মৃত মানুষকে শাস্তি দেয়া যায়না। দেয়াটা সম্ভবও নয়। সে জাগতিক সব কিছুর উর্ধে উঠে যায়। আমাদের সংস্কৃতিতে এমনকি আচরিত ধর্মে মৃতের বিরুদ্ধে সৎকারের আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে দিয়ে সকল অভিযোগ প্রত্যাহার করে আমরা তাঁকে সসন্মানে সৎকার বা সমাহিত করি। ইসলামে জীবিতদের পক্ষ থেকে মৃতদের ক্ষমা করার জন্য জানাজায় দোয়া করার সময় বলা হয়, “হে আল্লাহ্ আমাদের জীবিত ও মৃত উপস্থিত ও অনুপস্থিত বালকও বৃদ্ধ পুরুষ ও স্ত্রীলোকদিগকে ক্ষমা কর”। হিন্দু ধর্মেও যাকে সমাজ মৃতের সৎকারের জন্য নির্বাচন করে তাঁকে বলতে হয়, মৃতের সকল পাপ সত্ত্বেও তার সর্বশরীর দহন করে তাঁকে দিব্যলোকে স্থান দাও।
মৃত্যুর পরে তার কাজের পর্যালোচনা করতে পারি মুল্যায়ন করতে পারি; সেটা করাটা জরুরীও। কিন্তু তাঁকে শাস্তি দিতে পারিনা। কারণ সেই শাস্তি তাঁকে স্পর্শ করেনা। মৃতদেহকে অসন্মান করতে পারিনা। কারণ এটা আমাদের ঐতিহ্যের বিরোধী।
মৃতকে শাস্তি দেয়াটা একটা ইউরোপীয় ধারণা। দণ্ডিতের যন্ত্রণা প্রাকশ্যে দৃশ্যমান করাটা ইউরোপীয় ঐতিহ্য। গাদ্দাফির মৃতদেহকে পচতে দিয়ে প্রদর্শন করার পক্ষে ক্রিস্টোফার হিচেন্স লিখেছিলেন “satisfying to see the cadaver of the monster and be sure that he can’t come back”। হিটলারের ধারণা ছিল পরাজয়ের পর তার মৃতদেহকে অসন্মানিত করে প্রদর্শন করা হবে; সেই ভয়ে হিটলার তার মরদেহ পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিল। হিটলার খুব ভালো করে জানতো তার ইউরোপের ঐতিহ্য কী।
ইউরোপের এই ভাবনার পিছনে এনলাইটেনমেন্টের অবদান আছে। এনলাইটেনমেন্ট তো সব ফেনেমেননকে ফিজিক্যাল মনে করে তাই মৃত মানুষের দেহাবশেষ নিস্প্রান হলেও সেটাকে শাস্তি দিলেও তাদের চলে। আমাদের চলেনা। আমাদের কাছে স্পিরিচুয়াল জগতটাও একইসাথে গুরুত্তপুর্ন। মানুষের সম্পর্ক, ভাব, ভালবাসা, কল্পনা এগুলোর মুল্য আমাদের কাছে অপরিসীম।
জিয়াউর রহমান তাঁর সকল সীমাবদ্ধতা নিয়েও আমাদের ইতিহাসের গুরুত্তপুর্ন রাজনৈতিক ও সামরিক চরিত্র। তাঁকে বাদ দিয়ে আমাদের স্বাধীনতার, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লেখা সম্ভব নয়। সেই জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পদক কেড়ে নেয়াটা এক ধরণের জিঘাংসা। মৃতের সাথে এই বিবাদ নিন্দাযোগ্য। এটা আমাদের আচরিত ধর্ম, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথে সাংঘর্ষিক।