“ব্রাহ্মণেরা সংস্কৃত পড়িতেন। প্রত্যেক গ্রামে এজন্য টোল ও ফার্সী শেখার জন্য মাদ্রাসা বা মোক্তাব ছিল। অনেক সময় এসকল মাদ্রাসা গ্রামের মস্জিদের সঙ্গে যুক্ত থাকিত। মসজিদের ইমাম বা অন্য কোন মৌলবী শিক্ষকতা করিতেন। উচ্চ শ্রেণীর হিন্দু ও মুসলমান বালকেরা এসকল মাদ্রাসায় একসঙ্গে শিক্ষালাভ করিত। এখানে হিন্দু মুসলমানের মধ্যে ছোঁয়াছুঁয়ির বিচার ছিল না। হিন্দু বালকেরাও মুসলমান মৌলবীকে শিক্ষাগুরুর প্রাপ্য মর্যাদা ও ভক্তি অসঙ্কোচে অর্পণ করিত। হিন্দুরা যেমন নিজেদের বিদ্যারাম্ভে বা হাতে-খড়ির সময়ে সরস্বতীর বন্দনা করিয়া লিখিতে পড়িতে আরম্ভ করিত, সেইরূপ মাদ্রাসায় বা মোক্তাবে যাইয়া ফার্সী পড়িতে আরম্ভ করিবার সময় এবং প্রতিদিন পাঠের প্রারম্ভে কোরাণের আদি কথার লা এলাহি এল্ আল্লা, মহম্মদ রসুল আল্লা আবৃতি করিত। ইহার ফলে তখনকার মধ্য শ্রেণীর হিন্দু ভদ্রলোকদিগের অন্তরে মুসলমানদিগের ধর্মের প্রতি একটা সহজ শ্রদ্ধা জন্মিত।”
সূত্র:সত্তর বছর; বিপিন চন্দ্র পাল, পৃষ্ঠা ৩৭
বিপিন পালকে যারা চিনতে পারেননি তাদের বলছি, তিনি ভারতীয় কংগ্রেসের প্রথম প্রজন্মের নেতা। যে তিনজন নেতা কংগ্রেসের ভিত তৈরি করেছিলেন তাঁরা ছিলেন লালা লাজপত, বাল গঙ্গাধর তিলক আর বিপিন পাল। এই তিন ট্রায়োকে একসাথে বলা হতো লাল-বাল-পাল। বিপিন পাল ছিলেন আমাদের হবিগঞ্জের ছেলে।
বিপিন পাল ছিলেন নিষ্ঠাবান হিন্দু পরিবারের সন্তান। মাদ্রাসায় পড়তে তাঁর কোন সমস্যা হয়নি, এমনকি লা ইলাহা ইল্লালাহু মহম্মদুর রসুলুল্লাহ বলে প্রতিদিনের পাঠ শুরু করতেও সমস্যা হয়নি। তিনি ভিন্ন ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা উৎপাদনের উপায় হিসেবে তাঁর মাদ্রাসা শিক্ষার কথাটি উল্লেখ করেছিলেন। আজকের বাস্তবতায় বিপিন পালের কথা আমাদের কাছে গালগল্প মনে হবে। তাহলে আমরা এগিয়েছি নাকি পিছিয়েছি? স্যেকুলাররা যে মাঝে মাঝে ১৪০০ বছর পিছিয়ে যাওয়ার ভয় দেখায়, ওরা নিজেরাই হাজার বছর পিছনের ঘৃণার আর মূর্খতার জগতে বাস করছে।
One thought on “মাদ্রাসায় হিন্দু ছাত্র পড়তে পারে কি?”
আমার বাবা ক্যাথিড্রাল মিশন হাইস্কুল , কলকাতার ধর্ম শিক্ষক ছিলেন। তার আরবি, উর্দু আর ইংরেজিতে গ্রাজুয়েট , ডিপ্লোমা ছিল । তার ক্লাসে উর্দু ভাষা শিখতে আসত যারা তাদের বড় অংশ ছিল হিন্দু বনেদী পরিবারের সন্তান । ১৯৩৪- ১৯৪৭ তিনি অসংখ্য ছাত্র তৈরি করেছেন অবিভক্ত বাংলায় ।