কয়েকদিন আগে এক সরকার সমর্থক একটা ব্লগের লেখার লিঙ্ক আমার লেখার কমেন্ট বক্সে দেন। সেখানে তিনি দাবী করেন ফ্লোরিডার ক্রিস্টাল রিভার প্রজেক্টটি একটি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং ম্যানগ্রোভ বনের মাঝে। তাই সুন্দরবনের কয়েক কিলোমিটার দুরে একই ধরণের প্রকল্প থাকলে সমস্যা কী? লেখক অবশ্য এটা জুড়ে দিতে ভোলেননি যে এই বিদ্যুৎ প্রকল্পে সেই ম্যানগ্রোভ বনের কোন ক্ষতি হয়নি। গুগল থাকায় অনেক অপদার্থের বেশ সুবিধা হয়েছে, কিন্তু এরা এতই অলস যে গুগল সার্চটাও মন দিয়ে করে না। আমি আরো কিছু এই গুগল সার্চ করেই পেলাম। সেগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করছি। প্রথমে দেখুন ব্লগে উল্লেখিত সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে মানুষের স্বাস্থ্যহানী প্রত্যেক বছরে কেমন হয়?
অ্যামেরিকার যে কোন বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে স্বাস্থ্য ঝুঁকি কতটুকু সেটা এই সাইট থেকে দেখে নিতে পারবেন যে কেউ। ফ্লোরিডার টক্সিক বায়ু দূষণের ৬৮% হয় বিদ্যুৎ উতপাদনের জন্য আর এই বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য দূষণের শীর্ষে আছে ক্রিস্টাল রিভার প্রজেক্ট। ফ্লোরিডা কার্বন এমিশনে অ্যামেরিকায় দ্বিতীয় এবং টক্সিক বায়ু দূষণে অ্যামেরিকায় তৃতীয়।
সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং হচ্ছে ২০২০ সালে দূষণের কারণে এই প্রজেক্টের দুটো কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হবে বলে ক্রিস্টাল রিভার প্রজেক্টের মালিকপক্ষ প্রগ্রেস এনার্জি নিজেই ঘোষণা দিয়েছে। খবর দেখুন এই লিঙ্কে।
এবার আসুন সবচেয়ে গুরুত্তপুর্ণ প্রসঙ্গে। আসলেই কি ফ্লোরিডার সেখানে ম্যানগ্রোভ বন আছে? না নেই। ফ্লোরিডা একটা ম্যানগ্রোভ এলাকা, কিন্তু বন নয়। বন হতে হলে তার একটা নিজস্ব ইকো সিস্টেম থাকতে হয়। ফ্লোরিডার কথিত এলাকায় সেটা নেই। ঘন ম্যানগ্রোভ এলাকা আছে লাল চিহ্নিত স্থানে। এটা সেই লেখকের দেয়া উইকির রেফারেন্সেই আছে।
তাহলে এই ম্যানগ্রোভ এলাকা বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে কত দুরে? সেই লেখকের দেয়া লিঙ্কেই প্রকল্পের কো অর্ডিনেইট দেয়া আছে সেটা থেকে মেপে পাওয়া গেল। ম্যানগ্রোভ এলাকা থেকে প্রকল্পটি ৩৪৬.২৮ কিমি দুরে।
বড়ই আশ্চর্য!! প্রায় সাড়ে তিনশো কিলোমিটার দুরের একটা প্রকল্পকে “মধ্যে” বলে প্রচার চালানোর মানে কী? এমন একটা ডাহা মিথ্যা অপপ্রচার করেই বা লাভ কী? ডুবন্ত মানুষ নাকি খড় কুটো আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায়। আমি দুঃখিত, উনাদের খড় কুটোটাও এভাবে কেড়ে নিতে হল।