সিপিবি কি একটি প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল?

এমন একটা শিরোনাম কেন দিতে হল সেটা বুঝতে পুরোটা কষ্ট করে পড়তে হবে।

আমার একজন সাবেক ফেইসবুক বন্ধু উনাকে আনফ্রেন্ড করাতে মন খারাপ করে স্ট্যেইটাস দিয়েছেন। উনি যদি মনে করে থাকেন উনাকে অপমানিতে করার জন্য আনফ্রেন্ড করেছি, তাহলে সেটা আমার উপরে অবিচার করা হবে। আমি কাউকেই অপমান করিনা, আমার শত্রু মিত্র, কাউকেই না। আমি কঠোর সমালোচনা হয়ত করি কিন্তু কোন অর্থেই মর্যাদা হানী করিনা। যিনি আমার মর্যাদাহানীকর স্ট্যেইটাসে লাইক দেন এবং মনে করেন আমার মর্যাদাহানী তাকে প্রীত করেছে, তখন তাঁর বন্ধু তালিকা থেকে উনার সন্মান রক্ষার্থে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেই।

তিনি আমার ছাত্র জীবনের সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ছিলেন এখন সিপিবির সঙ্গে আছেন। এই দুই সংগঠনকে আমি তাদের তরফ থেকে আক্রান্ত না হলে জ্ঞানত কখনোই আঘাত করবো না। এটা আবেগ থেকেই। কিন্তু সেই স্ট্যেইটাসে উনি অভিযোগ করেছেন যে, উনি জানতে পেরেছেন প্রগতিশীলদের আমি আনফ্রেন্ড করছি।

উনার বক্তব্যে একটা প্রশ্ন মনে এসেছে। সিপিবি কি একটা প্রগতিশীল দল? সিপিবি করা একজন কি প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মী?

দাঁড়ান দাঁড়ান, উত্তেজিত হবেন না। ইংরেজিতে প্রোগেসিভের বাংলা করে আমরা বলি প্রগতিশীল। বাংলাদেশের সকল বামপন্থি নিজেদের প্রগতিশীল বলে দাবী করে। আসলে প্রোগ্রেসিভ মানে কী? রাজনীতিতে প্রোগ্রেসিভ মানে যারা গ্রাজুয়ালি সৌশ্যাল রিফর্মের পক্ষে। খেয়াল করে দেখুন প্রগেসিভরা বিপ্লব করে সামাজিক পরিবর্তন চায়না। তাঁরা র‍্যাডিক্যাল নয়, বিপ্লবি নয়। রুজভেল্ট, ওবামা, ক্যামেরন সবাই নিজেকে প্রোগ্রেসিভ বলে দাবী করে। ব্রিইটেনের লেবার পার্টি নিজেদের সৌশ্যালিস্ট বলে পরিচয় দিতে লজ্জা পেত, তাই তাঁরাও একসময় নিজেদের  প্রোগ্রেসিভ বলে রিডিফাইন করে পরিচয় দেয়া শুরু করে। পৃথিবীর প্রথম প্রোগ্রেসিভ আন্দোলন হয় ইউরোপে হেগেলের অনুসারীদের মাধ্যমে। প্রগতিশীলতা সর্বতোভাবেই একটি বুর্জোয়া ধারণা। পাশ্চাত্যে প্রগতিশীল রাজনীতির চারটি স্তম্ভ আছে বলে বলা হয়, ফ্রিডম, অপারচুনিটি, রেস্পন্সিবিলিটি এবং কো অপারেশন। প্রগতিশীলতার এই আধুনিক ধারণা আসে অ্যামেরিকা থেকে। আমেরিক্যান ভ্যালু প্রজেক্ট অনেক খরচ টরচ করে, সেই প্রজেক্ট থেকে Progressive Thinking: A Synthesis of Progressive Values, Beliefs, and Positions নামে বই প্রকাশ করে, সেই বইয়ে পাশ্চাত্য প্রগতিশীলতার উপরোক্ত সংজ্ঞায়ন করেছে।

সিপিবি তাঁদের ঘোষিত লক্ষ্য বিচারে একটি বিপ্লবী দল। তাঁরা শ্রমিক শ্রেণীর একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায় এবং বাংলাদেশে তাঁরা জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লবকে আশু কর্তব্য হিসেবে ঘোষণা করেছে। সবগুলোই তো বিপ্লবী কর্তব্য; এখানে সামাজিক রিফর্মের স্থান কোথায়? তাহলে নিজেদের বিপ্লবী না বলে প্রগতিশীল বলে ঘোষণা করার কারন কী? এটা কি লেবার পার্টির মতো রিডেফিনেশন?

ঘটনাটা খোলাসা হয় তারপরে উনার একটা মন্তব্যে। উনি আমাকে লক্ষ্য করে লেখেন, “আমি ভাল করেই জানি আমার শত্রু কে – দেশদ্রোহী রাজাকার, জামাত -শিবির তথা ধর্মান্ধ, সাম্প্রদায়িক অপশক্তি আমার শত্রু । আমার যা কিছু কর্মকান্ড তা এদের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়।“

আমি এবারে বিহ্বল। পৃথিবীতে এমন কোন কম্যুনিস্ট নাই যে বা যারা শত্রু হিসেবে সাম্রাজ্যবাদ এবং তাঁদের দেশীয় দোসর লুটেরা বুর্জোয়াদের ঘোষণা করেনি। কম্যুনিস্টরা শ্রমিক শ্রেণীর বিপ্লবী দল হওয়ার কারনে শ্রমিক শ্রেণীর সাপেক্ষে তাঁর শত্রু মিত্র নির্ধারণ করে। এটাই ক্লাস আউট লুক। বড়ই দুঃখ হয় যখন সিপিবির শিক্ষায় শিক্ষিত একজন এইভাবে তাঁর শত্রু ঘোষণা করে।

কমরেড; আমি নই, আপনিই পথ হারাইয়াছেন। আপনি আপনার আদর্শ এবং আদর্শের শিক্ষা হয় আত্মস্থ করতে পারেননি অথবা পুরোপুরি ত্যাগ করেছেন। পথে আসুন, একজন কম্যুনিস্টের দৃষ্টিতে বিশ্ব দেখুন।

Share

Feeling social? comment with facebook here!

Subscribe to
Newsletter