“হিন্দুরা বাংলাদেশে নিপীড়িত” এইটা হইতেছে ইণ্ডিয়ান বয়ান। এই ইণ্ডিয়ান পজিশনকে ইন্টেলেকচুয়ালি সাপোর্ট করে বাংলাদেশের লেফট, স্যেকুলার ও চেতনাজীবিরা। ইণ্ডিয়া বাংলাদেশকে একটা আধুনিক রিপাবিলিক হিসাবে না দেখাইয়া, নানা ধর্মের বিভক্ত রাষ্ট্র হিসেবে চিন্তা করে। সেই রাষ্ট্রে নাগরিকের বদলে হিন্দু আর মুসলমান সম্প্রদায় বাস করে আর সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানেরা হিন্দুদের কুপায়ে দেশছাড়া করতেছে। এই বয়ান তার হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিতে সুবিধা দেয়।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ফ্যাসিস্ট চরিত্রের কারণে যে এই রাষ্ট্রের সকল নাগরিক সমানভাবে নিপীড়িত ও নির্যাতিত এই সত্যটাকেও আড়াল করা যায়। সরকারের চিন্তার বাইরের রাজনৈতিক চিন্তার লোকেরা যে নিজের ভিটায় যাইতে পারেনা মাঝে মধ্যে সেই সত্যটাও আড়াল হইয়া যায়। গুম, অপহরণ, ক্রস ফায়ার, জেল জুলুম আর গুলিতে যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান সম্প্রদায় অনেক অনেক অনেক বেশী নির্যাতিত হইছে, তার যে অনেক বেশী রক্ত ঝরছে, জীবন গেছে, সেই সত্যটাও আড়াল হইয়া যায়।
ইণ্ডিয়ান এই যুক্তির পক্ষে তাঁরা যে তথ্য হাজির করে তা হচ্ছে,বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যা কমতেছে, তাঁরা দেশত্যাগ করতেছে। অথচ দেখেন, বাংলাদেশে খ্রিস্টান এবং বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সংখ্যা বাড়ছে। এমনকি শেষ সেনসাসে বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী মুসলমানদের চাইতে প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। ধর্মীয় নির্যাতনই যদি জনসংখ্যা কমার একমাত্র কারণ হতো তাহলে বৌদ্ধ এবং খ্রিষ্টান জনসংখ্যা বাড়ার কোন কারণ ছিলোনা। এর কারণ অন্য কোথাও।
কোলকাতার বর্ণ হিন্দুরা মুসলমানদের সঙ্গে থাকতে চায় নাই ১৯৪৭ এ। তাঁদের সাথে ক্ষমতা ভাগাভাগি করতে চায় নাই। তাই মুসলমানেরা না চাইলেও হিন্দুদের জেদের কারণে বাংলা ভাগ হইছে। হিন্দুরা মুসলমানের লগে এক দেশে নাগরিক হয়ে থাকবেনা তাই তাঁরা সেইসময় থেকে দেশত্যাগ করতেছে। এইটা সম্প্রদায়গত সচেতন সিদ্ধান্ত। কিন্তু এর দায় চাপাইতে চায় বাংলাদেশের মুসলমানদের উপরে। এইখানে বাঙালি মুসলমানের কোন দায় নাই। ভারতের হিন্দুত্ববাদ ভারত রাষ্ট্রকে হিন্দুদের পিতৃভূমি এবং পবিত্রভুমি বলে দাবী করে। তাই এই রাষ্ট্র অভারতীয় রাষ্ট্রে বসবাসরত সংখ্যালঘু হিন্দুদের মনে একটা বিকল্প নাগরিকত্বের সম্ভাবনা জাগুরুক রাখে। তাঁরা ভারত রাষ্ট্রকে অবচেতনে নিজের পলিটিক্যাল এজেন্ট হিসেবে ভাবতে থাকে। ভারত রাষ্ট্র হিন্দুত্ববাদ দিয়ে তাঁদের এক তীব্র ধর্মীয় জজবায় আকর্ষণ করতে থাকে। একইভাবে শ্রীলঙ্কান তামিলদের ভারতে মাইগ্রেশনের একটা ট্রেন্ড আছে। নেপাল থেকে হিন্দুদের তো ভারতে মাইগ্রেশন হয়না। কারণ তারাই তাঁদের রাষ্ট্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ।
“আমরা বাংলাদেশে মুসলমানের লগে মিলামিশা থাকুম” এই চিন্তা হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে যেইদিন থেকে শুরু হইবে সেইদিন বাংলাদেশে নতুন জামানার শুরু হইবে। হিন্দু নির্যাতনের ইণ্ডিয়ান রেকর্ড বাজাইয়া বাংলাদেশে আপনারা পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন আনতে পারবেন না। এইটা যত তাড়াতাড়ি লেফট স্যেকুলার আর চেতনাজীবিরা বুঝে ততই হিন্দুদের মঙ্গল।
এই সত্য কথাটা কই জন্য পিনাকী বাম স্যেকুলার চেতনাবাজ আর শিবসেনাদের কাছে হিন্দু বিদ্বেষী হইয়া যায়। আফসোস!!
2 thoughts on “হিন্দুরা কি বাংলাদেশে নিপীড়িত?”
গোড়ায় গলদ ছিল …
ধর্ম নিয়েই যদি দেশ ভাগ, তবে পাকিস্তান ( পূর্ব / পশ্চিম সহ ) যদি মুসলমানদের দেশ হয়ে উঠতে পারে তবে ভারতকে হিন্দুদের দেশ হিসেবেই সংবিধানে মান্যতা দেওয়া উচিত ছিল …
মুসলমানেদের জন্য রইল গাছেরটা আবার তলারটাও … আর হিন্দুদের জন্য? তলারটা তো নয়ই / এমনকি গাছেরটাও পুরোপুরি নয়
পিনাকী বাবু ঠিকই বুঝে যে, কাদেরকে তোষণ করলে এদেশে তার ব্যবসা-বাণিজ্য চলাফেরা নির্বিঘ্ন হবে এবং রাতারাতি অনেক টাকার মানুষ হওয়া যাবে।