মাদ্রাসায় “আদবের সংস্কৃতির” শিক্ষা দেয়া হয় জঙ্গিবাদ নয়।

বাংলাদেশের ইতিহাস বলে ছাত্রদের সন্মিলিত ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ অধিকাংশ সময়েই হিংসাত্মক হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনাও একই ধরণের ছাত্র বিক্ষোভ। তফাৎ শুধু এই ছাত্রদের মাথায় টুপি ছিল এবং তাঁরা পায়জামা পাঞ্জাবী পরা ছিল। এর জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সহিংসতার ভিন্ন বয়ান দাড় করানোর চেষ্টা চলছে।

সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধের মোড়ল এবং তাঁদের স্থানীয় বরকন্দাজরা যেভাবে মুসলিম পরিচয়কেই সন্ত্রাসী তকমা এঁটে দেয়ার প্রকল্প নিয়েছে, অবচেতনে সেই প্রকল্পের সহযোগী হয়ে উঠেছে এদেশের বামপন্থীরাও। এর চাইতে বড় দুঃখ আর নাই। এর মধ্যে যদি তাদের সামনে টুপি পরা ছাত্রদের সহিংসতার ছবি থাকে তাহলে তো তাদের জন্য সোনায় সোহাগা।

ওস্তাদ আলাউদ্দিনের স্মৃতিচিহ্ন বিজড়িত সঙ্গীত ভবন আক্রান্ত হওয়াকে যদি বর্বরতা বলেন তাহলে স্বীকার করুন, নকশাল আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথ, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভাস্কর্য ভেঙে আপনার কমরেডরাও বর্বরতা করেছে। রুশ বিপ্লবের সময় বলশেভিকরা অসংখ্য ঐতিহাসিক আর্টিফেক্ট ধ্বংস করেছিল, সেটা জানেন?

আমি কয়েকটা পত্রিকা পড়ে ঘটনার যে বয়ান পেলাম তার একটাও বিশ্বাস করতে পারছিনা। মাদ্রাসা সম্পর্কে যারা সামান্য ধারণাও রাখেন তাঁরা নিশ্চয় বুঝবেন; যেই ঘটনায় মাদ্রাসা ছাত্ররা সহিংস হয়ে উঠেছে বলে দাবী করা হচ্ছে, সেই ঘটনায় মাদ্রাসা ছাত্রদের এভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানোর কথা নয়। তাঁরা যেই ধরণের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের ভিতরে থাকে তার ফলে কাউকে দল বেধে মাস্তানি করে পেশী দেখিয়ে দেয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। মাদ্রাসায় “আদব” শিক্ষা দেয়া হয়, সেই আদবের সংস্কৃতির সাথে যারা পরিচিত নন, তাঁরা মাদ্রাসার কালচার বুঝতে পারবেন না।

একটি পত্রিকায় দেখলাম ওই এলাকায় কোন এক মাদ্রাসায় কিছুদিন আগে তালা মেরে দেয়া হয়েছিল। রাতে মাদ্রাসার ছাত্রাবাসে ঢুকে পুলিশ এবং সরকারি দলের কর্মীরা আক্রমণ করেছে, ছাত্র নিহতের ঘটনা সেই সময়ের।

আমি বড় অবাক হই যখন স্যেকুলাররা মাদ্রাসা ছাত্রের প্রাণকে জীবন বলেই মনে করেনা। সেই মৃত্যুতে প্রতিবাদ জানানো দূরে থাক তাঁরা বেদনাও অনুভব করেনা। স্যেকুলার নামধারীদের এই মনোভাব ক্ষমার অযোগ্য।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Feeling social? comment with facebook here!

Subscribe to
Newsletter