রাজনৈতিক শক্তি হিসেবেই ইসলামের উত্থান

গতকাল খেয়াল করলাম আমার ফলোয়ার ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। আমি কখনো কল্পনাও করি নাই যে এই বিপুল সংখ্যক মানুষ তাঁর নিজের আগ্রহে আমার লেখা পড়বেন।

এই ফেইসবুকে এসে আমি অনেক কিছু শিখেছি। অনেক ভুলও করেছি। মানুষের ঘৃণা আর ভালোবাসা দুটোই পেয়েছি। বন্ধু পেয়েছি কিছু, শত্রুও হয়েছে অনেক। প্রতিপক্ষের আক্রমণে যুক্তি সাজাতে পাগলের মতো পড়েছি। শেষ বিচারে আমার প্রাপ্তির পাল্লাই ভারী হয়েছে।

কেউ কেউ আমাকে কোন ছকে ফেলতে না পেরে অস্বস্তিতে ভোগেন। আমি তাঁদের ভাবনাকে কিছুটা ধরতে পারি। আমি ধর্মবাদী নই, তাই আমি মনে করিনা যে আমি সত্য জানি। লালনের মত সত্যপথ বলতে আমার কোন কিছুতে আস্থা নাই, তবে সত্য কাজে আছে। সেই সত্য কাজ হচ্ছে প্রশ্ন তোলা; এমনকি নিজের চিন্তাকেও এই প্রশ্নের পরীক্ষায় ফেলা।

আমার চিন্তা মুলত মার্ক্সের চিন্তায় জারিত, কিন্তু আমি মার্ক্সবাদী নই। মার্ক্সের সীমাবদ্ধতা আমি বুঝি। আমি পুঁজিবাদের এই অসহ্য সময়কে অতিক্রম করে যেতে চাই। এবং আমি মনেই করি বাংলাদেশে যারা বামপন্থার সাথে যুক্ত আছেন এবং বামপন্থী বলে সমাজ যাদের চেনে তাঁদের এই পুঁজিবাদকে অতিক্রম করে যাবার হিম্মত নেই। তারা এই কাজ করতে পারবেনা।

মানুষের “মুক্তি” বলতে বুঝি প্রকৃতির উপর মানুষের আগ্রাসী প্রভুত্তকামি চরিত্র থেকে মুক্তি। “মুক্তি” মানে মানুষের আবিষ্কার যে সে প্রকৃতির অংশ; প্রভু নয়, হেফাজতকারি। আমার সকল লেখায় চিন্তায় মুক্তির এই ধারণা প্রছন্নভাবে আছে এবং থাকে। আমি মুক্তির যেই ধারণাকে গ্রহন করেছি সেই ধারণার সাথে ধর্মের এবং বিশেষ করে ইসলামের একটা দেয়া নেয়ার জায়গা আছে।

পৃথিবীর রাজনীতি আর ষাটের দশকের মত সরল নেই যে সবকিছুকেই মার্কিন সামাজ্যবাদের চক্রান্ত বা রুশ সামাজিক সামাজ্যবাদের চক্রান্ত বলে দায় সারবেন। সমাজতান্ত্রিক দুনিয়া বিনা যুদ্ধেই অপসৃত হয়েছে। রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে ইসলামের উত্থান ঘটেছে। এই ইসলামের নানা রং ও শেড থাকলেও মুলত তারা পুঁজিবাদের প্রতিস্পর্ধি হয়ে সাম্রাজ্যবাদকে, পশ্চিমা আধুনিকতাকে চ্যালেইঞ্জ করেছে। আপনি পছন্দ করেন আর না করেন ইসলামের প্রশ্নকে বাদ দিয়ে আর পৃথিবীর রাজনীতি অগ্রসর হবেনা। তারা কী বলতে চায় সেটা না শুনে তাঁদের মৌলবাদি, পশ্চাৎপদ এসব বলে আপনি এগিয়ে যেতে পারবেন না।

এই জটিল সময়ের ফয়সালা আপনি “ছোটদের রাজনীতি” “ছোটদের অর্থনিতি” আর “সাম্যবাদের ভুমিকা” পড়া জ্ঞান দিয়ে, আর আপনার পুরনো পলিটিক্যাল গ্রুমিং দিয়ে করতে পারবেন না।

খোলা মন নিয়ে, একটা ইনক্লুসিভ দেশ গড়ার যদি প্রত্যয় থাকে তাহলে আপনার আমার চিন্তাকে ধরতে সমস্যা হবার কথা নয়। আমি মনে করি মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রোক্লেমেশন অব ইন্ডিপেন্ডেন্সে ঘোষিত সাম্য, মানবসত্তার মর্যাদা আর ইনসাফের সমাজই ভবিষ্যতের বাংলাদেশের ভিত্তি হবে। এই তিন নীতিই হবে বাংলাদেশের ঐক্যের শীর্ষবিন্দু।

আমার লেখা যারা ঘৃণা বা ভালো লাগা থেকে পড়েন সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনারা পড়েন জন্যই এই ভার্চুয়াল আইডেন্টিটির মুল্য আছে। আপনাদের ভালোলাগার মর্যাদা যেন দিতে পারি সেটাই আমার আগামী দিনগুলোর চেষ্টা থাকবে।

লেখাটির ফেইসবুক ভার্সন পড়তে চাইলে এইখানে ক্লিক করুন

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Feeling social? comment with facebook here!

Subscribe to
Newsletter