গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ১৮৪২.৩০ একর ভূমি ‘রংপুর (মহিমাগঞ্জ) সুগার মিলের’ জন্য অধিগ্রহণের নামে ১৯৫৬ সালে ‘পাকিস্তান ইন্ডাষ্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন’ এর জন্য তৎকালীন সরকার ১৫টি সাঁওতাল ও পাহাড়িয়া আদিবাসী গ্রাম ও ৫টি বাঙালি গ্রাম উচ্ছেদ করে।
এই অধিগ্রহণকৃত জমি ‘পাকিস্তান ইন্ডাষ্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন’ পূর্ব পাকিস্তান’ সরকারের কাছে থেকে একটি চুক্তিপত্রের মাধ্যমে মোট ৮ লাখ সাত হাজার ৩১৮ আনা ১০.৬ পয়সা দিয়ে ১৯৬২ সালের ৭ জুলাই লীজ নেয়। উক্ত চুক্তিপত্রে ৫ নম্বর পয়েন্টে উল্লেখ করা হয়,
- The provincial Government will examine the quotation of the requisition of the land for the aforesaid purchase and proceed with the acquisition thereof if there is no objection but an result of the examination if it is decided that the land shall not be acquired for the aforesaid purpose, the said corporation shall surrender the land to the provincial Government for its release and restoration under section B of the aforesaid Act, and the Corporation shall bear all costs and compensation in connection with the release and restoration of the land.
অর্থাৎ, আখ ছাড়া অন্য কিছু উৎপাদন হলে চুক্তির শর্ত লঙ্ঘিত হবে এবং সরকার এটা ফেরত নিয়ে এই জমি রিলিজ এবং রেস্টোরেশন করবে। অর্থাৎ আগের মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেবে।
মুল দলিলটা এখানে আপলৌড করে দিয়েছি। পুরোটাই ডাউনলৌড করতে এই লিংকে ক্লিক করুন।
৩১ মার্চ ২০০৪ সালে কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে নানা সময় একবার চালু হয়, আবার বন্ধ হয় এভাবেই চলতে থাকে। বন্ধ হয়ে যাবার পরে, চিনিকল কর্তৃপক্ষ নানাভাবে অধিগ্রহণকৃত জমি বহিরাগত প্রভাবশালীদের কাছে ইজারা দিতে শুরু করে। অধিগ্রহণের চুক্তি লংঘন করে কেবলমাত্র আখচাষের জন্য বরাদ্দকৃত জমিতে ধান, গম, সরিষা ও আলু, তামাক ও হাইব্রিড ভূট্টা চাষ শুরু হয়। আদিবাসী ও বাঙালিরা পুরো ঘটনাটি প্রশাসনের নজরে আনেন। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৫ সনের ৩০ মার্চ গাইবান্ধা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম এলাকা সরেজমিন তদন্ত করেন। তদন্তকালে তারা উল্লিখিত জমিতে ধান, তামাক ও মিষ্টিকুমড়ার আবাদ দেখতে পান। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এই বিষয়টি তার রিপোর্টে অন্তর্ভুক্ত করেন। এটা লীজ চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিসের একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, ১৮৪২.৩০ একর জমির ভেতর আনুমানিক ১৫০২ একর জমি মিল কর্তৃপক্ষ শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত লিজ দিয়ে আসছেন এবং অবশিষ্ট ৩৪০ একর জমির মধ্যে স্টাফ কোয়ার্টার, রাস্তাঘাট, পুকুর আছে। ১৫০২ একর জমি ২০১৩-২০১৪ অর্থ বছরে ২৯ মাসের জন্য লিজ দেয়া জমিতে ধান, তামাক, গম ও পাট ও বিভিন্ন শাকসব্জি চাষ হচ্ছে। তবে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিস ২০১৫ সনের ২৮ জুন তারিখের একটি চিঠি থেকে জানা যায়, ৫টি মৌজার ৯২ থেকে ৯৭ একর জমিতে ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরে আখ চাষাবাদ হয়েছে।
অথচ গাইবান্ধা জেলা প্রশাসন ১০ মে ২০১৬ তারিখে উক্ত ভূমিতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার প্রস্তাব দেন সরকার বরাবর। এবং সেখানে উল্লেখ করেন ১৮৩২ একর জমি অব্যবহৃত এবং পরিত্যাক্ত অবস্থায় আছে।
তাহলে এই জমির বৈধ অধিকার কি আর মিল কর্তৃপক্ষের আছে? এই জমি পুর্বতন মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেয়া সরকারেরই দায়িত্ত্ব। বাঙালি সাঁওতালদের নয় বরং মিল কর্তৃপক্ষকে জমি থেকে উচ্ছেদ করে জমির আসল মালিকের কাছে হস্তান্তর না করা পর্যন্ত জমি থেকে উচ্ছেদকৃত সাঁওতাল বাঙালিদের ন্যায় সঙ্গত লড়াইয়ের পাশে থাকুন।
কৃতজ্ঞতাঃ
পাভেল পার্থ, হাসনাত কাইউম, মনোয়ার মোস্তফা, জোতির্ময় বড়ুয়া।