শহীদ তিতুমীর কি রেইসিস্ট?

শহীদ তিতুমীরকে রেইসিস্ট ইতিহাসবিদরা হিন্দুবিদ্বেষী বলে প্রচার চালিয়েছে। অথচ তিতুমীর, হাজী শরিয়তুল্লাহ, দুদু মিয়া ছিলেন মজলুমের পক্ষে জালিমের বিরুদ্ধে অসামান্য বীর। বামপন্থীরা যাকে শ্রেণী-সংগ্রাম বলে, তারা প্রত্যেকেই ছিলেন সেই শ্রেণী-সংগ্রামী। রাজনীতির দিক থেকে তারা প্রত্যেকেই ছিলেন “রেড রিপাবলিকান” বা “কমিউনিস্ট”। কিন্তু ভারতীয় উপমহাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলন ইসলাম বিদ্বেষীদের খপ্পরে পড়ে যাওয়ায় এই মহান শ্রেণী-সংগ্রামীরা বামদের আগ্রহ সঞ্চার করতে পারেনি। তাদের একাট্টা ইসলাম বিরোধিতা আপামর মানুষকে কমিউনিস্ট বিরোধী করে তৈরি করেছে। তাই তাদের লড়াইকে কমিউনিস্ট লড়াই বলে প্রচার করতেও অথবা শ্রেণী-সংগ্রাম বলতে আজ যারা এই ওয়াহাবী, ফারায়েজি আন্দোলনের ঐতিহ্যকে ধারণ করেন তারাও  সংঙ্গত কারণেই নারাজ। আমাদের নির্মোহভাবে এই গৌরবের লড়াইগুলোকে আজকে মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। কারণ এই ঐতিহ্যের ওপরে দাঁড়িয়েই আমাদের ভবিষ্যৎ নির্মাণ করতে হবে।

তিতুমীর যেই বক্তৃতাগুলো দিয়েছিলেন, তার বেশিরভাগের বক্তব্য ছিল, হিন্দু কৃষকদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জমিদার আর নীলকরদের বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে।

তিতুমীরের লড়াইয়ের সময়, সরফরাজপুর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের হরিজন আর মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে বিবাদ দেখা দেয়। তিতুমীর বিবাদ মেটাতে সেখানে যান এবং একটা বক্তৃতা দেন। সেই বক্তৃতার চুম্বক অংশ আপনাদের সামনে তুলে ধরছি-

“ইসলাম শান্তির ধর্ম। যাহারা মুসলমান নহে, তাঁহাদের সহিত কেবল ধর্মে ব্যবধানের জন্য অহেতুক বিবাদ করা আল্লাহ এবং আল্লাহর রসুল পছন্দ করেন না, বরং আল্লাহর প্রিয় রসুল এই কথাই ঘোষণা করিয়াছেন, কোন প্রবল শক্তিসম্পন্ন অমুসলমান যদি দুর্বল অমুসলমানকে তাহার ন্যায়সংগত দাবী অগ্রাহ্য করিয়া তাহার প্রতি অন্যায় জুলুম ও অবিচার করে; মুসলমানেরা সেই দুর্বলকে সাহায্য করিতে বাধ্য।”

এবার দেখুন, তিতুমীর সম্বন্ধে বাংলার ব্রিটিশপন্থী ভদ্রলোকেদের মূল্যায়ন-

“হিন্দু হউক, মুসলমান হউক, খ্রীষ্টান হউক, শিখ হউক, পারসিক হউক, তিতুর ন্যায় কখনো কারোর দুর্বুদ্ধি হয়, ভ্রান্তি হয়, তিতুর দৃষ্টান্তে নিশ্চিতই তাহার চৈতন্য হইবে। তিতুর বড় দুর্বুদ্ধি। তাই তিতু বুঝিলনা ইংরেজ কত ক্ষমাশীল,- কত করুণাময়! দুর্বুদ্ধি তিতু ইংরেজদের সে করুণা, সে মমতা বুঝিল না… এই ভারতে ইংরেজের রাজত্বে ইংরেজদের করুণার মর্ম, ইংরেজের বাৎসল্যেরভাব, কে না বুঝে, ইংরেজের রাজত্বে সুখামৃতের নিত্যসুখস্বাদ কে না করে!”

-তিতুমীর, বঙ্গবাসী, বিহারীলাল দত্ত

 

তথ্যসুত্র: ওয়াহাবী থেকে খিলাফত: একটি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী অধ্যায়, ড শ্যামাপ্রসাদ বসু, নবজাতক প্রকাশন, কোলকাতা, ১৯৮২: পৃষ্ঠা ৪৬।

Share

4 thoughts on “শহীদ তিতুমীর কি রেইসিস্ট?

  1. একমাত্র ইসলাম শান্তির ধর্ম। ধর্মের পাশাপাশি কর্মকেও শান্তির মধ্যে রাখা চাই।

    তবে এটাই সত্য যে, মানুষ হওয়া জরুরী।

  2. ইসলাম একমাত্র শান্তির ধর্ম। কর্মকেও শান্তির মধ্যে রাখতে হবে।

    তবে এটা সত্য যে, মানুষ হওয়া জরুরী।

  3. মাঝে মাঝে ভাবি, একজন পিনাকি যে সত্যটা তুলে ধরছেন তা আমাদের মুসলিম সমাজ কেন পারেনি। এতো গৌরবজ্জোল ইতিহাস অথচ আমরা কিছুই জানিনা। জানতে দেয়নি। কোথায় ডঃ সলিমুল্লাহ, এতো জানেন, তারপরেও চুপ থাকেন কি করে। এইটা কি আদর্শগত কারনে যদি সত্যটা জানাজানি হয় তাইলে হয়ত বাংলাদেশি মুসলিম ইসলামিক সমাজ ,রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দলন শুরু করে দিতে পারে যা বামেরা কোনদিন হতে দিতে চায়না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Feeling social? comment with facebook here!

Subscribe to
Newsletter