সত্যিই বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে অবস্থান নিতে চান, তাহলে বলুন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা কী?
যদি আপনার মনে হয়, সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অবক্ষয়, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ। তাহলে আপনি সুশীল হোন, বুদ্ধিজীবি হোন, মাস্টার হোন- রাজনীতি আপনার জন্য নয়।
রাজনীতিতে লক্ষ্য নির্ধারনের এটাই কমিউনিস্ট পদ্ধতি যা অর্জুন হাজার হাজার বছর আগে করেছিলো। কমিউনিস্টরা বলে প্রধান দ্বন্দ্ব নির্ণয়। বাংলাদেশের প্রধান দ্বন্দ্ব কী? একটা ফ্যাসিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে জনগনের মুক্তির আকাঙ্ক্ষা।
লক্ষ্যস্থির করুন অর্জুনের মতো, কী দেখতে পাচ্ছেন? যদি আপনি ফ্যাসিবাদ দেখতে পান। তাহলে হে অর্জুন লক্ষ্যভেদ করুন। আপনার আর কিছুই দেখার দরকার নেই। দেখা জরুরীও নয়। ইতিহাসরূপী দ্রোণাচার্য আপনার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। আপাতত আমাদের যুধিষ্ঠিরের দরকার নেই, আমরা চাই লক্ষ্যভেদী অর্জুন যার একমাত্র লক্ষ্য ফ্যাসিবাদকে পরাস্ত করা।