ভারতে যখন নেহেরু ডকট্রিনের জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের প্রাধান্য ছিলো তখন সেটার প্রভাব শুধু ভারতের জনমানসেই ছিলোনা, তাঁদের পররাষ্ট্রনীতিতেও এই নীতি ছাপ রাখতো। ভারত ইজরায়েলকে দেখতো অন্যের ভুখণ্ডে জবরদখলকারি হিসেবে। ভারতের মধ্যপ্রাচ্য নীতি ছিলো ইজরায়েল থেকে দূরে থাকা ও ফিলিস্তিনকে সমর্থনের। কারণ ফিলিস্তিনিদের ভিকটিম বলে মনে করতো ভারত। ইহুদী জনগোষ্ঠীর বিষয়ে হলোকাস্ট সহ ধর্মীয় ও জাতিগত নিপীড়নের বিষয়ে সমবেদনা থাকলেও মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, এই সমবেদনা আমাকে ন্যায়ের প্রশ্নে অন্ধ করে দেয়নি। তিনি ফিলিস্তিন ও ইজরায়েল প্রশ্নে বলেছিলেন,
“ফিলিস্তিন আরব জনগনের, ঠিক যে-অর্থে ইংল্যাণ্ড ইংরেজদের, অথবা ফ্রান্স ফরাসিদের। আরবদের উপর ইহুদি জনগোষ্ঠীকে চাপিয়ে দেয়া ভুল কাজ এবং অমানবিকও বটে।……নিঃসন্দেহে এটা মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধ হবে যদি আরবদের অপমানিত করে ফিলিস্তিনের খানিকটা বা পুরোটাই ইহুদিদের হাতে তাঁদের জাতীয় আবাস দাবী করে তুলে দেয়া হয়।”
গান্ধীর দেখানো এই ন্যায়ের প্রশ্নে ভারত ফিলিস্তিনিদের সাথে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে একাত্মতা প্রকাশ করতে দ্বিধা করতোনা। ফিলিস্তিন প্রশ্নে ভারতের এই পররাষ্ট্র নীতি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রশংসিত হতো।
ফিলিস্তিন ও ইজরায়েল প্রশ্নে ভারতের পররাষ্ট্র নীতি বদলাতে শুরু করে কংগ্রেসের আমলেই আর সেটা পুর্নতা পায় মোদির হাতে। ভারতের বর্তমান হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির উত্থানের জন্য বিজেপিকে একক দায় দিলেও ভারতের এই হিন্দুত্ববাদমুখী অভিযাত্রা শুরু হয়েছিলো কংগ্রেসের আমলেই। বাবরী মসজিদ নিয়ে বিতর্কের সুত্রপাত এবং কোন ধরণের ইন্টারভেনশন না করে সেটাকে বাড়তে দেয়া এসব কিছুই ঘটেছে কংগ্রেস আমলে। ভারত ধীরে ধীরে তার আগের অবস্থান থেকে সরতে থাকে। ইজরায়েলের সাথে পুর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় ১৯৯২ সালে নরসীমা রাওয়ের আমলে। ২০০৪ সালে বাজপেয়ির আমলেই প্রথম ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী কসাই এরিয়েল শ্যারন ভারত সফর করে। ঠিক এর আগে যশোবন্ত সিং ইজরায়েল ভিজিট করেন। তিনি একটা খুব ইন্টারেস্টিং কথা বলেছিলেন সেই সময়ে। তিনি বলেছিলেন,
“ভারতের পররাষ্ট্র নীতি মুসলমানদের ভোটের কাছে জিম্মি ছিলো এতোদিন। এখন ভারত সেটা শোধরাবে।”
তার মানে ভারত যে এতোদিন ফিলিস্তিনিদের সমর্থন দিয়েছে সেটা তার জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের দায় থেকে নয় বা গান্ধী কথিত ন্যায়ের বোধ থেকে নয়, বরং তা নিছক ভোটের হিসাবে মুসলমানদের খুশী করার জন্য। মুসলমানদের ভোট যেহেতু আর বিজেপির দরকার নাই তাই ফিলিস্তিন নিয়ে তাঁদের আগের পররাষ্ট্র নীতি এখন নিরর্থক।
ইজরায়েলের মোসাদের সাথে ভারতের “র” এর ঘনিষ্ঠ কাজের সম্পর্ক সেই সময়েই গড়ে ওঠে। ভারত যদি নিজেকে ইসরায়েলের মতো নিজেকে হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে চায় তাহলে তাকে দেশের ভিতরে আর বাইরে মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়তে হবে, লড়তে হবে কাশ্মীরে, মোকাবেলা করতে হবে বাংলাদেশ আর পাকিস্তানকে। ঠিক এখানেই ভারত আর ইজরায়েলের সমপ্রেমের মুল চাবিকাঠি। এই প্রেম তৈরি হয়েছে আর টিকে আছে মুসলমান কোপানির বদ ইচ্ছাকে কেন্দ্র করে। মধ্যপ্রাচ্যে এবং ফিলিস্তিনে মুসলমানদের কোপানির ইজরায়েলি অভিজ্ঞতা চায় ভারত। আর এই কোপানির কাজে ভারত চায় ইজরায়েলের সহায়তা। নেতানিয়াহু যেটাকে বলেছেন, তাঁরা এবং ভারত ইতিহাস তৈরি করবে। এই ইতিহাস মানে মধ্যপ্রাচ্যের সাথে সাথে ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলমানদের কোপানির ইতিহাস তৈরি করবে। নেতানিয়াহু ভারত আর ইজরায়েলের অভিন্ন লক্ষ্যকে লুকিয়ে রাখেনি। সে বলেছে, “আমরা সন্ত্রাসের (টেররের) শক্তির সাথে যুদ্ধ করছি, যা আমাদের জগতকে আমাদের সভ্যতাকে আমাদের শান্তি আর স্থিতিকে পরাজিত করতে চায়। আমরা দুই রাষ্ট্র এই সন্ত্রাস মোকাবেলার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে চাই।”
দুই মুরুব্বী সমপ্রেমের সহযোগীতা করতে থাকুন; আমরা জানি, দুই সমপ্রেমীর মিলনে কোন নতুন সম্ভাবনার জন্ম হয়না, প্রকৃতির নিয়ম তাই বলে।
লেখাটির ফেইসবুক ভার্সন পড়তে চাইলে এইখানে ক্লিক করুন
One thought on “মোদী আর নেতানিয়াহুর সমপ্রেম আমাদের কী বার্তা দিচ্ছে?”
Tui ekta Hindu name newa fake account.. Katabaccha Sala, tor mathay samanyo brain o nei.. Dinrat Nabi ar Ayeshar sex dekhle ei hobe.