মাদ্রাসায় কেন জাতীয় সঙ্গীত গাইতে হবে?

বাংলাদেশের স্কুলে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয় বাংলাদেশ ন্যাশন্যাল এন্থেইম রুলস ১৯৭৮ অনুসারে এই আইন ২০০৫ সালে সংশোধিত হয়। এই আইনের ৫ এর ২ ধারায় স্পস্ট করে বলা আছে এইটা স্কুলে দিনের কার্যক্রম শুরুর আগে গাইতে হবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নয়। খেয়াল করেন, আইনে স্পস্টভাবে “স্কুল” উল্লেখ করা আছে। এই আইন অনুসারেই মাদ্রাসায় জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া বাধ্যতামুলক নয়। কারণ আইনে মাদ্রাসার উল্লেখ নাই। মাদ্রাসা মানে স্কুল নয়। এর উপর আবার মাদ্রাসা বলতে সরকারি পরিভাষায় আলিয়া মাদ্রাসা বুঝানো হয়। আর কওমি – এটা কওম বা কমিউনিটি উদ্যোগের অ-সরকারি অর্থে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান। এছাড়া কওমি প্রতিষ্ঠানগুলো আসলে কমিউনিটির থিওলজিক্যাল (ধর্মতত্ব) চর্চার প্রতিষ্ঠান। কওমি ছাত্রের জীবন ও শিক্ষাপদ্ধতি স্কুলের মতো নয়। তাঁরা রাত দশটার দিকে ঘুমিয়ে পরে, ফজরের দেড় দুই ঘণ্টা আগে ঘুম থেকে উঠে তাহাজ্জুদের প্রার্থনা করে প্রায় ঘন্টা দেড়েক কিতাব পড়ে, এরপরে ফজরের নামাজ পড়ে কুরআন তিলওয়াত করে। এই হচ্ছে তাঁদের দিনের শুরু। ফলে প্রচলিত স্কুল বলতে যে ধারণা কওমি মাদ্রাসা তা থেকে অনেক দূরে। আর একভাবে বলা বলা যায় প্রতিষ্ঠান মাত্রই সেখানে জাতীয় সঙ্গিত গাইতে হবে – আইনটা তেমন অর্থ বহন করে না। ঠিক যেমন কোন প্রাইভেট কোম্পানি সকালে কাজের শুরুতে জাতিয় সঙ্গিত গায় কিনা এটা কোন প্রশ্ন হল না, হল কুতর্ক।

যা হোক, আইনের সেই ধারায় লেখা আছে In all schools, the day’s work shall begin with the singing of the National Anthem, এর অর্থ, “সকল স্কুলের দিনের কার্যক্রম শুরু হবে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার মাধ্যমে”। এটা প্রত্যেকদিন গাইতে হবে, ভালো করে খেয়াল করে দেখুন।

কিছুদিন আগেই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই)-এর মহাপরিচালক ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল ৯ ধরনের নির্দেশনামূলক বার্তা পাঠিয়েছেন প্রাথমিক স্কুলগুলোতে সেটায় উল্লেখ আছে, জাতীয় সঙ্গীত গাইতে হবে। তার মানে কি যে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর যে স্কুলগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে তারা জাতীয় সঙ্গীত গায়না? না ঠিক তা নয়। তবে আশ্চর্য হলেও সত্য ২০১৬ সালে এডুকেশন ওয়াচের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে বাংলাদেশের ২৩% প্রাথমিক স্কুলে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয়না। হয়ত সেজন্য তিনি নির্দেশ জারি করেছেন।

ওদিকে, ইংরেজী মিডিয়াম স্কুলে গাওয়া হয় জাতীয় সঙ্গীত প্রত্যেকদিন? না প্রত্যেকদিন গাওয়া হয়না; দুই দিন গাওয়া হয়। এইটা বেআইনি এবং সরাসরি আইনের বরখেলাপ।

আমাদের সময়ে ক্যাডেট কলেজ গুলোতে একদিন জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হতো, যেদিন প্রিন্সিপ্যালস এসেম্বলি হতো। এখন কী হয় সেটা এখনকার গার্জেনরা বলতে পারবেন। খেয়াল করে দেখুন এখানেও আইন অনুসারে প্রত্যেক দিন গাওয়া হচ্ছেনা। আইনের বরখেলাপ হচ্ছে। অন্তত আমরা যখন স্কুলের ছাত্র তখন হয়েছে এইটা নিশ্চিত। আইনটা হয়েছে আমরা যখন স্কুলের ছাত্র তখন।

বাংলাদেশের স্যেকুলারেরা মাদ্রাসায় কেন জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয়না, এইটা নিয়ে শোরগোল করছেন। আগে নিজের যা করা আইনগত বাধ্যতা আছে সেইটা পালন করেন। আর প্রমাণ করেন মাদ্রাসায় আইন অনুসারে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া বাধ্যতামুলক।

তবে একটা গুরুত্বপুর্ণ বিষয় হল, জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া মানে হল রাষ্ট্রকে সম্মান দেখানো। কিন্তু অনেক জাতিবাদী এর অর্থ এমন করছেন যে তাহলে যে গায় না সে অসম্মান করছে। এখানে কথাটা এমন হল যেন বলা হচ্ছে যা সাদা নয় তা নিশ্চয় কালো! এদের নিয়ে কুতর্ক অর্থহীন। সমাজের অনেক প্রতিষ্ঠানই জাতীয় সঙ্গীত গায় না। এর মানে এই নয় যে এগুলো রাষ্ট্রকে অসম্মান করার উদ্যেশ্যে করা হয়। পশ্চিমা পৃথিবীর অনেক দেশেই স্কুলে জাতিয় সঙ্গীত গাওয়া হয়না, তার মানে এইনা যে তাঁদের দেশপ্রেম শিক্ষা সম্পুর্ণ হচ্ছেনা।

আর মনে রাখা ভাল যে সবকিছুকে ইউনিফর্ম – মানে রাষ্ট্রের ভাবাদর্শের বাইরে কোন কিছুই চর্চা করতে দেয়া হবে না – এই চিন্তাটাই হিটলারি। জাতীবাদের ভিতরে ওর আড়ালে ফ্যাসিজমের আবির্ভাব সেখান থেকেই হয়।

কেউ জাতীয় সঙ্গীত আইন ১৯৭৮ জানতে চাইলে এই লিংক থেকে ডাউনলোড করে নিয়ে পড়তে পারবেন।

Share

Feeling social? comment with facebook here!

Subscribe to
Newsletter